ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম

মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের মেয়াদ কয়েক মাস আগেই শেষ হলো এস এম শুভরাজের। তিনি পাসপোর্ট রিনিউ করতে গিয়ে চিন্তা করলেন, আমি তো ই-পাসপোর্টই করতে পারি। এতে নানা সুবিধাসহ ঝামেলাও কম। তারপর তিনি অনলাইনের মাধ্যমে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। তিনি বলেন, ই-পাসপোর্ট করতে ঝামেলা অনেক কম। অনলাইনেই আবেদনসহ পেমেন্ট সুবিধা আছে। এ ছাড়া দ্রুত সময়ে ১০ বছর পর্যন্ত মেয়াদের পাসপোর্ট করা সম্ভব হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ই-পাসপোর্ট হচ্ছে নতুন যুগের নিরাপদ পাসপোর্ট।

তিনি আরও বলেন, অনলাইনে অ্যাকাউন্ট খুলে সহজেই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যাচ্ছে। এবং আবেদন জমা দেওয়ার দিন তারিখও পাওয়া যাবে অনলাইনে। কাগজপত্রেও লাগছে না কোনো সত্যায়ন। প্রথমে আপনাকে যেতে হবে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট অনলাইন পোর্টালের https://www.epassport.gov.bd এই ঠিকানায়। সেখানে শুরুতেই অ্যাপ্লাই অনলাইন ফর ই-পাসপোর্ট/ রি-ইস্যু বাটনে ক্লিক করে সরাসরি আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। তবে আবেদন করার আগে দেখে নিতে হবে ই-পাসপোর্ট আবেদনের ৫টি (পাঁচ) ধাপ। এই ধাপে আপনি জেনে নিতে পারবেন আপনার জেলায় ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু হয়েছে কি না।

এছাড়া সেখানে আরও আছে জুররি আবেদন, পাসপোর্ট ফি, নির্দেশনাবলীসহ অনেক কিছু। আপনি অ্যাপ্লাই অনলাইনে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলবেন। এরপর অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ ও পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করে ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্টের জন্য ডেট নিবেন। তারপর নির্ধারিত ডেটে অনলাইন আবেদন ফরমের কপি, পাসপোর্ট ফি পরিশোধের রিসিট, যে বাসায় থাকেন সে বাসার বিদ্যুৎ বিলের কপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও পুরান পাসপোর্টের কপিসহ পাসপোর্ট অফিসে যাবেন। সাথে অবশ্যই অরজিনাল কাগজপত্রগুলোও সঙ্গে নেবেন। এরপর ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্টের জন্য পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে লাইনে দাঁড়াবেন।

ছবি তোলা, সব আঙুলের ছাপ ও আইরিশের ছবি গ্রহণ শেষে আপনাকে পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসহ একটি রিসিট দেবে। রিসিট পাওয়ার পর অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, কাগজপত্র ও ব্যক্তিগত তথ্য, আবেদনকারীর ছবি, আঙুলের ছাপ ও আইরিশের ছবি গ্রহণ সব ঠিক আছে কি না। যথাযথভাবে সব কাজ শেষে তালিকাভুক্তির পর সরবরাহ করা ডেলিভারি স্লিপ সংরক্ষণ করবেন। পাসপোর্ট গ্রহণের সময় ডেলিভারির রসিদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। আপনার পাসপোর্ট হয়ে গেলে আপনাকে মেসেজ করে জানাবে। এরপর আপনি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আপনার পাসপোর্ট নিয়ে আসবেন।

পাসপোর্ট ফি সংক্রান্ত কিছু তথ্য:
পাসপোর্ট ফি অনলাইনে পেমেন্ট করা যাবে। অনলাইন পেমেন্ট ছাড়াও ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া এবং ঢাকা ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া যাবে। সোনালী ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট দেওয়া হয় এবং এখন পর্যন্ত চালু করা অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি হলো স্টারকার্ড, ভিসা, কিউ-ক্যাশ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিকাশ ও ডিবিবিএল নেক্সাস। অনলাইনে পেমেন্ট করার জন্য আপনার ব্রাউজারের পপ-আপ ব্লকার অক্ষম করতে হবে।

