বিদায়ী বছরে ক্রিকেটের আলোচিত পাঁচ

শেষ হতে চলেছে আরেকটি বছর। বর্তমান থেকে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিচ্ছে ২০২১ সাল। বরাবরের মতো এ বছরও অনেক রেকর্ড ও স্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন। ব্যত্যয় ঘটেনি ক্রিকেট বিশ্বেও। নিউজিল্যান্ডের প্রথম বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ শিরোপা জয় কিংবা অস্ট্রেলিয়ার প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় মোটাদাগে ক্রিকেট বিশ্বে বড় ঘটনা। তবে কোহলির অধিনায়কত্ব হারানো এবং অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক টিম পেইনের যৌন কেলেঙ্কারির বিতর্কও লাইমলাইটে ছিল। তেমনই আলোচিত পাঁচ ঘটনা নিয়ে সময় অনলাইনের এবারের আয়োজন।

টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড

ভারতকে হারিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে ইতিহাস গড়েছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল। গত জুনে ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনে বৃষ্টি বিঘ্নিত টেস্টে ভারতকে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ট্রফি নিশ্চিত করেন কিউইরা। আর এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আইসিসির শিরোপা উঁচিয়ে ধরার সুযোগ পায় কেন উইলিয়ামসনরা। এর আগে ২০০০ সালে নকআউট বিশ্বকাপ (এখনকার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। এরপর আর কোনো ট্রফি জিততে পারেনি।

ভারত টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে কাইল জেমিসনের গতির মুখে পড়ে প্রথম ইনিংসে ২১৭ রানে অলআউট হয়। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৯ রান করেন আজিঙ্কা রাহানে। এছাড়া ৪৪ রান করেন ভারতীয় টিমের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ওদিকে নিউজিল্যান্ডের হয়ে একাই ৫ উইকেট শিকার করেন জেমিসন।

জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩২ রানের লিড নিয়ে ২৪৯ রানে ইনিংস শেষ করে নিউজিল্যান্ড। ডেভন কনওয়ে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৪ রান করেন। এছাড়া ৪৯ রান করেন উইলিয়ামসন। ভারতের হয়ে মোহাম্মদ সামি নেন ৪ উইকেট। ৩ উইকেট শিকার করেন ইশান্ত শর্মা।

৩২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্টের আগ্রাসী বোলিংয়ের মুখে পড়ে ১৭০ রানে অলআউট হয় ভারত। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন ঋষভ পন্থ। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৪ উইকেট নেন সাউদি। ৩ উইকেট শিকার করেন বোল্ট। রিজার্ভ ডেতে ১৩৯ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৪ রানে দুই ওপেনারের উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। এরপরে আর কোনো উইকেট হারাতে হয়নি। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন রস টেইলরকে সঙ্গে নিয়ে ৯৬ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান।

টি-টোয়েন্টির শিরোপা খরা ঘুচল অস্ট্রেলিয়ার

ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপার স্বাদ পেলেও টি-টোয়েন্টির শিরোপা এতদিন ছুঁয়ে দেখা হয়নি ফিঞ্চ-ওয়ার্নারদের। ২০১০ বিশ্বকাপে শিরোপার কাছাকাছি গিয়েও হতাশ হতে হয়েছিল ক্যাঙ্গারু বাহিনীকে। তবে এবার আর সেটা হয়নি। মরুর বুকে নতুন ইতিহাস লিখেছে টিম অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ডকে কাঁদিয়ে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল তারা।

গেল ১৪ নভেম্বর দু্বাইয়ে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭২ রান তোলে কিউইরা। যদিও এটিই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড। এর আগে ২০১৬ সালের ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬১ করেও শিরোপা জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু এবার আর সেটি হতে দেননি অজি ব্যাটসম্যানরা। ১৭৩ রানকে মামুলি টার্গেট বানিয়ে প্রথমে ওয়ার্নার আর পরে মিচেল মার্শের ব্যাটিং তাণ্ডবে বলতে গেলে দাপট দেখিয়েই শিরোপা জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া।

অন্যদিকে, প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে আবারও আক্ষেপে পুড়ল নিউজিল্যান্ড। এর আগে ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ফাইনালে গিয়ে ইংলিশদের কাছে হারতে হয়েছিল কেন উইলিয়ামসনদের। বারবার কাছাকাছি গিয়েও শিরোপা অধরা থাকায় এরই মধ্যে ‘আন্ডারডগ’ তকমা মিলেছে কিউইদের। এবার কেন উইলিয়ামসনের লক্ষ্য ছিল সেই অপবাদ ঘুচানোর। কিন্তু দলের ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং ব্যর্থতায় এ যাত্রায় সেটি আর হলো কোথায়!

ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের আরাধ্য জয়

২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর দিনটা পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে রেকর্ড ১০ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপের মঞ্চে এর আগে ভারতের কোনো বিপক্ষে জয় ছিল না পাকিস্তানের। আর ওই জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। তার সঙ্গী হিসেবে ছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান।

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের দেওয়া ১৫১ রানের জবাব উদ্বোধনী জুটিতেই দিয়েছে পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে পাকিস্তান দুই ওপেনার বাবর আজম ৬৮ ও মোহাম্মদ রিজওয়ান ৭৯ রান করেছেন। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রান তোলে টিম ইন্ডিয়া। এদিকে ভারতকে হারানোর ম্যাচে বেশকিছু রেকর্ডও গড়ে পাকিস্তান। দুই উদ্বোধনী ব্যাটার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান গড়েন ১৫২ রানের অনবদ্য এক জুটি। তাতেই ভেঙে যায় বিশ্বকাপ ইতিহাসের ১৪ বছরের পুরনো এক রেকর্ড। যেটি এতদিন ছিল শুধু ক্যারিবিয়ান দুই কিংবদন্তি ক্রিস গেইল ও ডেভন স্মিথের নামের পাশে।

কোহলির নেতৃত্ব রোহিতের হাতে

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার আগেই এই সংস্করণে ভারতের নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন বিরাট কোহলি। আর তাই তার জায়গায় রোহিত শর্মার অধিনায়কত্ব পাওয়া একরকম নিশ্চিতই ছিল। বিশ্বকাপের পরপর দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তাই প্রত্যাশিতভাবেই টিম ইন্ডিয়াকে নেতৃত্ব দেন রোহিত। তবে এরপরই কোহলিকে সরিয়ে ওয়ানডের নেতৃত্বভারও রোহিতকে দেওয়া হয়। যা নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। এদিকে, সম্প্রতি কোহলির অধিনায়কত্ব ছাড়া ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থানে দেখা যায় ভারতের টেস্ট অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও দেশটির ক্রিকেট বোর্ড প্রধান সৌরভ গাঙ্গুলীকে।

যৌন কেলেঙ্কারিতে ক্রিকেট থেকে দূরে পেইন

যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব হারিয়েছেন টিম পেইন। ২০১৭ সালে ক্রিকেট তাসমানিয়ার এক নারীকর্মীকে যৌন উত্তেজক বার্তা পাঠিয়েছিলেন টিম পেইন। এ ঘটনার পর অধিনায়কত্ব তো হারিয়েছেনই পাশাপাশি তার ক্যারিয়ার নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছরের শুরুতেই হয়তো ক্রিকেট ছাড়তে হতে পারে তাকে।

এসএইচ-২৮/৩১/২১ (স্পোর্টস ডেস্ক)