সকাল ৬:২৫
সোমবার
২৫ শে আগস্ট ২০২৫ ইংরেজি
১০ ই ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১ লা রবিউল-আউয়াল ১৪৪৭ হিজরী
spot_img

সাবেক তিন গভর্নর ও ছয় ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব তলব

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক তিন গভর্নর ও ছয় ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুরোধে বুধবার (১৩ আগস্ট) দেশের সব ব্যাংকে এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে।

তালিকায় থাকা সাবেক গভর্নররা হলেন: ড. আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদার। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের মধ্যে এই তিনজন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পদে ছিলেন। তাদের আমলে ব্যাংক খাতের একাধিক দুর্নীতি, ঋণ কেলেঙ্কারি ও রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটে।

ড. আতিউর রহমানের সময়ে সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংকের জালিয়াতি এবং ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটে। রিজার্ভ চুরির পর তিনি পদত্যাগ করেন।

ফজলে কবিরের সময়ে ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দখল, ঋণখেলাপি গোপন এবং ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নীতি চালু হয়, যা থেকে অনেক ব্যবসায়ী বিদেশে অর্থ পাচার করেন।

অন্যদিকে আব্দুর রউফ তালুকদারের সময়ে ঋণখেলাপিদের ছাড়, বেনামে ঋণ বিতরণ এবং এস আলম গ্রুপকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছাপানো টাকা ঋণের নামে দেয়া হয়।

তলব করা সাবেক ছয় ডেপুটি গভর্নর হলেন: সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী, মাসুদ বিশ্বাস, এস এম মনিরুজ্জামান, আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান, কাজী ছাইদুর রহমান ও আবু ফরাহ মোহাম্মদ নাছের।

এদের মধ্যে এস কে সুর চৌধুরী ও মাসুদ বিশ্বাস বর্তমানে জেলহাজতে আছেন। অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যাংক খাত বিপর্যয়ের অভিযোগ রয়েছে।

এআর-০২/১৩/০৮ (জাতীয় ডেস্ক)

ঋণখেলাপিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না : অর্থ উপদেষ্টা

আগামী নির্বাচনে ঋণখেলাপিরা অংশ নিতে পারবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

বুধবার (১৩ আগস্ট) অর্থ মন্ত্রণালয়ে সর্বজনীন পেনশন অ্যাপ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনে কালোটাকার ব্যবহার বন্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার। তবে এটার বাস্তবায়ন পুরোপুরি নির্ভর করবে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ওপর।

ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কালোটাকার উৎস বন্ধ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে অর্থ মন্ত্রণালয়।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে লজিস্টিকের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা।

ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘কালোটাকার উৎস এবং প্রসেস, আমরা চেষ্টা করছি উৎসটা বন্ধ করা। উৎসাটা মোটামুটি কিন্তু লোন যারা নেয়। আগে তো ব্যাংকের মালিক, ইন্ডাস্ট্রির মালিক, টেলিভিশনের মালিক, নিউজ পেপারের মালিক সব একজনই। সে নির্ধারণ করত। এখন তো সেটা হচ্ছে না।’

এআর-০১/১৩/০৮ (জাতীয় ডেস্ক)

বিএনপি মিলে-মিশে দেশ পরিচালনা করবে : তারেক রহমান

জনরায় পেলে বিএনপি মিলে-মিশে দেশ পরিচালনা করবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেলে যুব সমাবেশে এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে ফ্যাসিবাদের দেড় দশক পর ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ইনশাল্লাহ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সকল নারী-পুরুষ-ছাত্র-তরুণ-যুবসমাজসহ সর্বস্তরের জনগণের কাছে আমার আহ্বান… আগামী নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিন দেশ গড়ার সুযোগ দিন।

তিনি বলেন, আমি আজকে এখানে যারা বক্তব্য রেখেছেন তাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি, যারা আমার নেতাকর্মীরা আছেন, যারা সংবাদকর্মী আছেন তাদের মাধ্যমে আমি দেশের সকল মানুষের কাছে এতটুকু বলতে চাই.. ভোট দিলে ধানের শীষে দেশ গড়ব মিলে-মিলে।

আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয়তাবাদী যুব দল- জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল-জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল’ এই তিন সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে ‘যুব সমাবেশের প্রত্যাশা ও বিএনপির পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

প্রযুক্তি নির্ভর যুব সমাজ গড়ে তুলতে দলের কর্ম পরিকল্পনা বিস্তারিতভাবে তুলে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে আগামী দিনে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। বেকারদের কর্মের ব্যবস্থা করা এটাই আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য।

