জিকোকে নিয়ে কোচের এক মত, ভিন্নমত অন্যদের

সময়ের পরিক্রমায় দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো এখন বাংলাদেশ দলের তৃতীয় গোলরক্ষক। গতকাল (মঙ্গলবার) কিংস অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে গোলরক্ষক মিতুল মারমা আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন। রিজার্ভ বেঞ্চে অভিজ্ঞ গোলরক্ষক জিকো থাকলেও, কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা মাত্র এক ম্যাচ খেলা মেহেদী হাসান শ্রাবণকে নামান।

মিতুল যখন মাঠ ছাড়েন তখন ম্যাচের ৮৩ মিনিট। স্কোরলাইন ছিল ০-০। র‌্যাঙ্কিংয়ে ৮৬ ধাপ এগিয়ে থাকা ফিলিস্তিনের বিপক্ষে এক পয়েন্ট হাতের মুঠোয় ছিল বাংলাদেশের। অথচ স্বাগতিকরা ইনজুরি সময়ের পঞ্চম মিনিটে রক্ষণের এক ভুলে গোল হজম করে শূন্য হাতেই ফিরেছে। এই গোলের পেছনে ভুল গোলরক্ষক নির্বাচনকে চিহ্নিত করেছেন জাতীয় দলের সাবেক গোলরক্ষক ছাইদ হাসান কানন, ‘শ্রাবণ অত্যন্ত নতুন। তার পক্ষে এত চাপের মুহূর্তে খেলা দুরূহ ছিল। সে নামার পরপরই একটি সাধারণ ফ্লাইট মিস করেছে। সেখান থেকেই ডিফেন্সের মধ্যে অতিরিক্ত চাপ ও নড়বড়ে ভাব এসেছে। গোলপোস্টের নিচে অভিজ্ঞ ও ভালো গোলরক্ষক থাকলে ডিফেন্সও খানিকটা নির্ভার থাকতে পারে। ভুল গোলরক্ষক নির্বাচন কালকের হারের অন্যতম কারণ।’

আরেক সাবেক গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য্য জাতীয় দলেও গোলরক্ষক কোচ ছিলেন। জিকোর পরিবর্তে শ্রাবণকে নামানোর যৌক্তিকতা দেখেন না তিনিও, ‘খেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে অভিজ্ঞ জিকোকেই নামানো উচিৎ ছিল। গোলকিপিং শুধু গোল ঠেকানো নয়, দলকে নেতৃত্ব দেওয়াও। গোলরক্ষক পেছন থেকে ডিফেন্ডারদের অবস্থান দেখে সতর্ক করতে পারেন। জিকো থাকলে হয়তো এমন পরিস্থিতি নাও হতে পারতো।’

একাদশ গঠন ও খেলোয়াড় পরিবর্তনের দায়িত্ব প্রধান কোচের। তবে গোলরক্ষক নির্বাচন বা বদলের ক্ষেত্রে গোলরক্ষক কোচের বড় ভূমিকা থাকে। তাই সাবেক গোলরক্ষক ছাইদ হাসানের কাঠগড়ায় গোলরক্ষক কোচও, ‘একাদশে কোন গোলরক্ষক খেলবে এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে গোলরক্ষক পরিবর্তন করতে হলে সেটা গোলরক্ষক কোচের মাধ্যম হয়েই প্রধান কোচের কাছে যাওয়ার নিয়ম। জানি না জাতীয় দলে কি অনুসরণ করা হয়!’

শ্রাবণকে নামানো নিয়ে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় দলের স্প্যানিশ হেডকোচ ক্যাবরেরাকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। সেই ব্যাখায় জিকো এখন তিন নম্বর গোলরক্ষক সেটাই প্রকারান্তরে বুঝিয়েছেন হ্যাভিয়ের। কোচের এমন মন্তব্যে ব্যথিত জাতীয় দলের সাবেক গোলরক্ষক কোচ বিপ্লব, ‘জিকো একদিনে তৈরি হয়নি। জিকো এই বয়সে যদি তৃতীয় গোলরক্ষক হয়ে যায়, তাহলে কিছুদিন পর হারিয়ে যাবে। যা আমাদের দেশের ফুটবলের জন্য বড় ক্ষতিকর।’

গোলরক্ষক ফুটবলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জাতীয় দলে স্থায়ী গোলরক্ষক কোচ নেই। ম্যাচ/টুর্নামেন্টের আগে বিদেশি গোলরক্ষক কোচ এসে কাজ করছেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক কোচ মিগেল এনজেল। গোলরক্ষক কোচ সাময়িক ভিত্তিতে কাজ করায় গোলরক্ষকদের অনেক তথ্যের ঘাটতি থাকা স্বাভাবিক। তাই সাবেক গোলরক্ষক কানন বিদেশি গোলরক্ষক কোচের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘বিদেশি কোচিং স্টাফের পেছনে হাজার হাজার ডলার ব্যয় করে আমাদের ফুটবল কি পেল, সেটা এখন ভাবার সময় এসেছে।’

জাতীয় দল ও বসুন্ধরা কিংসের নিয়মিত গোলরক্ষক ছিলেন আনিসুর রহমান জিকো। গত বছর সেপ্টেম্বরে বসুন্ধরা কিংসের হয়ে এএফসি কাপ খেলে মালদ্বীপ থেকে ফেরার পথে মদকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ওই অপরাধে বসুন্ধরা কিংস ৩১ মার্চ পর্যন্ত তাকে নিষিদ্ধ করে। এজন্য জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অক্টোবর ও নভেম্বরের ম্যাচ মিস করেন জিকো। ডিসেম্বরে কিংস নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলে মার্চ উইন্ডোতে তিনি আবার জাতীয় দলে ফিরেছেন। মিতুল মারমা লেবাননের বিপক্ষে ও অনুশীলনে ভালো করায় তিনি এই মার্চ উইন্ডোতে প্রথম একাদশে ছিলেন। কিন্তু মিতুলের কালকের অসুস্থতায় জিকোর পরিবর্তে শ্রাবণকে নামিয়ে বড় প্রশ্নের মুখে কোচ হ্যাভিয়ের।

হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা জাতীয় দলে কোচ হয়ে আসার পর থেকে ফুটবলাঙ্গনে গুঞ্জন, তিনি বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজনের মাধ্যমে প্রভাবিত। সাম্প্রতিক সময়ে দল নির্বাচন এবং খেলোয়াড় পরিবর্তনেও সেই গুঞ্জন আরও জোরালো হয়েছে ফুটবলাঙ্গনে। খোদ বাফুফে সভাপতিও এটি মনে করছেন বলে জানা গেছে বিশ্বস্ত সূত্রে। কোচ নিয়ে সভাপতির সমালোচনামূলক মন্তব্য এরই বহিঃপ্রকাশ বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

এসএ-০৯/২৭/২৪(স্পোর্টস ডেস্ক)