প্রস্তুুতি থাকলেও ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে ট্রেন চালু কবে?

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ছয় মাস আগে বাংলাদেশের ঢাকা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি রুটে ‘মিতালী এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি উদ্বোধন করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত এ ট্রেন ঢাকা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি রুটে যাত্রী পরিবহন করেনি। আবার নিউ জলপাইগুড়ি থেকেও কোনো যাত্রী ঢাকায় আসেনি। ফলে যে আনন্দ আয়োজন করে ট্রেনটি উদ্বোধন করা হয়েছিল, তা এখনো অপূর্ণই থেকে গেছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রেনটি উদ্বোধনের পরপরই দ্বিতীয় ঢেউ হানা দেয়। তখন দুই দেশই করোনা নিয়ন্ত্রণে লকডাউন জারি করে। পর্যটক ভিসা প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় ভারত। নিউ জলপাইগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র না থাকায় এই পথে ভারত থেকেও ঢাকায় আসার সুযোগ হয়নি কারও। এখন দুই দেশে করোনা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। ভারত পর্যটন ভিসা চালু করলেই ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে যাত্রী পরিবহন করবে ‘মিতালী এক্সপ্রেস’।

ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে এ ট্রেন চালু হলে কম সময় এবং খরচে পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি পর্যটন এলাকা দার্জিলিং, কালিম্পং এবং সিকিমের গ্যাংটকসহ মোহনীয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে অনায়াসে বেড়াতে যেতে পারবেন বাংলাদেশের পর্যটকেরা। এই পথে যাওয়া যাবে নেপাল-ভুটানেও।

কয়েকজন পর্যটক জানান, অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ভারত ও বাংলাদেশে ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। এখন ভারত পর্যটন ভিসা চালু করলে ‘মিতালী এক্সপ্রেস’ ট্রেনে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বেড়াতে যেতে পারবেন পর্যটকেরা। তেমনি সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের লোকেরাও বাংলাদেশের নীলফামারীর নীলসাগর, নীলকরদের নীলকুঠি, তিস্তা ব্যারাজ, রংপুরের তাজহাট জমিদার বাড়ি, বগুড়ার মহাস্থানগড়, সুন্দরবন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় যেতে পারবেন। এতে সীমান্তের দুই পাশে পর্যটন ও বিনোদনের বিশাল দ্বার খুলে যাবে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গত ২৬ মার্চ ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে চিলাহাটি-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে ‘মিতালী এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই রুটের দূরত্ব রেলপথে ৫৯৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশ অংশে পড়েছে ৫২৬ কিলোমিটার। বাকি ৬৯ কিলোমিটার ভারত অংশে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে হলদিবাড়ী হয়ে সীমান্ত পেরোবে ট্রেনটি। তারপর বাংলাদেশের চিলাহাটি, নীলফামারী, পার্বতীপুর, হিলি, নাটোর, ইশ্বরদী এবং টাঙ্গাইল হয়ে ট্রেন ঢাকায় পৌঁছাবে।

ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন সূত্র জানায়, আপাতত ভারতীয় রেকে সপ্তাহে দুই দিন এই ট্রেন চলাচল করার কথা। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট-চিলাহাটি-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে সোম ও বৃহস্পতিবার এবং নিউ জলপাইগুড়ি-চিলাহাটি-ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রুটে রোববার ও বুধবার চলাচল করবে ট্রেনটি। এই ট্রেনে এসি চেয়ারে সর্বনিম্ন ভাড়া ধরা হয়েছে দুই হাজার ৭০৫ টাকা। এছাড়া ট্রেনটিতে প্রতি যাত্রীর জন্য এসি বার্থে ভাড়া হবে চার হাজার ৯০৫ টাকা এবং এসি সিট ভাড়া ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮০৫ টাকা। তবে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ক্ষেত্রে ভাড়া হবে ৫০ শতাংশ।

ভারত পর্যটন ভিসা কবে চালু করবে তা জানতে সোমবার রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের হেল্প লাইনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু পর্যটন ভিসা চালুর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি হেল্পলাইনের সংশ্লিষ্টরা। ভারতীয় হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ায় বলা হয়েছে, লকডাউন বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ আগস্ট থেকে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রগুলো চালু হয়েছে। আবেদনকারীদের ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রে ভিসার আবেদন করার জন্য কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এখন পর্যটক ভিসা ছাড়া সব আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে।

অবশ্য গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় রেল ভবনে এক অনুষ্ঠানে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী জানান, শীতের আগেই পর্যটন ভিসা ও যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হবে।

দেশ ও দেশের বাইরে বন্ধু ও পরিবার নিয়ে নিয়মিত বেড়াতে যান ধানমন্ডির বাসিন্দা হাসান উদ্দিন। দুই বছর আগে আকাশপথে দার্জিলিং বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। এখন আবার পরিবার নিয়ে রেলপথে বেড়াতে যেতে চান। আলাপকালে হাসান উদ্দিন বলেন, ‘পর্যটন ভিসা চালু হলে ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে ট্রেনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেড়াতে যাবো। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সহজেই দার্জিলিং ও সিকিমের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের পাহাড়ঘেরা পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে যাওয়া যায়।’

শীত বেড়ানোর উপযুক্ত সময়। এর আগেই পর্যটন ভিসা চালু করার দাবি জানান হাসান উদ্দিন।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, ব্রিটিশ আমল থেকে অবিভক্ত ভারতের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান রেলপথ ছিল চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুট। এই পথ দিয়ে দার্জিলিং থেকে খুলনা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত একাধিক যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেন নিয়মিত চলাচল করতো। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর পথটি বন্ধ করে দেওয়া হলে নীলফামারীসহ আশপাশের জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। সেই থেকে ব্যবসায়ী-পর্যটকসহ এলাকার মানুষ পুনরায় রেলপথটি চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। ক্রমে এই দাবিতে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ ৫৫ বছর পর রেলপথটি পুনরায় চালু করে দুই দেশের সরকার।

বাংলাদেশের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা শরিফুল আলম বলেন, ‘ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে মিতালী এক্সপ্রেসে যাত্রী পরিবহনে রেলওয়ের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এখন ভারতীয় হাইকমিশন পর্যটন ভিসা চালু করলে যাত্রী পরিবহন শুরু করবে মিতালী এক্সপ্রেস।

এসএইচ-১৮/০৫/২১ (অনলাইন ডেস্ক)