ফি কত:
৫ বছর মেয়াদি ২১ দিনের নিয়মিত সরবরাহ ৪ হাজার ২৫ টাকা, ১০ দিনের দ্রুত সরবরাহ ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, ২ দিনে সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা। ৪৮ পৃষ্ঠা ১০ বছর মেয়াদি ২১ দিন ডেলিভারি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, ১০ দিনের ডেলিভারি ৮ হাজার ৫০ টাকা ও ২ দিনের ডেলিভারি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা। ৬৪ পৃষ্ঠা ৫ বছর মেয়াদি ২১ দিনের ডেলিভারি ৬ হাজার ৩২৫, ১০ দিনের ডেলিভারি ৮ হাজার ৬২৫, ২ দিনের ডেলিভারি ১২ হাজার ৭৫ টাকা, ৬৪ পৃষ্ঠা ১০ বছর মেয়াদি ২১ দিনের ডেলিভারি ৮ হাজার ৫০, ১০ দিনের ডেলিভারি ১০ হাজার ৩৫০, ২ দিনের ডেলিভারি ১৩ হাজার ৮০০ টাকা।

ই-পাসপোর্টের সুবিধা
ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর মাধ্যমে ই-গেট ব্যবহার করে খুব দ্রুত ও সহজে ভ্রমণকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন। ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এর মাধ্যমেই ইমিগ্রেশন দ্রুত হয়ে যাবে। ই-গেটের নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের ব্যবস্থাও। সব ঠিক থাকলে তিনি ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন। কোনো গরমিল থাকলে জ্বলে উঠবে লালবাতি। কারও বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলে, সেটিও জানা যাবে সঙ্গে সঙ্গে।

জেনে রাখুন
ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্মনিবন্ধন সনদ (বিআরসি) অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের কম) আবেদনকারী, যার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তার পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র অনলাইনে অথবা পিডিএফ ফরমেট ডাউনলোড করে পূরণ করা যাবে। এতে কোনো ছবি এবং কোনো ধরনের কাগজপত্র সত্যায়নের প্রয়োজন নেই। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদপত্রসহ বাবা-মায়ের এনআইডির কপি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবেদনপত্র গ্রহণের সময় হাতের ১০ আঙুলের ছাপ, ছবি ও চোখের আইরিশ ফিচার নেওয়া হবে। ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হবে। অতি জরুরি ক্ষেত্রে ই-পাসপোর্ট করার জন্য প্রি-পুলিশ ভেরিফিকেশন নিজ উদ্যোগে করে নিয়ে যেতে হবে। প্রচলিত ব্যবস্থার মতো ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ভিসার বিষয়টি একই থাকবে। ভিসা কর্তৃপক্ষ বা দূতাবাসগুলো এই পিকেডি ব্যবহার করে আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে নিতে পারবে। এরপর বইয়ের পাতায় ভিসা স্টিকার, সিল দিতে পারবে বা বাতিল করে দিতে পারবে। ই-পাসপোর্টের পাশাপাশি এমআরপিও চালু থাকবে। তবে নতুন করে কাউকে এমআরপি দেওয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে সব এমআরপি তুলে নেওয়া হবে। আবেদন করার বিস্তারিত নিয়মাবলি অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।

অনলাইন চেক
ই-পাসপোর্ট পোর্টালে ‘স্ট্যাটাস চেক’ করা যাবে। জন্মতারিখ ও আবেদনের ক্রমিক সংখ্যা দিয়ে সার্চ অপশনে ক্লিক করতে হবে। আপনার অনলাইন পোর্টাল অ্যাকাউন্ট থেকে আপনার সব আবেদনের অবস্থা দেখতে পারেন।

এসএইচ-২১/০৮/২২ (অনলাইন ডেস্ক)