জনগণ প্রচলিত রাজনীতির একটা পরিবর্তন চাইছে। জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা এই আকাঙ্ক্ষা পূরণে আর প্রতিশ্রুতি নয়, প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন। এই কারণে প্রতিটি সেক্টরে পরিকল্পনাগুলো কীভাবে বাস্তায়ন করা যায় সেটাই আমরা পরিকল্পনার কাজ করছি। আজকের এই যুব সমাজের মাধ্যমে দেশের তরুণ যুবশক্তির কাছে আমার আবেদন আপনারা বিএনপির জনমুখী গণমুখী কর্ম পরিকল্পনাগুলো দেশের সকলের সামনে, জনগণের সামনে তুলে ধরুন। জনগণের রায় বিএনপি রাষ্ট্রীয় পরিচালনার সুযোগ পেলে সামনের দিনে আমরা এই পরিকল্পনাগুলো পর্যায়ক্রমে ইনশাল্লাহ বাস্তবায়ন করব।

তারেক বলেন, সাধারণভাবে একটা দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি যখন কর্মক্ষম শ্রমশক্তি থাকে সেটি হলো কিন্তু ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড… এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বিবেচনা দেশের বর্তমান জনসংখ্যা দেশের উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে। কারণ বয়সের হিসাবে আমাদের জনসংখ্যা অধিকাংশই কিন্তু কর্মক্ষম। শুধু এই জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে আমাদের কনভার্ট বা রূপান্তর করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, এ কারণেই বিএনপি মনে করে যে, দেশের জনসংখ্যাকে বিশেষ করে তরুণ এবং যুবশক্তিকে কারিগরি নির্ভর শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তুলা যায়, তাহলে বর্তমান জনসংখ্যা দেশের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠবে। দেশের এই কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে একদিকে যেমন প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় লক্ষ্য নিয়ে গড়ে তুলতে আমরা আগ্রহী ঠিক একই সঙ্গে তরুণ যুবকদের আগ্রহী একটি অংশকে খেলাধুলার পারদর্শিতা অর্জন আমাদের করানো প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, এখানে খুব সম্ভব একজন বক্তা ‘নতুন কুড়ি’ কথাটি উনারা বলেছেন। যুবকদের মধ্যে প্রযুক্তি জ্ঞানের পাশাপাশি একটি অংশ আছে যারা খেলাধুলা নিজেদেরকে পারদর্শী করে গড়ে তুলতে চান আমাদেরকে সেই সুযোগটা দিতে হবে। এর ভিতরে আমরা একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, সেই পরিকল্পনাটা হচ্ছে ‘নতুন কুড়ি’ আমরা ইনশাআল্লাহ আবার চালু করব। নতুন কুড়ির আরেকটি সাবজেক্ট আমরা চালু করবো এতে স্পোর্টস বা ক্রীড়াও থাকবে।

তারেক রহমান বলেন, আমরা আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ বংশধরদের দিক থেকে এই সেক্টরে খেলাধুলায় যারা দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারবেন সেই মানুষগুলোকে আমরা বের করে নেব কালচারাল লাইফের পাশাপাশি। সেজন্য এই খেলাগুলোকে পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ক্রীড়া শিক্ষাকেও আমরা কারিকুলামের অন্তর্ভুক্ত আমরা করতে পারি।

এআর-০২/১২/০৮ (জাতীয় ডেস্ক)

মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে ব্যবসাবান্ধব করতে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সুযোগ নিয়ে আয়োজিত এক ব্যবসায়িক ফোরামে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অতীতে বাংলাদেশে ব্যবসা আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী এগোয়নি। তবে নতুন বাংলাদেশে অনেক কিছুই নতুনভাবে গড়ে উঠছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্যবসার সম্ভাবনা।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্ভাব্য সব উপায়ে ব্যবসাবান্ধব হতে চেষ্টা করছে। আমি পরিবর্তিত বাংলাদেশে অসীম সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছি।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে রয়েছে তরুণ ও সৃষ্টিশীল জনগোষ্ঠী। তিনি বিনিয়োগকারীদের বিশ্বজুড়ে বসবাসরত তরুণ বাংলাদেশি প্রবাসীদের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।

বিদেশে থাকা তরুণ বাংলাদেশিদের প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাদের মধ্যে সবসময় বাংলাদেশের জন্য কিছু করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য প্রদান করেন। এতে তিনি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা এবং শুল্ক ও অশুল্ক বাধা অপসারণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।

সেলুলার অপারেটর রবি’র প্রধান শেয়ারহোল্ডার, আজিয়াটা গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিবেক সুদও বক্তব্য দেন। এতে তিনি বাংলাদেশে আজিয়াটার ২৮ বছরে ব্যবসা সম্প্রসারণ, অংশীদারিত্ব ও যৌথ সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।

এ সময় পেট্রোলিয়াম ন্যাশনাল বেরহাদ (পেট্রোনাস)-এর প্রেসিডেন্ট ও গ্রুপ সিইও তেংকু মুহাম্মদ তৌফিক, সার্বভৌম সম্পদ তহবিল খাজানাহ ন্যাশনাল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল ফেইসাল ওয়ান জাহির, পাম অয়েল কোম্পানি সাইম ডার্বি প্লান্টেশনস, কুয়ালালামপুর কেপং বেরহাদ (কেএলকে), আইওআই কর্পোরেশন এবং ফেলদা গ্লোবাল ভেঞ্চারস (এফজেভি)-এর শীর্ষ কর্মকর্তা, প্রোটন হোল্ডিংস বেরহাদের (প্রোটন) চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়সাল আলবার এবং গ্লোভ প্রস্তুতকারক টপ গ্লাভ কর্পোরেশনের নির্বাহী চেয়ারম্যান লিম উই চাই প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।

