সতেরো পেরিয়ে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ১৭ বছর পূরণ করলেন মুশফিকুর রহিম। ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসে ২০০৫ সালের এই দিনেই সাদা পোশাকে প্রথমবার মাঠে নেমেছিলেন মুশি। সেই থেকে আজ অবধি বাংলাদেশ একাদশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য তিনি। অধিনায়কত্ব করেছেন ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই। উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে টেস্টে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি, পকেট ডায়নামোকে দিয়েছে অমরত্ব। সেদিনের সেই ছোট্ট মুশির এত এত অর্জনে আজ সমর্থকদের মতোই গর্বিত তার পরিবারের সদস্যরাও। তাদের আশা, মুশফিকের পরিশ্রম এবং আত্মনিবেদন আদর্শ হয়ে থাকবে ভবিষ্যতের জন্য।

২৬ মে ২০০৫। ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসের বারান্দা দিয়ে নেমে এলেন সদ্যই কৈশোর ছাড়ানো এক ব্যাটার। বয়সের মতো উচ্চতাও ছিল বেশ কম, তাই প্রতিপক্ষের দুয়ো ধ্বনিও শুনতে হয়েছে একটা সময়। কিন্তু ব্যাট হাতে তিনি যে রাজত্ব করবেন অনেকটা দিন, তার ছাপ দেখাতে ভোলেননি হগার্ড-হার্মিসন-ফ্লিনটফদের।

এরপর বছর না ঘুরতেই হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে এবং খুলনায় টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়ে যায় মুশির। সেই থেকে তিনি চলছেন তো চলছেন। দীর্ঘ এই সময়ে সবচেয়ে জুনিয়র ক্রিকেটার থেকে হয়ে উঠেছেন লাল-সবুজের ড্রেসিংরুমের নির্ভরশীল এক চরিত্রে। ইনজুরি বা পারবারিক কারণে ছুটিতে না থাকলে একাদশ থেকে বাদ পড়তে হয়নি কখনো।

লম্বা এই ক্যারিয়ারে তিন ফরম্যাটেই নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশকে। উইকেটের পেছনে থেকে সামলেছেন গুরুদায়িত্ব। কিছু সমালোচনার কারণে আপাতত সাদা পোশাকে উইকেটরক্ষকের ভূমিকায় দেখা না গেলেও রঙিন পোশাকে এখনো তিনি অপ্রতিরোধ্য।

দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে ৮২ টেস্টে ৫ হাজারের বেশি রান আছে মুশির। যেখানে ৯ সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে দেশের সর্বোচ্চ তিনটি ডাবল টোন। ওয়ানডে খেলেছেন ২৩৩টি, রান সাড়ে ৬ হাজারের বেশি। আর ৮ সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে ৪১টি ফিফটি। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নেমেছেন ১০০ বার। রান ১৪৯৫। সাদা পোশাকে ১২৩টি ডিসমিসাল আছে মুশির নামের পাশে। ওয়ানডেতে সে সংখ্যা ২৫০, আর টি-টোয়েন্টিতে ৭১।

নানা উত্থানপতনের মধ্য দিয়ে চলা এ ক্যারিয়ারের সংখ্যাগুলো এখন গর্বিত করে তার পরিবারকেও।

মুশফিককে নিয়ে গর্বিত পিতা মাহবুব হাবিব। তারার সরল স্বীকারোক্তি, ‘যে ডেডিকেশন, এটায় অনেক সময় আমরাই হোপলেস হয়ে যাই। তবে এই (অধ্যবসায় নিয়ে) হিসেবে আমরা প্রাউড ফিল করি মুশফিকের কারণে। আর অনেক সময় আপনারা জিজ্ঞাসা করেন: আমি বাবা হিসেবে ওর পেছনে ভূমিকা রেখেছি কি না? নিঃসন্দেহে ‘না’, মুশফিক হিমসেলফ ক্রিয়েটেড হিম। ও যে এতদূর আসছে, এটা নিজের চেষ্টাতেই আসছে। এটায় আমাদের ফ্যামিলির যে খুব একটা অবদান আছে, তা আমি মনে করি না। তবে আমরা খুব আশাবাদী, সে যে একজন এক্সট্রাঅর্ডিনারি খেলোয়াড়, এটা সে প্রমাণ করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।’

লম্বা এ ক্যারিয়ারে এখনো প্রতিদিন একই রকম মনোযোগী মুশফিক। সবার আগে অনুশীলনে এসে, যান দলের সবাই চলে যাওয়ার পর। যে নিবেদন অবাক করে তার সমর্থক ও পরিবারের সদস্যদের। সবার আশা, তার এই একাগ্রতা এবং পরিশ্রম নিদর্শন হয়ে থাকবে আগামীর জন্য।

মাহবুব হাবিব আরও বলেন, ‘মৃত্যু কাউকে বাদ দেবে না। ওর খেলোয়াড়ি জীবনেরও একটা মৃত্যু হবে। তবে আমি মনে করি, ও ইন্সট্যান্স (দৃষ্টান্ত) রেখে যাবে, যা তার পরবর্তী প্রজন্ম যেন মনে রাখে–মুশফিক নামে একজন খেলোয়াড় ছিল, যে নিবেদিতপ্রাণ ছিল ক্রিকেটের জন্য, দেশের জন্য।’

মুশফিকের এখনো দলকে দেওয়ার আছে অনেক কিছুই, এমনটাই মনে করেন দেশের ক্রীড়ামোদী জনতা। ক্রিকেটের জন্য তার নিবেদন এখনো টিকিয়ে রেখেছে তাকে। একটা প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব অনেকটা একাই করে চলেছেন মুশফিক। কারণ, এ মুহূর্তে ক্রিকেট খেলছে এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে, বিশ্ব ক্রিকেটের মুশফিকের চেয়ে সিনিয়র আছেন আর একজন, ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে দাঁড়ানো জিমি অ্যান্ডারসন।

এসএইচ-০৭/২৬/২২ (স্পোর্টস ডেস্ক)