পি কে হালদারকে ফেরত চেয়েছে বাংলাদেশ, ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর ভারতের আদালতের

অর্থপাচারের অভিযোগে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া প্রশান্ত কুমার হালদারকে (যিনি পি কে হালদার নামে বেশি পরিচিত) ফেরত চেয়ে ভারতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার পি কে হালদারসহ গ্রেপ্তার পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড দিয়েছে ভারতের আদালত।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ””দুর্নীতি দমন কমিশনের সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই তারা তাকে (পি কে হালদারকে) গ্রেপ্তার করেছে। এখন তাদেরও একটা আইনি প্রক্রিয়া আছে, সে অনুযায়ী প্রসেস হবে। তারা বলেছে, তাদের আইনি প্রক্রিয়া শেষ করলে পারলে তারা আমাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে। তারপরে আমাদের রিকোয়েস্ট বিবেচনায় নেবে। তারা সম্পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। ”

মঙ্গলবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীর সঙ্গে বৈঠকের সময় পররাষ্ট্র সচিব পি কে হালদারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে থাকা মামলাগুলোর বিষয় তুলে ধরে তাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে সহযোগিতা চেয়েছেন।

বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পি কে হালদারকে ফেরত চেয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ”আমরা আজকে তাকে বললাম সহযোগিতা করো, যার অর্থই হচ্ছে, উনি যে সমস্ত চার্জে বাংলাদেশে সম্মুখীন আছে, সেজন্য তাকে এখানে আনা প্রয়োজন। সেটা আমরা বলেছি। ওনার সঙ্গে (ভারতীয় হাইকমিশনার) এই বিষয়টা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। ওনারা আমাদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে গেছেন।”

তিনি জানান, পি কে হালদারকে ফেরত চেয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলে অনুরোধ জানানো হবে। সেখানে ভারতে তার অপরাধের তথ্যও জানতে চাওয়া হবে।

শনিবার পি কে হালদার, তার স্ত্রীসহ মোট ছয় জনকে পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগর থেকে গ্রেপ্তার করে ভারতের ভারতের অর্থ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী এনফোর্সমেন্ট ডিরেকটরেট।

মঙ্গলবার পি কে হালদারসহ পাঁচ জনকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। শুনানির পর আদালত রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।

তবে তার স্ত্রীকে ১০ দিনের জন্য জুডিশিয়াল কাস্টডি বা বিচারিক হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অরিজিৎ চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেছেন, এদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলা করা হয়েছে। সেই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড দেয়া হয়েছে।

ঢাকার একটি ব্যাংক ও অপর একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর দীর্ঘদিন ধরেই তিনি পলাতক ছিলেন।

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক পি কে হালদার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি মামলা করেছিলো।

এসব মামলায় তাদের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়।

বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের মধ্যে থাকা বন্দী সমর্পণ চুক্তির মাধ্যমে পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

তবে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ভারতেও অপরাধের অভিযোগ থাকায় সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগবে বলে তারা ধারণা করছেন।

বাংলাদেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা বা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন রবিবার বলেছেন, ”বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ফিনান্সিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, বাংলাদেশের সংস্থাগুলো কিন্তু তৎপর, সজাগ আছে। এজেন্সিগুলো কাজ করছে, আপনারা দেখবেন অচিরেই তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করা হবে।”

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি অবৈধভাবে ভারতের পাসপোর্ট ও ভোটার আইডি কার্ড নিয়েছেন।

ভারতের আইন অনুযায়ী এটি গুরুতর অপরাধ।

এই অপরাধে তার বিরুদ্ধে ভারতে একটি মামলা দায়েরর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।

রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘তিনি যেখানে আছেন, সেখানে তিনি কি করেছেন, সেই দেশের আইনের মুখোমুখি হচ্ছেন। আমরাও তাকে ফেরত চাইবো আমাদের দেশের মামলাগুলোর জন্য।”

ভারতে কর্মকর্তারা বলছেন, পি কে হালদারের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় একটি ব্যাপার হলো, এই ব্যক্তি ভারতের গুরুতর আইন ভেঙ্গেছেন। তিনি বেআইনিভাবে ভারতের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সেই কারণে যদি ভারতের কর্তৃপক্ষ আলাদা মামলা করে বিচার শুরু করে, তাহলে বিচার শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত তাকে ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ।”

এসএইচ-০২/১৭/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : বিবিসি)