ব্যবসায়িক এই সমাবেশের আগে মঙ্গলবার পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি -এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

এআর-০১/১২/০৮ (জাতীয় ডেস্ক)

জুলাই ঘোষণাপত্রে যা আছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ‘৩৬ জুলাই উদ্‌যাপন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন।

এর আগে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্যদিয়ে শুরু হয় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আল্লাহ আমাদের জন্য রহমত বর্ষণ করছেন। আল্লাহর রহমত নিয়ে আমি এই ঘোষণাপত্র পাঠ করব।

জুলাই ঘোণাপত্র–

যেহেতু উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের সুদীর্ঘকালের ধারাবাহিকতায় এই ভূখণ্ডের মানুষ দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল;

এবং

যেহেতু বাংলাদেশের আপামর জনগণ দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে এই ভূখণ্ডে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বিবৃত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে;

এবং

যেহেতু স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতি, এর কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করেছিল;

এবং

যেহেতু স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাকশালের নামে সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করে এবং মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে, যার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহি-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে একদলীয় বাকশাল পদ্ধতির পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়,

এবং

যেহেতু আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় বছর ছাত্র-জনতার অবিরাম সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং ১৯৯১ ইং সনে পুনরায় সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।

এবং

যেহেতু দেশি-বিদেশি চক্রান্তে সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় ১/১১-এর ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদের পথ সুগম করা হয়;

এবং

যেহেতু গত দীর্ঘ ষোলো বছরের ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক এবং গণবিরোধী শাসনব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে এবং একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অতি উগ্র বাসনা চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে সংবিধানের অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পরিবর্তন করা হয় এবং যার ফলে একদলীয় একচ্ছত্র ক্ষমতা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়;

আরও পড়ুন: এই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে আমরা হতাশ: ডা. তাহের

এবং

যেহেতু শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, গুম-খুন, আইন-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে ধ্বংস করে;

এবং

যেহেতু, হাসিনা সরকারের আমলে তারই নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে;

 

এবং

যেহেতু, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্যদিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ুকে বিপন্ন করে;

এবং

যেহেতু শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণ গত প্রায় ষোলো বছর যাবৎ নিরন্তর গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করে জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়;

এবং

যেহেতু বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রের অন্যায় প্রভুত্ব, শোষণ ও খবরদারিত্বের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে বহিঃশক্তির তাঁবেদার আওয়ামী লীগ সরকার নিষ্ঠুর শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে দমন করে;

এবং

যেহেতু অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন) এ দেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে;

এবং

যেহেতু, আওয়ামী লীগ আমলে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, শিক্ষার্থী ও তরুণদের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয় এবং সরকারি চাকরিতে একচেটিয়া দলীয় নিয়োগ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে ছাত্র, চাকরিপ্রত্যাশী ও নাগরিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের জন্ম হয়;

এবং

যেহেতু বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ওপর চরম নিপীড়নের ফলে দীর্ঘদিন ধরে জনরোষের সৃষ্টি হয় এবং জনগণ সকল বৈধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই চালিয়ে যায়;

এবং

যেহেতু, সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থার বিলোপ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ব্যাপক দমন-পীড়ন, বর্বর অত্যাচার ও মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, যার ফলে সারা দেশে দল-মত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণবিক্ষোভ গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়;

এবং

যেহেতু ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে অদম্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দল, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষ যোগদান করে এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী বাহিনী রাজপথে নারী-শিশুসহ প্রায় এক হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে, অগণিত মানুষ পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ববরণ করে এবং আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যগণ জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন প্রদান করে;

এবং

যেহেতু, অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের পতন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জনগণ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে, পরবর্তী সময়ে ৫ আগস্ট ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ পরিচালনা করে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনরত সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা তথা সর্বস্তরের সকল শ্রেণি, পেশার আপামর জনসাধারণের তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়;

এবং

যেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলায় গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক ও আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসংগত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত;

এবং

যেহেতু জনগণের দাবি অনুযায়ী এরপর অবৈধ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামতের আলোকে সাংবিধানিকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করা হয়;

এবং

যেহেতু, বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়;

এবং

সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধান ও সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে;

এবং

সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ বিগত ষোলো বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামকালে এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালীন সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সকল ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধসমূহের দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে;

এবং

সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সকল শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে প্রয়োজনীয় সকল আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে;

এবং

সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ যুক্তিসংগত সময়ে আয়োজিতব্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।

এবং

সেহেতু বাংলাদেশের জনগণ এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছে যে একটি পরিবেশ ও জলবায়ু সহিষ্ণু অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার সংরক্ষিত হবে;

