বাংলাদেশকে জাতিসংঘের দেয়া গুমের তালিকায় ভারতীয়দের নাম

গ্রেফতার, জেল, কারামুক্ত সবই ভারতে; তারপরও বাংলাদেশকে জাতিসংঘের দেয়া গুমের তালিকায় রয়েছে উলফা নেতার নাম। ২০১৫ সালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ধরা পড়া উলফার আরেক নেতার নামও রয়েছে এ তালিকায়।

বিভিন্ন এনজিও থেকে তথ্য নিয়ে জাতিসংঘের দেয়া গুম হওয়া ৭৬ জনের নামের তালিকায় মিলেছে এ রকম কয়েকটি সাংঘর্ষিক তথ্য। তালিকাটিতে ঘাটতি দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদও।

তার মতে, গুম হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা বাড়িয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ তালিকা দেয়া হয়েছিল জাতিসংঘকে। এ কারণে প্রকৃত গুম হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।

বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গুম হয়েছে ৭৬ জন। দেশের কয়েকটি এনজিওর তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গতবছর একটি তালিকা সরকারকে দেয় জাতিসংঘ। সবশেষ সংস্থাটির মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের ঢাকা সফরেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ৭৬ জনের মধ্যে ১০ জনের খোঁজ মিলেছে; বাকিরা পলাতক বা নিখোঁজ রয়েছে।

জাতিসংঘের তালিকা পর্যালোচনা করে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তালিকায় থাকা একজন ভারতের নিষিদ্ধ সংগঠন উলফা নেতা সানায়া-ইমা-রাজকুমার ওরফে মেঘেন। জাতিসংঘের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ভারতীয় এ নাগরিককে ২০১০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সাদা পোশাকে ঢাকা থেকে তুলে নেয় পুলিশ। অথচ ভারতের গণমাধ্যমের খবরে রয়েছে, তাকে গ্রেফতার করা হয় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে। ভারতের আদালতের দেয়া ১০ বছর কারাভোগের পর ২০১৯ সালের শেষের দিকে দেশটির গৌহাটি কারাগার থেকে মুক্ত হন মেঘেন। অথচ তার ঘটনায় অভিযুক্ত করা হচ্ছে বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশে গুম হওয়া ভারতীয় আরেক নাগরিকের নাম রয়েছে জাতিসংঘের তালিকায়। তিনিও সশস্ত্র সংগঠন উলফা নেতা। বলা হয়, কেইথেল্লাক-পাম-নবচন্দ্র নামে এ ব্যক্তিকে ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাদা পোশাকে তুলে নেয় বাংলাদেশের পুলিশ। অথচ ভারতীয় গণমাধ্যম বিএসএফের বরাত দিয়ে জানায়, ভারতে প্রবেশের সময় সিলেটের মেঘালয় সীমান্তবর্তী শহর ডাউকি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এবার ফিরে আসা যাক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা হাসিনুর রহমানের গুম নিয়ে। জঙ্গি সম্পৃক্ততা ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে সামরিক আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হন হাসিনুর। দেড় বছর নিখোঁজ থাকার পর আড়াই বছর আগে বাড়ি ফেরেন তিনি। এখন ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় তিনি। অথচ সেও আছেন জাতিসংঘের গুমের তালিকায়।

এ নিয়ে অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যারা এ তালিকা করেছেন, দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে তাদের হয়তো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। যদিও সন্দেহ নেই যে গুম হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সংখ্যা বাড়িয়ে হয়ত কোনো একটা সুবিধা নিতে চাচ্ছিল কেউ। কারণ যদি দেখা যায় যে সংখ্যা কম, তাহলে হয়তো গুরুত্ব ততটা পাবে না, বিষয়টি সামনে চলে আসবে না। সংখ্যা বাড়িয়ে যেটা হলো, সঠিক কতগুলো গুম হলো সেটাকেও একটা প্রশ্নের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

তিনি মনে করেন, গুমের তালিকা যারা করে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সতর্ক হওয়া উচিত জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্টদের। কারণ বাংলাদেশে এ ধরনের বিষয়গুলো রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে থেকে হয়ে থাকে।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ মনে করেন, পলাতক বা নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এ তালিকা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পদক্ষেপ নিতে হবে রাষ্ট্রকেই।

এসএইচ-০৩/২২/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : সময়)