বিশ্বকাপে দেখা যাবে না যেসব তারকা ফুটবলারকে

মোহামেদ সালাহকে এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা তারকাদের তালিকায় না রাখার সাহস হয়তো কেউ করবেন না। লিভারপুলের হয়ে এই মৌসুমে ইংলিশ লিগের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় তিনি। নরওয়ের ২১ বছর বয়সী তারকা আরলিং হালান্ডকে দলে ভেড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে ইউরোপের বড় সব ক্লাব। ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন জিয়ানলুইগি দোন্নারুমা। জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, জর্গিনহো, মার্টিন ওডেগার্ড, লুইস দিয়াজ, জ্যান ওবলাক, রিয়াদ মাহরেজ; এরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গায় বিশ্বের অন্যতম সেরা তারকা। ফুটবল মাঝে মাঝে খুব নির্মম হয়ে ওঠে। যেমন, কাতারে আসন্ন বিশ্বকাপে দেখা যাবে না এই তারকাদের।

নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হওয়া সবচেয়ে ব্যর্থ তারকা তর্কসাপেক্ষে মিসরের মোহামেদ সালাহ। লিভারপুলের হয়ে তার ফর্ম সেই আক্ষেপ বাড়িয়ে দিচ্ছে আরও। তবে তিনি একমাত্র নন এই তালিকায়। বরং বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি এমন তারকাদের তালিকায় চোখ বুলালে চোখ কপালে উঠতে ব্যর্থ।

১. জিয়ানলুইগি দোন্নারুমা (ইতালি): কয়েক মাস আগেও যদি কাউকে বলা হতো, এবার বিশ্বকাপে ইতালি খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে না, তবে হয়তো আপনাকে পাগল বলে বসত সবাই। তবে এটাই বাস্তবতা। ইউরোজয়ী ইতালি রাশিয়ার পর কাতারেও বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই বিশ্বকাপে দেখা যাবে না ইউরো ২০২০-এর টুর্নামেন্ট সেরা নির্বাচিত হওয়া ইতালিয়ান গোলরক্ষক দোন্নারুমাকে।

২.জ্যান অবলাক (স্লোভেনিয়া): অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের স্লোভেনিয়ান গোলরক্ষক তার প্রজন্মেরই অন্যতম সেরাদের একজন। তবে জাতীয় দলে ভাগ্য তার খুব একটা ভালো নয়। স্লোভেনিয়া ইউরোপের কোনো ফুটবল পরাশক্তি নয়। যুগোস্লাভিয়া ভেঙে স্বাধীন হওয়ার পর তারা বিশ্বকাপেই খেলেছে মোটে দুবার। কাতার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে নিজ গ্রুপে চতুর্থ হয়েছে স্লোভেনিয়া। তবে ২৯ বছর বয়সী অবলাক হয়তো আরও একটা সুযোগ পাবেন বিশ্বকাপ ভাগ্য পরীক্ষার। সে জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত।

৩. আলেসান্দ্রো ফ্লোরেঞ্জি (ইতালি): ইউরোজয়ী ইতালিকে ধরা হচ্ছিল কাতার বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট হিসেবে। দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ দলটায় আছে সময়ের অন্যতম সেরা কিছু খেলোয়াড়। ২০২০ ইউরোর অন্যতম সেরা পারফর্মারকে দেখা যাবে না কাতারে।

৪. ডাভিড আলাবা (অস্ট্রিয়া): রিয়াল মাদ্রিদে খেলা ডাভিড আলাবাও নেই বিশ্বকাপে। অস্ট্রিয়ান তারকা বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে সম্ভাব্য সবকিছু জিতে এখন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে মাতাচ্ছেন মাঠ। দারুণ ফুটবল খেলা আলাবার বিশ্বকাপ স্বপ্ন প্লে-অফ সেমিফাইনালে ভেঙে দিয়েছেন তার রিয়াল মাদ্রিদ সতীর্থ গ্যারেথ বেল। জোড়া গোল করে সার্বিয়াকে বিদায় করে দিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ দলে ব্রাত্য বেল।

৫. জর্জিও চিয়েলিনি (ইতালি): ইউরো ২০২০-এর অন্যতম আইকনিক দৃশ্যটির জন্ম দিয়েছিলেন ইতালির রক্ষণাত্মক ফুটবল শিল্পের শেষ প্রতিনিধি চিয়েলিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে বল নিয়ে স্প্রিন্ট করতে চাওয়া বাকায়োকো সাকাকে যেভাবে তিনি আটকেছেন, তা ছিল দেখার মতো দৃশ্য। প্রজন্মের অন্যতম সেরা এই ডিফেন্ডারকে দেখা যাবে না কাতারে। অবশ্য তাকে আর কখনো বিশ্বকাপে দেখার সম্ভাবনাও নেই। ২০২৬-এর বিশ্বকাপ আসতে আসতে যে এই ডিফেন্ডারের বয়স হয়ে যাবে ৪১!