এবং

বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে;

এবং

৫ আগস্ট ২০২৪ সালে গণ-অভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হলো।

এআর-০২/০৫/০৮ (জাতীয় ডেস্ক)

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন : প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে চিঠি পাঠাব, যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (০৫ আগস্ট) রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার আমাদের সর্বশেষ দায়িত্ব পালনের পালা। নির্বাচন অনুষ্ঠান। আজ এই মহান দিবসে আপনাদের সামনে এ বক্তব্য রাখার পর থেকেই আমরা আমাদের সর্বশেষ এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করব। আমরা এবার একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করব।

তিনি বলেন, আপনারা সকলেই দোয়া করবেন যেন সুন্দরভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে এ দেশের সকল নাগরিক একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার কাজে সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে এই নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখরভাবে সম্পন্ন করা যায় সেজন্য সকল প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করবো।

ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এবারের নির্বাচন যেন আনন্দ-উৎসবের দিক থেকে, শান্তি-শৃঙ্খলার দিক থেকে, ভোটার উপস্থিতির দিক থেকে, সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতার দিক থেকে দেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকে সেজন্য সকল আয়োজন সম্পন্ন করতে আগামীকাল থেকে আমরা সকলেই মানসিক প্রস্তুতি ও প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন শুরু করব।

তিনি বলেন, নির্বাচনে ভোটারদের সম্পর্কে দু-একটা কথা বলতে চাই। এবার আমরা প্রবাসী ভোটারদের ভোট দেওয়ার আয়োজন নিশ্চিত করতে চাই। অর্থনৈতিক দিক থেকে সম্পূর্ণ বিধস্ত বাংলাদেশ যে আবার দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে তার বড় কারণ হলো আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ঐতিহাসিক অবদান। নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নারী ভোটাররা যেন দেশের সর্বত্র নির্দ্বিধায় আনন্দ-উৎসাহ সহকারে তাদের ভোট দিতে পারে এটা নিশ্চিত করতে চাই। এবার যেন কেন্দ্রে কেন্দ্রে নারী ভোটারদের ঢল নামে আমরা সেই লক্ষ্যে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

তিনি বলেন, দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেবার কারণে গত ১৫ বছর ধরে নাগরিকবৃন্দ ভোট দিতে পারেনি। এবারের নির্বাচনে আমরা আমাদের বকেয়া আনন্দসহ মহা আনন্দে ভোট দিতে চাই। এবারের নির্বাচনে জীবনে প্রথমবার ভোট দিতে যাবে এরকম ভোটাররা নানা উৎসবের মধ্য দিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবে, তাদের এই দিনটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য। এর মধ্যে নতুন নারী ভোটার থাকবে, নতুন পুরুষ ভোটার থাকবে। এর মধ্যে এমন ভোটার থাকবে যারা ১৫ বছর আগে থেকেই ভোট দিতে পারতো কিন্তু জীবনে একবারও ভোট দিতে পারেনি। এর মধ্যে আসবে যারা ১০ বছর আগে, ৫ বছর আগে ভোট দিতে পারত কিন্তু পারেনি। আর আসবে ভাগ্যবান ও ভাগ্যবতীর দল যারা এই প্রথমবার ভোটার হওয়ার যোগ্যতা লাভ করলো এবং সঙ্গে সঙ্গে ভোট দেওয়ার সুযোগও পেয়ে গেল।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের দিনকে আমরা ঈদের উৎসবের মতো করতে চাই। এবারের ভোটের আনন্দ থাকবে সবার মধ্যে। আপনারা সবাই বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। এখন থেকে প্রতিদিন আলাপ করুন, আপনার এলাকায় ভোটদান ব্যবস্থা কেমন হলে সুন্দর হয়, কেমন হলে আনন্দমুখর হয়, সেটা আগে থেকে ঠিক করার জন্য। নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজের ভিত্তি রচনা হবে এবারের নির্বাচনে। তার জন্য প্রস্তুতি নিন।

এআর-০১/০৫/০৮ (জাতীয় ডেস্ক)

জাতীয় নাগরিক পার্টির ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

রোববার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এনসিপির সমাবেশে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘গত বছর এই দিনে এই শহীদ মিনার থেকে আমরা ঘোষণা করেছিলাম ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থা বিলোপের সেই ঐতিহাসিক এক দফা। ঐতিহাসিক এক দফা কোনো ব্যক্তি, দলের বা কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়নি।’

‘এক দফা ঘোষণা করা হয়েছিল বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে। এক দফার প্রকৃত ঘোষক বাংলাদেশের জনগণ বাংলাদেশের অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা এবং শহীদ ভাই-বোনেরা,’ বলেন তিনি।

এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা দায় ও দরদের রাজনীতির ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমরা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ঘোষণা দিয়েছিলাম। বলেছিলাম আমরা এমন একটা রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করব যেখানে স্বৈরতন্ত্র আর কখনোই ফিরে আসতে পারবে না।’

