আজও গড়ে উঠেনি ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার

চার মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে ঝালকাঠীর রাজাপুর থেকে স্বরূপকাঠী যাচ্ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জয়ন্তী বিশ্বাস। পথের মধ্যে বাসে হঠাৎ করে বাচ্চা কান্নাকাটি শুরু।

পাশে মিসেস বিশ্বাসের মা ছিলেন। তারা দুজন মিলে খেলনা দেখিয়ে শিশুটিকে থামানোর চেষ্টা করছিলেন। লাভ হচ্ছিল না কোনো।

‘কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না’, বিবিসির ফেসবুক পাতায় লিখেছেন মিসেস বিশ্বাস।

“কেউ কেউ বলছিলেন, কান্না থামান। কেউ বলছিলেন, এত ছোট বেবি নিয়ে বের হওয়া ঠিক হয়নি”।

“বাচ্চা বাসের মধ্যে কান্না করলে কিছু লোক একটু অন্য চোখে দেখবেই”।

এমন একটি পাবলিক প্লেসে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে গিয়ে এক ধরনের দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলেন তিনি।

তিনি লিখছেন, “আমি তো বাসের মধ্যে লজ্জায় পড়েছিলাম।”

সম্প্রতি নয় মাস বয়সী এক শিশু ও তার মা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত অফিস বা কর্মস্থল এবং জনসমাগমস্থলে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো নির্ধারিত জায়গা স্থাপনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করেন।

পরে গত রোববার হাইকোর্ট এ ব্যাপারে একটি রুল জারি করে জানায়, পাবলিক প্লেস ও কর্মস্থলে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার থাকতে হবে।

বছর দুয়েক আগে অস্ট্রেলিয়ায় এক পার্লামেন্ট সদস্য পার্লামেন্ট অধিবেশন চলাকালেই প্রকাশ্যে তার শিশুকে বুকের দুধ খাইয়ে অনেক বাহবা কুড়িয়েছিলেন।

কিন্তু বাংলাদেশের মতো সমাজে, প্রকাশ্যে শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর বিষয়টি খুব একটা ভাল চোখে দেখা হয় না।

ফলে যেকোন কারণে ছোট শিশুকে নিয়ে বাইরে বের হওয়া মায়েদের জন্য শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর বিষয়টি দারুণ এক ঝক্কির ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় কখনো কখনো।

ফলে পৃথিবীর অনেক দেশের মতোই পাবলিক প্লেসে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন হতে পারে এই সমস্যার এক মোক্ষম সমাধান।

জয়ন্তী বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত তার শিশুর কান্না থামাতে কী করেছিলেন?

তিনি গায়ে চাদর পেচিয়ে শিশুকে আর নিজেকে ঢেকে নেন ‘যাতে লোকজন বুঝতে না পারে’, তারপর জানালার পাশে বসে শিশুকে দুধ খাইয়ে শান্ত করেন।

শিশুটির বয়স এখন এক বছর। মিসেস বিশ্বাস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষয়িত্রী।

বিদ্যালয়ে পর্যন্ত সেরকম সুবিধা নেই। ফলে মিসেস বিশ্বাস যেদিন সন্তানকে কর্মক্ষেত্রে নিয়ে যেতে বাধ্য হন, সেদিন তাকে বুকের দুধ পান করাতে পারেন না তিনি।

এ নিয়ে অনেক মা কিংবা যারা ভবিষ্যতে মা হওয়ার আশা করেন তাদের অনেকেই এই সমস্যাটি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

যেমন রোকসানা পারভীনের বক্তব্য, “এই দুঃখের কোন শেষ নাই। এই যন্ত্রণার কোন শেষ নাই।”

এমনকি কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের সুবিধার অভাবে একসময় তাকেও চাকরি ছেড়ে দিতে হতে পারে বলে তার আশঙ্কা।

মাসুমা বাবলি নামে একজন বলছেন, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সুযোগের পাশাপাশি কর্মস্থলে শিশুকে রাখার পরিবেশ নিশ্চিত করারও দাবি জানাচ্ছেন।

তাহমিনা আমব্রীন নামে একজন বলছিলেন, আমাদের আসে পাশে যাদের বসবাস, সবাই মানুষ না। অগনিত সংখ্যক মানুষরূপি পশুও আছে।

নাসরিন সুমি লিখছেন, “শুধু ব্রেষ্ট ফিডিং কর্নার করলেই হবে না, যথাযথ সুবিধা থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ পরবর্তীতে সব সময় নিশ্চিত করতে হবে।”

এসএইচ-০৭/৩১/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বিবিসি)