ই-পাসপোর্ট বেশি নিরাপদ

দেশে বুধবার থেকে চালু হলো ই-পাসপোর্ট বা ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট। সকালে এই সেবার উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ফলে অন্যদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বন্দরের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য আরো অনেক সহজ হবে বলে অনুমান করা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা অন্য যেকোন পাসপোর্টের চেয়ে ই-পাসপোর্ট বেশি নিরাপদ।

এর আগে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, ”এটি অত্যন্ত নিরাপত্তা সংবলিত একটি ব্যবস্থা। যে কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এখন ই-পাসপোর্ট ব্যবহার শুরু করেছে। আমরাও সেই তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছি।”

পাসপোর্টের সম্মান বাড়বে কী?

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক নাগরিকত্ব ও পরিকল্পনা বিষয়ক সংস্থা হেনলি অ্যান্ড পাসপোর্ট পার্টনার্সের করা ২০১৯ সালের বৈশ্বিক পাসপোর্টের র‍্যাঙ্কিংয়ের সবশেষ তালিকায় ১০৪টি দেশের অবস্থানের মধ্যে বাংলাদেশ ৯৭তম স্থানে রয়েছে।

কতটি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করা যাবে- তার উপর ভিত্তি করে এই র‍্যাংকিং করা হয়।

মূল্যায়ন বাড়ার বিষয়ে সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেন, এই বিষয়টিকে দুই দিক থেকে দেখা যেতে পারে।

এর মধ্যে একটি হচ্ছে, এই পাসপোর্ট ব্যবহারের ফলে দেশের নাগরিকরা কতটা সুবিধা পাচ্ছে।

সারা বিশ্বেই ইলেক্ট্রনিক ভেরিফিকেশন অব আইডেন্টিটি বা পরিচয় যাচাইয়ের ভার্চুয়াল প্রক্রিয়াটি চালু হয়েছে।

তাঁর মতে, ই-পাসপোর্টের কারণে এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশি হিসেবে যুতসইভাবে নিজেদেরকে উপস্থাপনের সুযোগ তৈরি হলো।

প্রযুক্তিগত সুবিধার দিক থেকে ধরতে গেলেও এই পাসপোর্ট মানুষের যাতায়াতকে সুবিধাজনক ও সহজ করার জন্য ইতিবাচক অগ্রগতি বলেও জানান তিনি।

তবে এই পদক্ষেপের কারণে পাসপোর্টের মূল্য বাড়বে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে মিস্টার কবির বলেন, এই প্রশ্নের উত্তর এই মুহূর্তে বলা মুশকিল।

তিনি বলেন, একটি পাসপোর্টকে একটি দেশের সামগ্রিক অবস্থার প্রতিফলক হিসেবে দেখা হয় এবং সে হিসেবেই একটি পাসপোর্টের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

“একটি দেশের ভাবমূর্তি, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা, মানুষের জীবনযাত্রার মানের মতো সব ধরণের বিষয় নিয়ে পাসপোর্টের মূল্যায়ন করা হয়,” তিনি বলেন।

সেখান থেকে দেখতে গেলে এই বিষয়গুলোতে কোন ধরণের গুণগত পরিবর্তন না আসলে পাসপোর্টের মূল্যায়নে কোন প্রভাব পড়ার সুযোগ কম বলে জানান তিনি।

“গণতন্ত্র, জনগণের দক্ষতা ও সক্ষমতা, শিক্ষা, অর্থনৈতিক গতিশীলতা, সামাজিক স্থিতিশীলতা, কাজের অবাধ সুযোগ- বাইরের দেশের দৃষ্টিতে এগুলোতে কোন পরিবর্তন না এলে তাহলে নতুন ভ্যালুয়েশন যোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম,” তিনি বলেন।

তবে পাসপোর্টের মূল্যায়ন নির্ভর করে কোন দেশের পাসপোর্ট জাল করা কতটা সহজ বা কঠিন তার উপরও। যেমন যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট জাল করা বেশ কঠিন।

সেদিক থেকে দেখতে গেলে ই-পাসপোর্ট হওয়ার কারণে এখন বাংলাদেশের পাসপোর্টও নকল বা জাল করা দুঃষ্কর হবে। অর্থাৎ পাসপোর্টের নিরাপত্তাও বাড়লো নতুন এই পদক্ষেপের কারণে।

এই সুবিধা আসার কারণে পাসপোর্টে মূল্য বাড়ার সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নে সাবেক কূটনীতিক মিস্টার কবির বলেন, এ জায়গাতে আমরা কিছুটা সুবিধাজনক জায়গায় হয়তো থাকলাম।

তবে শুধু এই বিষয়টি দিয়ে পাসপোর্টের মূল্য নির্ধারণ হয় না।

তার মতে,”এটা মারজিনালি ভ্যালু অ্যাড করতে পারে। কিন্তু সেটা খুব উল্লেখযোগ্য পরিমাণে করবার মতো জায়গা আছে বলে আমার মনে হয় না।”

কারণ শুধু নিরাপত্তা নয় বরং একটা দেশ সম্পর্কে বিশ্বের মানুষ সামগ্রিকভাবে কী ভাবে তার ভিত্তিতে পাসপোর্টের মূল্যায়ন করা হয়।

এসএইচ-০৪/২২/২০ (মুন্নী আক্তার, বিবিসি)