‘জুলাই পদযাত্রায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় বলেছি ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছে, কিন্তু ফ্যাসিবাদী বন্দোবস্তের বিলোপ আমরা ঘটাতে পারিনি,’ বলেন তিনি।

এরপর নাহিদ ইসলাম এনসিপির ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ শীর্ষক ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন।

২৪ দফার মূল বিষয়গুলো হলো:

১। নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক

উপনিবেশবিরোধী লড়াই, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের আকাঙ্খার ভিত্তিতে আমরা বহু ভাষা ও সংস্কৃতি ও জাতির নতুন বাংলাদেশ তৈরি করবো। পুরাতনকে ঝেড়ে ফেলে, আমাদের রাষ্ট্রের নতুন যাত্রায়, আমাদের প্রথম অঙ্গীকারই হচ্ছে গণপরিষদের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান। জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা পূরণে, আমাদের এই নতুন সংবিধান, একনায়কতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিলোপ করে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনকল্যাণমুখী সেকেন্ড রিপাবলিক গঠন করবে। আমাদের নতুন রাষ্ট্র ব্যক্তির জীবন, জীবিকা, মর্যাদা ও অধিকার সংরক্ষণ করবে। এই নতুন সংবিধান আমাদের রাষ্ট্রের আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার সুনির্দিষ্ট বিভাজন ও ভারসাম্য নিশ্চিত করবে। আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করবো।

২। জলুাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার

এই জনপদের মানুষের উপনিবেশবিরোধী সংগ্রাম, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার লড়াই, এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়ই আমাদের প্রেরণা। আমরা জুলাইয়ে সংঘটিত গণহত্যা, শাপলা গণহত্যা, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, গুম ও বিচারবহির্ভুত হত্যাসহ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সময়ে সংঘটিত সকল মানবতা বিরোধী অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করবো। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের পরিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করে আজীবন তাদের পাশে দাঁড়াবো। জুলাইয়ের জাতীয় ঐক্য ও হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মহিমাকে ধারণ করার জন্য আমরা জুলাইয়ের স্মৃতি রক্ষা করব এবং সবসময় ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের সহযোদ্ধাদের পাশে থাকবো।

৩। গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার

আমরা এমন একটি ইনসাফের রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চাই যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো হবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পক্ষপাতহীন, নৈর্ব্যক্তিক, মানবিক ও গণমূখী। জনসেবাই হবে তাদের মূলমন্ত্র। একই সংগে রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ জবাবদিহিতা নিশ্চিতকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে, যেন এই প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীন কাজ করে নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্বপরায়ণ হওয়ার প্রবণতাকে প্রতিহত করতে পারে। আমরা এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে জনগণ শুধু নির্বাচনের দিন সকল ক্ষমতার উৎস হবেনা, বরং রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন আইন ও এর গঠন প্রক্রিয়ার মৌলিক পরিবর্তন সাধন করবো, এবং রাষ্ট্র-কর্তৃক নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের আইন করার মাধ্যমে নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব হ্রাস করবো এবং সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্ধীতার সুযোগ সৃষ্টি করবো।

৪। ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও আইন সংস্কার

আমাদের রাষ্ট্রে স্বাধীন বিচারবিভাগ ক্ষমতাবানদের পক্ষে অন্ধ অবস্থান নিবে না, বরং মজলুমকে তার প্রাপ্য ন্যায়বিচার বুঝিয়ে দিবে। এছাড়া একটি সত্যিকারের জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে আমরা ঔপনিবেশিক আমলের সকল আইনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের ভিত্তিতে যুগোপযুগী করবো। মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে এমন কোন আইন তৈরি করা হবে না। আমরা বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয়কে পরিপূর্ণ আর্থিক স্বাধীনতা প্রদানসহ সম্পূর্ণভাবে ক্রিয়াশীল করবো। মামলার জট ও দীর্ঘসূত্রতা কমাতে আমরা বিচারক এবং আদালতের সংখ্যা বাড়াবো। আমরা মামলার নথিপত্রগুলোকে ডিজিটাল করা এবং মামলার অগ্রগতি অনলাইনে ট্র্যাকিং এর ব্যবস্থা করব। আমরা দেওয়ানী দায় (Civil liability)-এর ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির বিষয়ে একটি আইনগত কাঠামো প্রণয়ন করব। মানহানির মামলায় শুধু ভুক্তভোগী ব্যক্তিই আইনগত প্রতিকার চাইতে পারবেন এই বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করবো। আমরা গরিবদের জন্য বিনামূল্যে আইনগত সহায়তার ব্যপ্তি বৃদ্ধি করব। কিশোর সংশোধনী ব্যবস্থার মানবিকীকরণ ও সমাজে পুনর্বাসনের সুব্যবস্থা করব।

