কষ্টার্জিত জয়ে ফাইনালে পাকিস্তান, বিদায় ভারত

পাকিস্তানের জয় দিয়ে দুইটা প্রশ্নের উত্তর পেল এশিয়া কাপ। প্রশ্ন ‍দুটি ছিল- ফাইনালে খেলবে কারা, বিদায়ই বা নেবে কোন দুটি দল। আফগানদের বিপক্ষে ১ উইকেটে জয় পাওয়ায় ফাইনালে উঠেছে পাকিস্তান, শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। এক ম্যাচ বাকি থাকা সত্ত্বেও টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে ভারত ও আফগানিস্তানের।

রাজকীয়ভাবে এশিয়া কাপ শুরু করা নবি বাহিনীর ব্যাটিং লাইনআপ শারজাহর স্পিনিং উইকেটে ভেঙে পড়ে তাসের ঘরের মতো। পরে আফগানিস্তানের বোলাররাও জয়ের জন্য সবটুকুই দিয়েছিলেন। তাদের হার মানতে হয় পাকিস্তানের মিডল অর্ডারের ব্যাটারদের কাছে, শেষে নাসিম শাহের টানা দুই ছয়ের কাছে। মিডল অর্ডারে শাদাব খান ৩৬ ও ইফতিখার আহমেদ ৩০ রান করেন।

শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার ১৩০ রান ডিফেন্ড করতে নেমে আফগানিস্তানকে দারুণ শুরু এনে দেন ফজলহক ফারুকী। প্রথম ওভারেই শূন্য রানে তিনি ফেরান বাবর আজমকে। সবশেষ চার ম্যাচে বাবরের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ১৪। ফজলহক ওই ওভারে দেন ৬ রান। টাইট বোলিং করেন মুজিব উর রহমানও। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে তিনি খরচ করেন মাত্র ২ রান। ফখর জামান বিদায় নেন নাজিবউল্লাহর ‍অসাধারণ এক থ্রোয়ে। ৯ বলে মাত্র ৫ রান করেন তিনি।

পাকিস্তানের যে মনোভাব, তাতে মনে হচ্ছিল স্পিনারদের রয়ে-সয়ে সামলে পেসারদের পেটাবে। ইনিংসের ৯ ওভার শেষে আফগান স্পিনার ও পেসারদের ইকোনমি যে ছিল সে রকমই। পেসারদের ৮ বা তার বেশি ইকোনমি থাকলেও স্পিনারদের মধ্যে কেউই ৪-এর বেশি রেটে রান দেননি। এরইমাঝে মোহাম্মদ রিজওয়ানের উইকেট তুলে নেন রশিদ খান। রশিদের বলে রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি পাকিস্তানি কিপার, প্যাভিলিয়নে ফেরেন ২৬ বলে ২০ রান করে।

জয়ের জন্য যা দরকার ছিল, শাদাব খান আর ইফতিখার আহমেদ মিলে সেটাই করে দিয়ে যান। ইফতিখার ১০০-এর নিচে স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করলেও শাদাব খেলেন প্রায় ১৪০- স্ট্রাইক রেটে। দুজনের মধ্যে ইফতিখারকে ফরিদ আহমেদ ও শাদাবকে রশিদ খান আউট করেন। খেলা জমে উঠে খুশদিল শাহ আউট হয়ে গেলে। ফজলহক ফারুকীর বলে আউট হন খুশদিল। হারিসকে ফেরান ফরিদ। আসিফ আলি শর্ট বল পেটাতে গিয়ে দলকে বিপদের মধ্যে ফেলে মাঠ ছাড়েন। ৮ বলে তিনি করেন ১৬ রান।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারে মাত্র ৪ রান তুললেও পরের ওভারে তা পুষিয়ে নেয় আফগানিস্তান। মোহাম্মদ হাসনাইনের করা ওভারে ১৬ রান তোলে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও হযরতউল্লাহ জাজাঈ জুটি। নাসিম শাহর পরের ওভারে আসে ৭ রান। চতুর্থ ওভার করতে এসে প্রথম দুই বলে মাত্র ২টি চার হজম করেন হারিস রউফ। পরের বলে তিনি জাজাঈয়ের উইকেট নিয়ে নিতে পারতেন, যদি-না নাসিম শাহ থার্ডম্যান অঞ্চলে ক্যাচটি মিস করতেন। তবুও উইকেটের জন্য ১ বলের বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি পাকিস্তানি ফাস্ট বোলারকে। এক বল বিরতিতে তিনি তুলে নেন গুরবাজের উইকেট। ১১ বলে ১৭ রান করে আউট হন আফগান ওপেনার।

হাসনাইন পরের ওভারে শিকারে পরিণত করেন জাজাঈকে। জাজাঈ ১৭ বলে করেন ২১ রান। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে চারে খেলতে নেমে সব লাইমলাইট কেড়েছিলেন মোহাম্মদ নেওয়াজ। ঠিক তার পজিশনেই খেলতে নেমেছিলেন করিম জানাত। তবে তিনি নেওয়াজের মতো বাজিতে জিততে পারেননি। বরং আফগানদের রানের চাকাটা তার জন্যই কিছুটা মন্থর গতির হয়ে যায়। নেওয়াজের বলে ফেরার আগে ১৮ বলে ১৫ রান করেন তিনি।

আফগানিস্তানের মিডলঅর্ডারের বড় শক্তি নাজিবউল্লাহ জাদরান ও মোহাম্মদ নবি। এদিন এ দুজন ব্যর্থ হন বাজেভাবে। ১১ বলে জাদরান ১০ ও নবি গোল্ডেন ডাকে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। পাঁচ উইকেট চলে গেলেও ভরসা হয়ে ক্রিজে ছিলেন ইব্রাহিম জাদরান। তিনি দলের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি খেললেও আউট হয়ে যান ১৭তম ওভারে। ৩৭ বলে ৩৫ রান করেন এ তারকা।

শেষ দিকে আজমতউল্লাহ ওমরজাঈয়ের ১০ ও রশিদ খানের ১৮ রানে ভর করে ৬ উইকেট হারিয়ে ১২৯ রান করে আফগানিস্তান। পাকিস্তানের হয়ে হারিস নেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট পান নাসিম শাহ, হাসনাইন, নেওয়াজ ও শাদাব খান।

এসএইচ-২৫/০৭/২২ (স্পোর্টস ডেস্ক)