৬. জর্গিনহো (ইতালি): গত বছরটা জর্গিনহো সোনা দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে চাইবেন নিশ্চিত। প্রথমে চেলসির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতলেন। এরপর ইতালির হয়ে জিতলেন ইউরো। যার কারণে ছিলেন ব্যালন ডি’অরের লড়াইয়েও। তবে বছর ঘুরতে না ঘুরতে নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতে পারেন ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত জর্গিনহো। ইতালির বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে বাদ পড়ার দায় তো কিছুটা জর্গিনহোরই। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস না করলে হয়তো প্লে-অফেই খেলতে হতো না ইতালির।

৭. মার্কো ভেরাত্তি (ইতালি): ইতালি বাদ পড়ায় বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখতে পাবেন না সময়ের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার মার্কো ভেরাত্তিকেও। অমত প্রতিভাধর এই মধ্যমাঠের আর্টিস্ট মাত্র একটি বিশ্বকাপেই খেলেছেন। ২০১৪ সালের সেই বিশ্বকাপে ইতালি বাদ পড়েছিল গ্রুপপর্বেই।

৮. আর্তুরো ভিদাল (চিলি): টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাছাইপর্ব উতরাতে পারেনি চিলি। তাই এবারও দেখা যাবে না বায়ার্ন মিউনিখ, জুভেন্টাস, বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলানের হয়ে খেলা এই মিডফিল্ডারকে। কাতার বিশ্বকাপ নিঃসন্দেহে মিস করবে ভিদাল ও তার বৈচিত্র্যপূর্ণ চুলের কাটকে।

৯. রিয়াদ মাহরেজ (আলজেরিয়া): ২০১৯ সালের আফকন বিজয়ী আলজেরিয়া ২০১৮-এর পর ২০২২ সালেও ব্যর্থ হয়েছে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব পার হতে। তাই বিশ্বকাপে দেখা যাবে না ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটিতে খেলা ‘ডেজার্ট ফক্স’ তারকাকে।

১০. আরলিং হালান্ড (নরওয়ে): বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা তরুণ প্রতিভা বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে খেলা নরডিক তারকা আরলিং হালান্ড। ২০১৯ সালে এই ২০ বছর বয়সী তারকার উত্থান ঘটে রেডবুল সালজবার্গের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোলের বন্যা বইয়ে দিয়ে। তারপর থেকে তার পেছনে লাইন দিয়ে আছে ইউরোপের জায়ান্ট ক্লাবগুলো। তবে তার দল নরওয়ে ব্যর্থ হয়েছে বাছাইপর্ব উতরাতে।

১১. মার্টিন ওডেগার্ড (নরওয়ে): রিয়াল মাদ্রিদ ওডেগার্ডকে কিনেছিল অনেক আশা নিয়ে; কিন্তু প্লেয়িং টাইম দিতে না পারায় তিনি পাড়ি দিয়েছেন ইংল্যান্ডে। মিকেল আরতেতার দলের অন্যতম কি-প্লেয়ারে পরিণত হওয়া নরওয়ে অধিনায়ক ওডেগার্ড বিশ্বকাপের সময় সতীর্থ হ্যালান্ডকে নিয়ে টিভির সামনে বসতে পারেন পপকর্ন হাতে।

১২. জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ (সুইডেন): ‘যত গর্জে তত বর্ষে না’ প্রবাদটি সত্য ইব্রাহিমোভিচের জন্য। বাগাড়ম্বরে যতটা পটু ইব্রা, দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে ব্যর্থ হতেও ততটাই। তাই প্লে-অফ ফাইনালে আবার হেরেছে সুইডেন। তার চেয়ে সেরা কেউ বিশ্বকাপে নেই, এ হতাশায় বিশ্বকাপটাই হয়তো আর দেখবেন না ইব্রা।

১৩. মোহামেদ সালাহ (মিসর): আফকনের পর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও বন্ধু ও সতীর্থ সাদিও মানের কাছে হেরে গেছেন মোহামেদ সালাহ। সেনেগালের বিপক্ষে পেনাল্টি মিসের খেসারত দিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হলো সালাহকে। তার অবর্তমানে কিছুটা হলেও বিবর্ণ হবে বিশ্বকাপ। গতবার শেষ মুহূর্তের গোলে মিসরকে নিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বকাপে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পাওয়া চোটে বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি খুব একটা। সে দুঃখ ভোলার উপলক্ষ্য হতে পারত এবারের কাতার বিশ্বকাপ। কিন্তু এবার সালাহ নিজেই খলনায়ক।

এ ছাড়াও এবার বিশ্বকাপে দেখা যাবে না আরও অনেক তারকাকে। তুরস্কের হাকান চলহানুগুলু, বুরাক ইলমাজ, চেঙ্গিজ উন্ডার, ইতালির লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে, ফ্রেদারিকো চিয়েসা, লুকাতেল্লি, বাস্তনি, নাইজেরিয়ার ভিক্টর ওসিমেন, আইভরি কোস্টের ফ্রাঙ্ক কেসিয়ে, উইলফ্রেড জাহা, গ্যাবনের পিয়েরে এমরিক উবামেয়াং, চিলির আলেক্সিস সানচেজ, কলম্বিয়ার লুইস দিয়াজ, হামেস রদ্রিগেজ, দুভান জাপাতা, সার্বিয়ার সার্জ মিলানকোভিচ-স্যাভিচ, চেক প্রজাতন্ত্রের প্যাট্রিক সাচিকসহ অনেককেই বিশ্বকাপে মিস করবেন দর্শকরা।

এসএইচ-১০/৩১/২২ (স্পোর্টস ডেস্ক)