দেশজুড়ে শাটডাউন আগামী সপ্তাহে!

দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু আবার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণ আরও ব্যাপক আকারে ছড়াতে পারে। এ অবস্থায় সারাদেশ আগামী ১৪ দিনের শাটডাউন করার সুপারিশ করেছে কোভিড ১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। শাটডাউনকালে জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন ও অফিস-আদালতসহ সব কিছু বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছে কমিটি। সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহ থেকেই দেশজুড়ে শাটডাউন শুরু হতে পারে।

করোনা সংক্রমণের চলমান ঊর্ধ্বগতি রোধে সরকার নানা রকম কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। দেশজুড়ে স্থানে স্থানে চলছে এলাকাভিত্তিক ‘লকডাউন’। ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে সড়ক, নৌ ও রেলপথ বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যেও একদিনে করোনা সংক্রমণ ছয় হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) মারা গেছেন আরও ১০৮ জন। যা দেশে করোনার ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে গত ১৯ এপ্রিল দেশে করোনায় সর্বোচ্চ ১১২ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৭৬ জনে। এছাড়া একদিনে দেশে নতুন করে করোনা পজিটিভ হয়েছেন আরও ৫ হাজার ৮৬৯ জন। এতে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৮ লাখ ৭৮ হাজার ৮০৪ জন।

শুক্রবার  বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৭৭৬ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫৯ জন। এদিন মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২৭ হাজার ৬৫৩ জনের। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ২২ শতাংশ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। আগামীতে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে। এতে করে হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির চাপও বেড়ে যাবে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রথমে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা এবং পরে সেসব জেলা থেকে সংক্রমণ ছড়িয়েছে পাশের জেলাগুলোতে। এটি এখন সামাজিক সংক্রমণ হয়েছে। এই সামাজিক সংক্রমণের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বেড়ে চলছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণ আরও ব্যাপক আকারে ও ভয়াবহ রূপে ছড়িয়ে পড়তে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদেরও আশঙ্কা, সামনের পরিস্থিতি আরও শোচনীয় অবস্থায় চলে যেতে পারে।

সর্বশেষ, কারিগরি পরামর্শক কমিটির করা শাটডাউনের সুপারিশ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। কারণ দেশে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। হয়তো অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, শাটডাউন দেওয়ার বিষয়ে সব প্রস্তুতি আছে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বিষয়টি পর্যালোচনা চলছে। এবার শাটডাউন গত বছরের চেয়ে আরও কঠোরভাবে পালন করা হবে। অন্যথায় করোনা সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ডেল্টা (ভারতীয়) ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয় গত ৮ মে। ভারত থেকে আসা তিন বাংলাদেশির দেহে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়। এর পর থেকে এর সংক্রমণ বাড়তে থাকে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে গত চার সপ্তাহ ধরে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। বর্তমানে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণ ঘটেছে। এ ভ্যারিয়েন্টের কারণে সারাদেশে রোগী বাড়ছে। দেশের অর্ধশতাধিক জেলা এখন রয়েছে সংক্রমণের অতি উচ্চঝুঁকিতে। এ অবস্থায় সারাদেশ ১৪ দিনের শাটডাউন করার সুপারিশ করেছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গত বুধবার রাতে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি বৈঠক করে। বৈঠকে দেশের করোনার ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ পরিস্থিতির বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও আলোচনা হয়। সভায় আলোচনার ভিত্তিতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

এসএইচ-০১/২৫/২১ (অনলাইন ডেস্ক)