সরকারি, আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় পৌনে দু’হাজার কোটি টাকা বিল বকেয়া

সরকারি, আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ছয় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির প্রায় পৌনে দুই হাজার কোটি টাকার বিল বকেয়া পড়ে আছে। এর বড় অংশ আটকে আছে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে। এসব বিল আদায় না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে কোম্পানিগুলো। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সমন্বয়) এসএম এনামুল কবিরের সভাপতিত্বে এক সভায় বকেয়ার হিসাব তুলে ধরেন বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা। তারা জানান, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পাওনার পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা।

সারাদেশে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির মাধ্যমে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান এবং ডলার সংকটের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি আমদানি করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছে বিল বকেয়া পড়ে থাকার তথ্য সামনে এলো।

বিদ্যুৎ বিভাগের সভায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক পরিচালনা) সভায় জানান, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে মোট ৩৬৪ দশমিক শূন্য ২ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিল বকেয়া আছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কাছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে পিডিবির বকেয়া আছে ১৭৫ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) বিদ্যুৎ বিল বকেয়া জমা পড়েছে ১৫৩ দশমিক ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ৪৯ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে ১৮ দশমিক ৪০ কোটি টাকা, জননিরাপত্তা বিভাগের কাছে ১৭ দশমিক ২৬ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের কাছে ১০ দশমিক ১৩ কোটি টাকা।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে মার্চ পর্যন্ত ৬৭৫ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা পাবে। ডিপিডিসির পাওনা বকেয়া টাকার অর্ধেকের বেশি স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে প্রায় ৩৩২ দশমিক ১৫ টাকা। এছাড়া দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাবে ১১৫ দশমিক ৮১ কোটি টাকা। গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাছে পাবে ৮৭ দশমিক ৫৪ কোটি টাকা।

এছাড়া ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) পাওনা এই বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বকেয়া জমা পড়েছে ২১৫ দশমিক ৮৯ কোটি টাকা। যার মধ্যে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাওনা ১৬৬ দশমিক ৫৭ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে বকেয়া রয়েছে ২০ দশমিক ২০ কোটি টাকা।

এছাড়া খুলনা ও বরিশালে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওজোপাডিকোর কাছে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বকেয়া পাওনা রয়েছে ১৮৭ দশমিক ২৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাছে বকেয়া ৫৬ দশমিক ৯১ কোটি টাকা। খুলনা সিটি করপোরেশনের কাছে ২০ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা, পৌরসভাগুলোর কাছে ৭২ দশমিক ৯০ কোটি টাকা।

রংপুর ও রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত বকেয়া পড়েছে ২৯১ দশমিক ৩১ কোটি টাকা। যার মধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাছে বকেয়া ৪০ দশমিক ৬৬ কোটি, রংপুর সিটি করপোরেশনের কাছে ২৩ দশমিক ৮০ কোটি এবং পৌরসভাগুলোর কাছে বকেয়া পড়ে আছে ১১৮ দশমিক ৮১ কোটি টাকা। নেসকোর আওতাধীন অবাঙালি বিহারি ক্যাম্পগুলোর কাছে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ৫৭ দশমিক শূন্য ৭ কোটি টাকা।

এসব বকেয়া আদায়ে তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিশেষ করে সরকারি মন্ত্রণালয় বা সংস্থা সিটি করপোরেশনগুলোর বিল আদায়ে চিঠি প্রেরণ ও নিয়মিত মনিটরিং করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে যেসব গ্রাহকের কাছে বিল বকেয়া আছে তাদের নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে সংযোগ বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

উল্লেখ্য, অর্থের সংকট বা ডলার সংকটে সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি করতে পারছে না। বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হিমশিম খাচ্ছে। তেল সরবরাহকারীদের অব্যাহত চাপের মুখেও সরকার পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না। বাংলাদেশ তেল-গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) বিদেশি কোম্পানিগুলোর বকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না।

এসএইচ-০৭/১৩/২৩ (অনলাইন ডেস্ক)