ম্যারাডোনার মৃত্যুরহস্যে নতুন মোড়

আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুর প্রায় দেড় বছর কেটে গেছে; কিন্তু বিতর্ক এখনো কাটেনি। এবার এ ঘটনায় নতুন মোড় নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার ফক্স স্পোর্টসের প্রতিবেদনে জানা গেছে, ফুটবলের রাজপুত্রের মৃত্যু নিয়ে তদন্তে চিকিৎসায় অবহেলা করা চিকিৎসকদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। তাদের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার বড়সড়ো অভিযোগ তোলা হয়েছে। দোষী প্রমাণ হলে অপেক্ষা করছে কড়া শাস্তি।

স্থানীয় সময় বুধবার আইনজীবীরা আট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অব্যবস্থা এবং দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তোলেন। তাদের অভিযোগ, ম্যারাডোনাকে অসহায়ের মতো ফেলে রাখা হয়েছিল এবং তার পরিস্থিতি ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে তিনি কোনো সাহায্য না পেয়েই মারা গিয়ে থাকতে পারেন।

মস্তিষ্কে রক্ত জমাটবাঁধার কারণে ২০২০ সালের নভেম্বরের শুরুর দিকে তার অস্ত্রোপচার হয়। এর আট দিন পর ১১ নভেম্বর হাসপাতাল থেকে তিনি ছাড়া পান। এরপর নিয়মিত স্থানীয় ক্লিনিকে থেরাপি এবং একই সঙ্গে বাসায় তার চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু হাসপাতাল থেকে ফেরার দুই সপ্তাহের মধ্যে আকস্মিক হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই বছরের ২৫ নভেম্বর ৬০ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ‘ফুটবল ইশ্বরের’।

তার পরই তার পারিবারিক ডাক্তার লিয়োপোল্ড লিউক এবং মনোবিদ অগাস্টিনা কোসাচভের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়াও কার্লোস দিয়াজ ও ন্যান্সি ফলিনির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

বলা হয়েছে, তাদের চিকিৎসা পদ্ধতিতে অবহেলা রয়েছে, যেখানে তারা জানতেন যে মুহূর্তের অসতর্কতা কারও মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। অভিযোগ প্রমাণ হলে ৮ থেকে ২৫ বছরের জেল হতে পারে ওই চিকিসৎকদের।

ম্যারাডোনা ছিলেন আর্জেন্টিনার ফুটবলের দর্শন বদলে দেওয়া এক ব্যক্তিত্ব। তার হাত ধরে আর্জেন্টিনা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জেতে। বলা হয়ে থাকে, ছিয়াশির বিশ্বকাপে মেক্সিকোয় একাই দেশকে বিশ্বকাপের স্বাদ এনে দেন আরমান্ডো ম্যারাডোনা। ক্লাব ফুটবলেও ম্যারাডোনা ছিলেন অনবদ্য। ইতালির অখ্যাত এক ক্লাব নাপোলিকে ইউরোপ মঞ্চের ট্রফি এনে দেন তিনিই, জিতিয়েছেন লিগ শিরোপাও।

ম্যারাডোনা খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় জানানোর পর করিয়েছেন কোচিংও। আর্জেন্টিনা ছাড়াও তিনি আরও সাতটি দলের দায়িত্ব সামলেছেন। অবশ্য কোচিং ক্যারিয়ারে খুব বেশি সফল ছিলেন না তিনি। তার জীবনের সবচেয়ে বড় ঘটনা ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে।

সেবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে পিটার শিল্টনের ওপর দিয়ে হাতে একটি গোল করেন আর্জেন্টাইন ফুটবলার। ইংল্যান্ড ম্যাচটি হারে ২-১ গোলে। পরে ম্যারাডোনা গোলটি হাত দিয়ে দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেন। সেই ম্যারাডোনাকে যদি অবহেলার কারণে মরতে হয়, তবে আর্জেন্টাইন তথা সমগ্র বিশ্বের মানুষ বিচারের দাবি তো করবেনই!

এসএইচ-২৯/১৪/২২ (স্পোর্টস ডেস্ক)