৫। সেবামখুী প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন

বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রকে দলীয়করণের মাধ্যমে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে; আমরা প্রশাসনে সকল প্রকার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করব। আমলাতন্ত্রকে সুদক্ষ ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা উন্নত প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন খাতের যোগ্য ও বিশেষজ্ঞদের সরকারে অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবো। নিয়োগ, বদলী, পদায়ন ও প্রোমোশনের ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতাই হবে একমাত্র মানদণ্ড। সরকারি কর্ম কমিশনের সকল প্রশাসনিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সততা, নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে যথাযথ নিয়োগ-কাঠামো তৈরি করব। সরকারি সেবায় কাগজ, সময় এবং সশরীরে উপস্থিতির প্রয়োজন কমিয়ে ডিজিটাল গভার্নেন্স চালুর প্রতি আমরা বিশেষ গুরুত্ব দেব। রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের মচ্ছব, বিচারহীনতা ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করে আমরা যেকোনো দুর্নীতির দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করবো। সরকারের যেকোনো দাপ্তরিক দুর্নীতি প্রকাশ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বিশেষ আইনি সুরক্ষা দিতে আমরা Whistleblower Protection আইন প্রণয়ন করবো এবং এই লক্ষ্যে বিদ্যমান সকল আইনী কাঠামোর যথাযথ সংস্কার করা হবে। এছাড়া পরিবার ও সমাজে দুর্নীতি-বিরোধী মূল্যবোধ তৈরি ও সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা শিক্ষা কারিকুলামে আমূল পরিবর্তন আনবো এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ কর্মসূচি চালু করবো।

৬। জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী

আমরা এমন এক বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে, ওয়ারেন্ট ছাড়া তুলে নিয়ে যেতে না পারে। আমরা ঔপনিবেশিক আমলের ১৮৬১ ও ১৮৯৮ সালের পুলিশ আইন যুগোপযোগী করবো। আমরা গড়ে তুলবো এমন এক কাঠামো, যেখানে পুলিশ হবে মানবাধিকারের রক্ষক, নাগরিকের সেবক। আমরা পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর রাজনৈতিক অপব্যবহার বন্ধে ও তাদের বদলি-পদায়নে স্বচ্ছ ব্যবস্থা চালু করতে একটি স্থায়ী পুলিশ কমিশন গঠন করবো। যেকোনো গ্রেফতারের ক্ষেত্রে ওয়ারেন্ট বা সুস্পষ্ট কারণের উল্লেখ থাকতে হবে এবং গ্রেফতারকারী পুলিশের পদবি ও পরিচয় স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। সুস্পষ্ট পেশাগত প্রয়োজন ব্যতীত সকল পুলিশকে দায়িত্বরত অবস্থায় ইউনিফর্ম পরতে হবে। আমরা প্রতিটি দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যকে বডি ক্যামেরার আওতায় আনবো, যাতে প্রতিটি পদক্ষেপের জবাবদিহিতা থাকে। আমরা চালু করবো কমিউনিটি-ভিত্তিক পুলিশিং এবং মানবাধিকার-কেন্দ্রিক প্রশিক্ষণ। সহিংস অপরাধের প্রতি আমাদের থাকবে জিরো টলারেন্স। আমরা র্যাব বিলুপ্ত করবো এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে ব্যবহার বন্ধ করতে সুস্পষ্ট আইনি কাঠামো তৈরি করব।

৭। গ্রাম পার্লামেন্ট ও স্থানীয় সরকার

মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসছে, এতে শহরগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে। আমরা গ্রামের স্বকীয়তা অক্ষুণ্ণ রেখে শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিতে চাই। আমরা গ্রামে উৎপাদন ও বিনিয়োগের সুযোগ বাড়িয়ে স্বনির্ভর গ্রাম তৈরি করব। আমরা স্থানীয় পর্যায়ে শাসনব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকল্পে গ্রাম পার্লামেন্ট গঠন করবো এবং এই পার্লামেন্টের হাতে স্থানীয় সমস্যা সমাধান, স্থানীয় উন্নয়ন তদারকির দায়িত্ব অর্পণ করবো। আমরা স্থানীয় সরকার কাঠামোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করবো এবং স্থানীয় সরকারকে স্থানীয় উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করবো। আমরা সংসদ সদস্যদের ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করে স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতায়িত করবো। আমরা স্থানীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি, বাজেট প্রণয়ন ও সরকারি ক্রয়ে স্থানীয় জনগণের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবো। একই সাথে সামাজিক জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকারী কাঠামোগুলো (যেমন, ওয়ার্ড সভা, উন্মুক্ত বাজেট আলোচনা) যেন যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারে তা নিশ্চিত করব। সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে নিরবিচ্ছিন্নভাবে পৌঁছে দিতে আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবাভিত্তিক কার্যক্রমকে স্থানীয় সরকারের অধীনে ন্যাস্ত করবো। আমরা একটি স্বাধীন স্হানীয় সরকার কমিশন গঠন করব, যা স্হানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে, তা নিশ্চিত করবে।

