মুশফিকের ব্যাটে শ্রীলঙ্কাকে ২৩৯ রানের লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ

আফসোস মুশফিকের জন্য। অপরাজিত থাকলেন, কিন্তু মাত্র ২ রানের জন্য ৮ম সেঞ্চুরিটা পেলেন না। তবুও এককভাবে যে লড়াই করলেন মুশফিকুর রহীম, তাতেই স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লড়াকু স্কোর গড়ে তুলতে পারলো বাংলাদেশ। মুশফিকের অপরাজিত ৯৮ রানের ওপর ভর করে শ্রীলঙ্কাকে ২৩৯ রানের লক্ষ্য দিয়েছে টাইগাররা।

এক প্রান্তে যখন একের পর এক উইকেট পড়ছিল, তখন টাইগারদের জন্য ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মুশফিকুর রহীম। তিনি কেবল লঙ্কান বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে দাঁড়াতে সক্ষম হন। তার ব্যাটিং দৃঢ়তার কারণেই শেষ পর্যন্ত একটা চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়তে সক্ষম হয় টাইগাররা।

ব্যাট করতে নামলে শুরুতেই একের পর এক উইকেট হারানো- এক সময়ের নিয়মিত অভ্যাসে ছিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু ২০১৫ বিশ্বকাপের পর সেই অভ্যাসটা পরিবর্তন করে এই জায়গাটায় দারুণ উন্নতি করেছিল টাইগাররা। কিন্তু ২০১৯ বিশ্বকাপের পর চার বছর আগের সেই অভ্যাসটাই যেন আবার ফিরিয়ে আনলো ব্যাটসম্যানরা।

ব্যাট করতে নেমে একের পর এক উইকেট হারানোর প্রতিযোগিতায় নামে বাংলাদেশ। ৮৮ রানের মধ্যে একে একে সাজঘরে ফিরে যান ৫জন প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান। সপ্তম উইকেট জুটিতে মিরাজের সঙ্গে ৮৪ রানের জুটি গড়েই মুশফিক বাংলাদেশকে পার করে দেন ২০০ রানের গন্ডি। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ২৩৮ রান করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ১১০ বলে ৯৮ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। ৬টি বাউন্ডারির সঙ্গে ১টি ছক্কার মার মারেন তিনি।

মুশফিক হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন ৭১ বলে। মাত্র ২টি বাউন্ডারি মেরে। পরের ৪৮ রান করেন তিনি ৩৯ বলে। বাউন্ডারি মেরেছেন আরও ৪টি। সঙ্গে একটি ছক্কাও। তার এই ব্যটিং দৃঢ়তাই লজ্জা থেকে বাঁচিয়ে দেয় বাংলাদেশকে। শ্রীলঙ্কার ইসুরু উদানা, নুয়ান প্রদীপ এবং আকিলা ধনঞ্জয়া নেন ২টি করে উইকেট।

এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে লাসিথ মালিঙ্গা পরবর্তী যুগ শুরু করলো শ্রীলঙ্কা। আগের ম্যাচেই জীবনের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ফেলেছেন এই লঙ্কান কিংবদন্তী পেসার। নিজের শেষ ম্যাচে দেশকে ৯১ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় এনে দিয়েছেন। দুর্দান্ত বোলিং করে নিয়েছিলেন তিন উইকেট।

মালিঙ্গা পরবর্তী ওয়ানডে ম্যাচে টস হেরেছে শ্রীলঙ্কা। টস জিতে ব্যাট করতে নেমেছে সফরকারী বাংলাদেশ। তবে আর প্রেমাদাসায় টস জিতে ব্যাট করতে নেমে সূচনাটা মোটেও ভালো হলো না টাইগারদের। দ্রুত দুই ওপেনারকে হারিয়ে দারুণ বিপদে পড়ে গেছে সফরকারীরা।

মালিঙ্গা না থাকলেও বাংলাদেশের ইনিংসের ওপর ঝড় তুলছেন নুয়ান প্রদীপ আর ইসুরু উদানা। এই দুই বোলারের আগুনে বোলিংয়ের সামনে সৌম্য হয়েছেন এলবিডব্লিউ এবং তামিম ইকবাল হয়েছেন বোল্ড।

শুরুর অ্যাপ্রোচটা ভালোই ছিল দুই ওপেনারের। কিন্তু ৬ষ্ঠ ওভারে এসে নুয়ান প্রদীপের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে যান সৌম্য সরকার। ফুলটস বলটিই ব্যাটে লাগাতে পারলেন না, সরাসরি গিয়ে আঘাত হানে প্যাডে। ১৩ বলে ১১ রান করে ফিরে গেলেন সৌম্য।

৯ম ওভারের প্রথম বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান তামিম ইকবাল। ইসুরু উদানার বলটাকে নিজেই ব্যাটের ভেতরের কানায় লাগিয়ে স্ট্যাম্পে টেন আনলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে ৩১ বল মোকাবেলা করে ১৯ রান করেন তামিম।

তামিম আউট হওয়ার পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন দুই ডানহাতি মুশফিকুর রহীম আর মোহাম্মদ মিঠুন। তাদের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোরও চেষ্টা করে বাংলাদেশ। কিন্তু ১৫তম ওভারের তৃতীয় বলে বলটাতে সোজা কুশল মেন্ডিসের হাতে তুলে দেন মোহাম্মদ মিঠুন। ৫২ রানের মাথায় ফিরে যান তিনি। ২৩ বলে ১২ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন।

মিঠুন আউট হওয়ার পর আশা ছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে। মুশফিকের সঙ্গে ভালো একটা জুটি গড়তে পারলে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব ছিল। কিন্তু মাত্র ১৬ রানের জুটি গড়তে পারলেন রিয়াদ। ১৯তম ওভারের শেষ বলে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ঘূর্ণি বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ। ১৮ বল খেলে মাত্র ৬ রান করেন তিনি।

এরপর মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে ১১৭ রানে নিয়ে যান মুশফিক। যখন প্রয়োজন ছিল মোসাদ্দেকের দৃঢ়তা দেখানোর, তখন তিনি সেটা দেখাতে পারেননি। ৩২তম ওভারে মাত্র ১৩ রান করে মোসাদ্দেক আউট হয়ে যান। এরপর মুশফিকের সঙ্গে জুটি বাধেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

এ জায়গায় মিরাজের সঙ্গে ভালো একটা জুটি গড়ে ওঠে মুশফিকুর রহীমের। ৮৪ রানের জুটিটি ভাঙে মিরাজ বিগ শট খেলতে গিয়ে। তবুও ৪৯ বলে ৪৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস উপহার দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান মিরাজ। এরপর রানআউট হন তাইজুল ইসলামও।

এসএইচ-০৬/২৮/১৯ (স্পোর্টস ডেস্ক)