কোটি কোটি টাকা পাচার অ্যাপে!

নানা উদ্যোগেও যখন বাড়ানো যাচ্ছে না দেশের রিজার্ভে ডলারের যোগান; তখন আবার বাড়ছে ডিজিটাল হুন্ডির প্রবণতা। অ্যাপের মাধ্যমে অর্থপাচারের এ পথকে খুবই নিরাপদ, লাভজনক ও সময় সাশ্রয়ী হিসেবে বিবেচনা করেন ব্যবহারকারীরা।

অর্থপাচারের নতুন নতুন পথ যখন উন্মুক্ত হচ্ছে অবিরাম, তখন গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি (জিএফআই) ও সুইস ব্যাংকের তথ্য, দেশ থেকে অর্থপাচারের প্রবণতা বাড়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী জানান, ‘আমরা সারাদিন বলছি টাকা পাচার হচ্ছে, টাকা পাচার হচ্ছে। কোথাও কোন ফুটপ্রিন্ট নাই। কোন ব্যাংক বলতে পারছে না। কেউ তো প্লেনে বস্তা ভরেও টাকা নিয়ে যায়নি। তাহলে টাকা গেল কিভাবে?’

টাকা পাচার কীভাবে হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অ্যাপের মাধ্যমে দুকোটি তিন কোটি টাকা নিয়ে এয়ারপোর্ট পাস করে গেল, ফোনের মধ্যে কতো কোটি টাকা নিয়ে গেল – তা বোঝার উপায় নেই।

তল্লাশি বা গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দেয়া কি এতোটাই সহজ – জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘অ্যাপ আনইস্টল করে গেলাম। ওই দেশে গিয়ে আবার ইন্সটল করে লগইন করলাম। আইডি পাসওয়ার্ড তো আমার কাছেই। আমার টাকা আমার কাছেই আছে। আমার ক্লাউড মানি, আকাশে থাকছে। যখন দরকার, টাকা তখন বের করে নিচ্ছি। রিস্ক ফ্রি একদম।’

এভাবে কতো টাকা পাচার হচ্ছে বা কতো টাকা আসছে, তা হয়তো জানা সম্ভব নয়। তবে অ্যাপে কীভাবে টাকা ঢুকে ডলার হচ্ছে আর ডলার কীভাবে টাকা হয়ে বের হচ্ছে, এ প্রসঙ্গে এ প্রকৌশলী জানান, ‘মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে। সবাই যে যার মতো ডলার করে রেখে দিচ্ছে নিজের টাকা নিজের কাছে। আমার টাকা আমি কেন রাখতে যাবো ব্যাংকে-বুথে। আমিই একজন ব্যাংক ম্যানেজার।’

ডিজিটালি এ অর্থপাচার বন্ধের কি কোন উপায় সম্পর্কে তিনি জানান, ‘মডার্ন টেকনোলজি বা ইনোভেশনগুলো অ্যাডাপ্ট করতে হবে। সেখানে চাইলে সরকার ট্যাক্স বসাতে পারে।’

কোন কোন অ্যাপের মাধ্যমে এভাবে অবৈধপথে অর্থের লেনদেন হচ্ছে – ব্যাধিই সংক্রমক স্বাস্থ্য নয় নীতিতে তা দেখানো হলো না। তবে, দেশের রিজার্ভ শক্তিশালী করতে এমন সব গেম চেঞ্জার অ্যাপের বিকল্প বের করার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রযুক্তিবিদরা।

তথ্য প্রযুক্তিবিদ সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, স্থানীয়ভাবে এখন হুন্ডি ব্যবসা যেভাবে হচ্ছে সেটিকে পজিটিভভাবে নিয়ে এ ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। এজন্য বিভিন্ন এজেন্সি ও বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর সাহায্যে সহজে টাকা লেনদেনের কোন প্রক্রিয়া তৈরি করা যেতে পারে।

পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিতে সুবিধা করতে না পারলে খেলাপি ঋণসহ অবৈধ অর্থ উপাজর্নের পথ বন্ধ করতে পারলেও সুফল মিলবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

সিপিডির সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে অবৈধ অর্থ উপাজর্নের মাধ্যমগুলোকে শনাক্ত করা আরও বেশি কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এসব বন্ধে নজরদারি বাড়াতে হবে এবং আইনি প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করতে হবে।

পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, সমঝোতা আরও শক্তিশালী করতে হবে বলে মনে করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

এসএইচ-০৮/০৩/২৩ (প্রযুক্তি ডেস্ক, সূত্র : সময়)