৮। স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ

আমরা সংবাদমাধ্যমের শতভাগ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি এবং যথাযথ আইনী ও নীতি কাঠামোর মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত করবো। আমরা প্রেস কাউন্সিলকে যুগোপযোগী ও কার্যকর করবো। এছাড়া নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা কর্পোরেশনের কাছে যাতে বহু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিকানা যেন কুক্ষিগত না হয়, রাজনৈতিক দলের স্বার্থের হাতিয়ার না হয়, বরং গণমাধ্যম জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে আমরা তার আইনি কাঠামো তৈরি করব। গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা শক্তিশালী করার প্রয়াসে নাগরিক সমাজের সক্রিয়তা ও স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ অবারিত করতে নাগরিক সমাজের অংশীজনদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নীতি কাঠামো তৈরি করা হবে। আমরা গণমাধ্যমে মিসইনফরমেশন/ গুজব ও বিভ্রান্তিকর সংবাদের বিরুদ্ধে জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করবো।

৯। সার্বজনীন স্বাস্থ্য

আমরা এমন একটি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলবো, যেখানে অর্থের অভাবে কেউ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবেন না। এমন জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলবো, যাতে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে অ্যাম্বুলেন্সেই জীবনরক্ষা কারী চিকিৎসা শুরু করা যায়। সে উদ্দেশ্য সারা দেশে জিপিএস-চালিত অ্যাম্বুলেন্স ও ডিসপ্যাচ ব্যবস্থা তৈরি করব। আমরা ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড (EHR) সিস্টেম চালু করব, যাতে দেশের সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত থাকবে। ফলে প্রতিটি নাগরিকের একটি ইউনিক হেলথ আইডি থাকবে, যাতে চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল তথ্য ডিজিটালি সংরক্ষিত থাকবে, কখনো হারাবে না। এতে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট ও ভুল চিকিৎসার সম্ভাবনা কমবে। আমরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী করব, যাতে সকল নাগরিক নিজ এলাকাতেই মানসম্মত চিকিৎসা পেতে পারেন। পাশাপাশি একটি কার্যকর রেফারেল ব্যবস্থা চালু করব, যা জাতীয় EHR-এর সঙ্গে সমন্বিত থাকবে, যাতে রোগী এক হাসপাতাল থেকে আরেকটিতে সহজে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেন। সেবায় বৈষম্য দূর করতে অঞ্চলভিত্তিক হৃদরোগ, ট্রমা ও অন্যান্য বিশেষায়িত কেন্দ্র স্থাপন করবো। মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবে বিবেচনা করে আমরা এ খাতে পৃথক বাজেট, প্রশিক্ষিত জনবল এবং সেবার প্রসার ঘটাব। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ন্যায্য বেতন, ক্যারিয়ারে অগ্রগতির সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি, নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে ডে-কেয়ার সেন্টারসহ নারীবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করব। স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার অবসান ঘটাতে কার্যকর নীতি গ্রহণ করব। আমাদের জনপদের মানুষের জন্য নতুন ও কার্যকর চিকিৎসা আবিষ্কার করতে আমরা বিশ্বমানের একটি জাতীয় বায়োব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করব।

১০। জাতি গঠনে শিক্ষানীতি

আমরা শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ভবিষ্যতের উদ্ভাবন, শিল্পায়ন ও অর্থনীতির জন্য প্রস্তুত একটি দক্ষ, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলব। শিক্ষা পণ্য নয়, অধিকার। বিজ্ঞান, গণিত, প্রকৌশল ও চিকিৎসা শিক্ষায় শক্ত ভিত তৈরিতে আমাদের থাকবে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা। আমাদের ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চার পাশাপাশি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নৈতিকতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন সুনাগরিক তৈরি করবে। শিক্ষার ভিত্তি সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্য হবে মানসম্পন্ন গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান সৃষ্টি। আমরা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাথে আলোচনাক্রমে বাংলা মাধ্যম, মাদ্রাসা, ও ইংরেজি মাধ্যমসহ বিদ্যমান সকল ধরনের শিক্ষার মাধ্যম ও পদ্ধতিগুলোর একটি যৌক্তিক সমন্বয় করব এবং আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র ও অর্থনীতির চাহিদার সাথে সংগতি রেখে জাতীয় পাঠ্যক্রমকে আধুনিকায়ন করব। কর্মমুখী, বৃত্তিমূলক, নার্সিং শিক্ষা এবং দক্ষতা প্রশিক্ষণকে আন্তর্জাতিক মানের, আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলবো, যাতে সকল নাগরিকের জন্য টেকসই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিশেষ চাহিদা-সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা প্রশিক্ষিত শিক্ষক, অবকাঠামো, শিক্ষা উপকরণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করব। আমরা শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে বহির্বিশ্বের সাথে সংগতি রেখে পৃথক বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন এবং রাষ্ট্রীয় নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবো। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রাজনীতি ও তার উপর জাতীয় রাজনীতির প্রভাবের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।

