রিয়াদের সেঞ্চুরির পর তাসকিনের প্রথম ফিফটি, ছুটছে বাংলাদেশ

ম্যাচের শুরুতে ৮ রানে নেই ২ উইকেট, প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেয়ার পরেও ১৩২ রানে সাজঘরে প্রথম ছয় ব্যাটসম্যান। এমন অবস্থা থেকে দলীয় সংগ্রহ ২০০ পেরুনো নিয়েই জেগেছিল শঙ্কা, মনে ভর করেছিল ভয়। কিন্তু সেই দলই এখন ৮ উইকেটে করে ফেলেছে ৪০৪ রান!

খানিক অবিশ্বাস্য শোনালেও, ৬ উইকেট পতনের পর দুর্দান্ত লড়াইয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। যার পুরো কৃতিত্ব সাত নম্বরে নামা লিটন দাস, আট নম্বরে নামা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও দশ নম্বরে নামা তাসকিন আহমেদের। বিশেষ করে শেষ দুজনের কল্যাণেই চারশ পেরিয়েছে বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ।

এ প্রতিবেদন লেখার সময় শেষ হয়েছে দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনের খেলা। যেখানে ১০৭ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ৪০৪ রান। দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে ২৪ ওভারে ১১০ রান করে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ।

ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরিতে ২১৫ বলে ১১২ রান করে অপরাজিত রয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। আর ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিং প্রথম ফিফটি করা তাসকিন আহমেদের নামের পাশে রয়েছে ৫২ রান। এ দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিত সংগ্রহ এখন ১৩৪ রান।

বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে নবম উইকেটে এটি তৃতীয় শতরানের জুটি। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নবম উইকেটে ১৮৪ রান যোগ করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ ও আবুল হাসান রাজু। সেই রেকর্ড ভাঙতে আরও ৫০ রান যোগ করতে হবে তাসকিন ও মাহমুদউল্লাহকে।

দীর্ঘ ১৬ মাস পর টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন ৮ নম্বরে। ততক্ষণে মাত্র ১৩২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে কঠিন চাপে বাংলাদেশ দল। সেখান থেকে প্রথমে লিটন দাসকে নিয়ে সপ্তম উইকেটে গড়েছেন ১৩৮ রানের জুটি।

দলীয় ২৭০ রানের মাথায় মাত্র ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি থেকে দূরে থেকে আউট হন লিটন। পরের বলেই সাজঘরে ফেরেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ফলে আবার বাড়ে চাপ। মনে হচ্ছিল তিনশর আগেই হয়তো অলআউট হয়ে যাবে বাংলাদেশ দল।

কিন্তু তাসকিন আহমেদকে নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের দুর্দান্ত প্রদর্শনী করলেন মাহমুদউল্লাহ। সাদা পোশাকের ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হলো ধৈর্য্য, সেই ধৈর্য্য আর মনোসংযোগের চূড়ান্ত দেখিয়েই দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন এ অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।

এরই মধ্যে নবম উইকেটে তাসকিনের সঙ্গে যোগ করে ফেলেছেন ১৩৪ রান। যা কি না নবম উইকেটে বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি। এ জুটির বদৌলতে দলীয় সংগ্রহও ছাড়িয়ে গেছে চারশ রানের ঘর। ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নিয়েছেন তাসকিন।

আগেরদিন ৫৪ রানে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। আজ দিনের ১৭ ও ইনিংসের ১০০তম ওভারে পরপর জোড়া বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন তিনি। টেস্ট ক্যারিয়ারে মাহমুদউল্লাহর এটি পঞ্চম সেঞ্চুরি। দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা ইনিংসে সেঞ্চুরি করতে খেলেছেন ১৯৫ বল। যেখানে ছিল ১১ চার ও ১ ছয়ের মার।

মাহমুদউল্লাহ-তাসকিনের জুটি গড়ার পথে দিনের শুরুতে উত্তাপ ছড়িয়েছে দুই দলের খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষা। প্রথমে তাসকিনের সঙ্গে লেগে যান জিম্বাবুয়ের পেসার মুজুরাবানি। দিনের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বল দারুণ একটি বাউন্সার করেছিলেন মুজুরাবানি। তাসকিন সেটি ছেড়ে দিয়ে হাত ও পা দিয়ে নাচের মতো ভঙ্গিমা করেন।

কিন্তু সেটি সহ্য হয়নি মুজুরাবানির। তিনি তাসকিনের কাছে গিয়ে কড়া চাহনি দিলে ছাড় দেননি তাসকিনও। দুই ফাস্ট বোলারের মধ্যে বেশ কয়েক সেকেন্ড উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। খানিক পর আম্পায়ার এসে তাদের মধ্যস্থতা করেন। তবে পরের বলেও দুজনের মধ্যে দেখা গেছে উত্তপ্ত চাহনি।

পরের ঘটনা ৮৮তম ওভার শুরুর সময়। ভিক্টর নিয়ুচি ফুল রানআপ নিয়ে বোলিংয়ের জন্য আসলে একদম শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ান মাহমুদউল্লাহ। হতাশায় উইকেটরক্ষকের দিকে আলতো করে বল ছুড়ে মারেন নিয়ুচি। তখন কোনো বাক্য বিনিময় হয়নি।

তবে পরের বলে পুরো রানআপ নিয়েও বল করেননি নিয়ুচি। বরং পুরোটা পিচ পাড়ি দিয়ে মাহমুদউল্লাহর কাছে গিয়ে কিছু একটা বলেন তিনি। যা শুনে রেগে যান মাহমুদউল্লাহও। তখন তাদের মধ্যে ঘটে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। নিয়ুচি ফেরার পথ ধরলেও রাগে ফুটতে থাকা মাহমুদউল্লাহ প্রায় মাঝ পিচ পর্যন্ত চলে আসেন।

দুই পেসারের সঙ্গে দুই ব্যাটসম্যানের উত্তপ্ত মুহূর্তের দেখা মিললেও, কোনো বিপদ ঘটেনি বাংলাদেশের। তখনের ঘটনায় বিপদ না ঘটলেও, ৯২তম ওভারে গিয়ে বেঁচে যান তাসকিন। ভিক্টর নিয়ুচির বলে ব্যক্তিগত ৩২ রানে থাকতে সেকেন্ড স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। তবে সেটি তালুবন্দী করতে পারেননি মিল্টন শুম্বা।

সেই এক জীবন ব্যতীত প্রায় পুরো সময় নিখুঁত ব্যাটিংই করেছেন তাসকিন। যার সুবাদে মিলেছে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির দেখা। ইনিংসের ১০১তম ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে ৬৯ বলে নিজের ফিফটি পূরণ করেন তাসকিন। যেখানে ছিল ৮টি চারের মার।

এসএইচ-১৭/০৮/২১ (স্পোর্টস ডেস্ক)