স্বাধীনতার ৫২ বছরেও স্বীকৃতি পায়নি ১২৬ শহীদ পরিবার

স্বাধীনতার ৫২ বছরেও শহীদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি পাইনি। কেউ আমাদের খোঁজখবরও নেননি। তাই আজ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি দাবি, তিনি যেন আমাদের পরিবারকে শহীদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি দেন। আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো জানান নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর আলোকপাড়া শহীদ পরিবারের সদস্য রঞ্জন কুমার সাহা ও ৭৫ বছরের মলিনা রানী সাহাসহ নিহত ১২৬ পরিবারের সদস্যরা।

শহীদ পরিবারের সদস্য রঞ্জন কুমার সাহা (৬০) বলেন, পাকবাহিনী নোয়াখালীতে প্রবেশ করে সোনাইমুড়ীর আলোকপাড়ায় নারকীয় তাণ্ডব ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। পোদ্দার বাড়ির সামনে সে সময় আমাদের ১৭-১৮ ঘর ছিল। সবকয়টি ঘর আগুনে পুড়িয়ে দিলেও আমাদের ঘরটি পুড়ে যায়নি। সেদিন যদি আমাদের ঘরটি পুড়ে যেত তাহলে আমার বাবার এই করুণ মৃত্যু হতো না।

তিনি আরও বলেন, ঘর থাকার কারণে আমার বাবা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাননি; যার কারণে পাক হানাদার বাহিনী পরবর্তীতে আমাদের বাড়িতে ঢুকে বাবা রায়মন সাহাসহ আমাদের পরিবারের পাঁচজনকে হত্যা করে। আমার বাবার কাকি আমার দাদিকে ধর্ষণ করে হত্যা করে। এ ছাড়া তাদের হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি, তারা গেনেড দিয়ে আমার বাবার পেট ছিঁড়ে নাড়িভুঁড়ি বের করে দেয়। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও কেউ আমাদের খোঁজখবর নেয়নি। সরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাইনি।

শহীদ পরিবারের মলিনা রানী সাহা (৭৫) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পাক হানাদার বাহিনী আমাদের বাড়ির সব ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আমার শিক্ষক বাবাকে হত্যা করলেও আমাদের পরিবার আজও শহীদ পারিবার হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। আমার একটাই দাবি, আমাদের পরিবারকে শহীদ পরিবার হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিলে আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।

হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শীদের ও বধ্যভূমি সংরক্ষণ ৭১ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া জানান, ১৯৭১ সালে ২৬ মে সকালে হানাদার বাহিনী নোয়াখালীতে প্রবেশ করার সময় সোনাইমুড়ীর আলোকপাড়াসহ ছয় গ্রামের নারকীয় তাণ্ডব ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে পোদ্দার বাড়ির সামনে পাক হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকারদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন ১২৬ জন। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও সেসব শহীদের পরিবার স্বীকৃতি পায়নি। হত্যাকাণ্ডের স্থানটি পায়নি বধ্যভূমির স্বীকৃতি।

সোনাইমুড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গোলাম মাওলা আলোকপাড়া, নাঁওতলা, সোনাইমুড়ী, বিজয়নগর, কেশারপাড়া এবং বাট্টা এ ছয় গ্রামের শহীদদের ও গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান।

তিনি বলেন, সেই দিনের ঘটনার স্মরণে এই বধ্যভূমি স্বীকৃতি পেলে মুক্তিযুদ্ধে ওই শহীদদের অবদান ও তার সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে আগামীর তরুণ প্রজন্ম ও সাধারণ মানুষ।

নোয়াখালী -১ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম এমপি জানান, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে এ বিষয়ে অবগত করব।

তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী এই পরিবারগুলোকে শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি এবং ঘটনাস্থলকে বধ্যভূমি স্বীকৃতি দেবেন।

উল্লেখ্য, সোনাইমুড়ী- ৩৯, আলোকপাড়া ৫৫, নাঁওতলা-১২, বিজয়নগর-০৪, কেশারপাড়া-৩ এবং বাট্টা-১৩ নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে হানাদার বাহিনী।

এসএইচ-১৭/১৯/২৩ (অনলাইন ডেস্ক)