রোনালদো নিজেকে দেবতা ভাবেন!

কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। দলের সঙ্গে সঙ্গে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সময়টাও ভালো যাচ্ছে না। সর্বশেষ ম্যাচে অবনমন অঞ্চলের ঠিক ওপরে থাকা এভারটনের বিপক্ষেও জিততে পারেনি রেড ডেভিলরা। গুডিসন পার্কে ১-০ গোলে হেরে গেছে রোনালদো-রাশফোর্ডদের দল। ম্যাচ শেষে রক্তাক্ত পায়ে মাঠ ছাড়ার সময় রোনালদো ঘটিয়েছেন অঘটন। অপ্রাপ্তবয়স্ক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এক সমর্থকের গায়ে হাত তুলে কঠিন সমালোচনার মুখে পড়েছেন রোনালদো। এরই মধ্যে মুখ খুললেন লিভারপুলের সাবেক তারকা হোসে এনরিক। তিনি বললেন, রোনালদো নিজেকে দেবতা মনে করেন তাই যা খুশি তাই করতে চান।

শনিবার এভারটনের বিপক্ষে হারের পর রোনালদো হারের ঝাল মেটান ১৪ বছর বয়সী বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কিশোর জেক হার্ডিংয়ের হাতে থাকা সেলফোনের ওপর। ম্যাচ শেষে মাঠ ছাড়ার পথে গ্যালারি থেকে এই কিশোর ভিডিও করছিলেন রোনালদোদের। কিন্তু বিষয়টি মোটেই পছন্দ হয়নি ৫ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ীর। তাই কোনো ধরনের সতর্কবার্তা না দিয়েই আচমকা ফোন টেনে মেঝেতে আছাড় মেরে গুঁড়ো গুঁড়ো করে দেন তিনি। এতে সেই কিশোরের হাতেও আঘাত লাগে।

এ নিয়ে তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন রোনালদো। এরই মধ্যে রোনালদোর সমালোচনায় মুখর হলেন লিভারপুলের সাবেক ফুটবলার হোসে এনরিক। ২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত লিভারপুলে খেলা এই স্প্যানিশ লেফটব্যাক বলছেন , তিনি রোনালদোকে অপছন্দ করেন কারণ রোনালদো নিজেকে দেবতা মনে করেন।

সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এনরিক বলেন, ‘আমি এটা সবসময় বলি। সে নিজেকে দেবতা মনে করেন এবং যা খুশি তাই করতে চান। আমি তাকে পছন্দ করি না।’

অবশ্য মানুষ রোনালদোকে অপছন্দ করলেও খেলোয়াড় হিসেবে রোনালদোকে খাটো করে দেখছেন না এনরিক। তাকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা মেনে নিতে তার আপত্তি নেই। তিনি বলেন, ‘এতে এটা মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে না যে, রোনালদো ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ফুটবলার, তবে তাকে ব্যক্তি হিসেবে আমি অপছন্দ করি।’

এদিকে সেদিনের ঘটনার জন্য নিজের ইনস্টাগ্রাম থেকে ক্ষমা চেয়েছেন পর্তুগালের অধিনায়ক। তিনি লিখেছেন, ‘আমরা যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তাতে নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব একটা সহজ নয়। তারপরও আমাদের শ্রদ্ধাপূর্ণ ও ধৈর্যশীল হতে হবে এবং তারুণ্যের জন্য উদাহরণ তৈরি করে যেতে হবে, যারা এই খেলাটিকে ভালোবাসে।

আমি আমার এই অনাকাঙ্ক্ষিত মেজাজ হারানোর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং, যদি সম্ভব হয়, ফেয়ার-প্লে ও ক্রীড়াসুলভ মানসিকতা থেকে আমি সেই সমর্থককে আমন্ত্রণ জানাতে চাই এখানে ওল্ড ট্রাফোর্ডে এসে খেলা দেখে যেতে ।’

তবে ক্ষমা চাইলেই পার পাচ্ছেন না রোনালদো। ইতিমধ্যে ইংলিশ ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘এফএ’ দ্য অ্যাথলেটিককে জানিয়েছে, আমরা এই ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছি এবং দুই ক্লাব ও জড়িত খেলোয়াড়টির মন্তব্য জানতে চেয়েছি।

এদিকে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে মার্সিসাইড পুলিশ। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ‘ দিনের ২.৩০ এর দিকে সফরকারী দল মাঠ ছাড়ার সময় তাদের এক খেলোয়াড়ের দ্বারা একজন বালক নিগ্রহের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ এসেছে। তদন্ত চলছে এবং এই মুহূর্তে আমরা এভারটনের সঙ্গে সিসিটিভি ফুটেজ রিভিউ করছি এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখছি সেখানে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল কি না।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন জেক হার্ডিংয়ের মা সারাহ কেলি। লিভারপুল ইকোকে তিনি জানান, ‘আমার ছেলে হেঁটে যাওয়া ইউনাইটেড খেলোয়াড়দের ভিডিওচিত্র ধারণ করছিল। তখন সে তার ফোন নিচু করে ধরেছিল কারণ রোনালদো তার মোজা টেনে নামাচ্ছিল এবং তার পা থেকে রক্ত ঝরছিল। সে তার ফোন নামিয়েছিল কারণ বুঝতে চাচ্ছিল, সেখানে কী হয়েছে – এমনকি সে কথা পর্যন্ত বলেনি।

রোনালদো হেঁটে চলে গেল, খুবই, খুবই রাগত মেজাজ নিয়ে এবং আমার ছেলের হাত থেকে ফোনটি কেড়ে নিয়ে আছড়ে গুঁড়ো করে ফেলে চলে গেল।’

রোনালদো যে এত সহজে ছাড় পাচ্ছে না বোঝা যাচ্ছে সারাহ’র পরের কথায়, সে একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বালক এবং সে একজন ফুটবলারের আক্রমণের শিকার হয়েছে, একজন মা হিসেবে আমি এভাবেই দেখছি।’

এসএইচ-২৩/১২/২২ (স্পোর্টস ডেস্ক)