১১। গবেষণা, উদ্ভাবন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব

আমরা উন্নত বিশ্ব থেকে প্রযুক্তি স্থানান্তর ও দেশে প্রযুক্তি-জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করবো। আমরা বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি গবেষণায় সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতা ও যৌথ উদ্যোগে ৫০ বছর মেয়াদি বিভিন্ন বিজ্ঞান গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ করবো। এসব প্রকল্পের আওতায় অ্যারোনেটিক্স, মহাকাশ গবেষণা, সিগনাল ইন্টেলিজেন্স, রেডার প্রযুক্তি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সেমিকন্ডাকটার, কোয়ান্টাম টেকনোলজি, ন্যানো-টেকনোলোজি, নিউক্লিয়ার সায়েন্স, ও বায়োটেকনোলোজি প্রভৃতি বিষয়ে সর্বাধুনিক গবেষণা ল্যাব স্থাপন করবো। পাশাপাশি এ বিষয়ক বিশ্বের সেরা ল্যাবগুলোর সাথে সহযোগিতা স্থাপন এবং দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের প্রতিযোগিতামূলক বেতনে নিয়োগ করবো। কম্পিউটেশনাল গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করার জন্য একটি ন্যাশনাল কম্পিউটিং সার্ভার ও বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক কম্পিউটিং ক্লাস্টার তৈরি করবো। বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর আউটপুট মূল্যায়নের জন্য কমিশন গঠন করব এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সকল প্রকার অপ্রয়োজনীয় আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করবো। তথ্য ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কমিশন গঠন করবো।

১২। ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় ও জাতিসত্ত্বার মর্যাদা

ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হওয়া সত্বেও, মানুষের ধর্মীয় পরিচয় ও আচরণকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নির্যাতনের উপলক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা সকল ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিগোষ্ঠীর ধর্মীয়, নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে একটি বহুভাষা, বহু-সংস্কৃতি, বহু-জাতিভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ব। আমরা ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যের শ্রদ্ধাশীল। ইসলাম-বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতা, এবং জাতি-পরিচয়ের কারণে যেকোনো প্রকার বৈষম্যমূলক আচরণ, নির্যাতন ও নিপীড়নকে আমরা শক্তহাতে প্রতিহত করবো। এসব ঘটনা মোকাবেলায় আমরা স্বাধীন তদন্তের এখতিয়ার-সম্পন্ন মানবাধিকার কমিশনের একটি বিশেষ সেল গঠন করবো। আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের বেদখলকৃত জমি উদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। দলিত-হরিজন-তফসিলি সম্প্রদায়সহ সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের বিকাশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তায় আমরা বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান করবো। আমরা সকল জাতিসত্ত্বার ভাষা ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোকে কার্যকর করবো এবং বিদ্যালয়ে নিজ-নিজ মাতৃভাষা শিক্ষার সুযোগ অবারিত করবো। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতির বিকাশ ও জাতীয় উৎসবগুলোকে সকল সাংস্কৃতির মেলবন্ধনে পরিণত করতে আমাদের থাকবে সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা। আমরা স্ব-স্ব জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অখণ্ডতা রক্ষা করবো।

১৩। নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বের পরও রাষ্ট্র জাতীয় জীবনে ব্যাপক হারে নারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেনি। তাই নারীর ক্ষমতায়ন বাড়াতে নিম্নকক্ষে ১০০টি সংরক্ষিত আসনে নারী প্রতিনিধিদের সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবো যার সংখ্যা রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির সাথে সাথে হ্রাস করা হবে। উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীদের প্রাপ্য অধিকার দ্রুত বুঝে পেতে সর্বপ্রকার আইনী সহায়তা প্রদান করা। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বেতন কাঠামোতে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পরিবারে ও আমাদের সার্বিক অর্থনীতিতে গৃহিনী নারীদের অবদান দেশজ উৎপাদন হিসেবে মর্যাদা পাবে ও মোট দেশজ উৎপাদনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। প্রতিটি খানায় নারী সহিংসতা প্রতিরোধ সেল ও নারী পুলিশ নিযোগ বাধ্যতামূলক করা হবে। ধর্ষণ মামলার বিচার প্রক্রিয়া ৬ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে ফাস্ট ট্র্যাক ট্রাইব্যুনাল চালু করা হবে এবং ভিকটিমদের ব্যক্তি পরিচয় গোপন রাখার জন্য গণমাধ্যম নীতিমালা জারি করা হবে। কর্মক্ষেত্রে ব্রেস্টফিডিং ও স্যানিটারি উপকরণ ব্যবহারের নির্দিষ্ট স্থান রাখার নিয়ম করা হবে। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, অনলাইন ও যানবাহনে নারীদের হয়রানি ও নির্যাতন প্রতিরোধে আইনী কাঠামোর যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির বিধান করা হবে। নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে উন্নতমানের চাইল্ড কেয়ার ও বয়স্ক সেবা সার্ভিস গড়ে তোলায় প্রণোদনা দেওয়া হবে এবং স্বল্পআয়ের পরিবারকে চাইল্ড কেয়ার ভর্তুকি প্রদান করা হবে। আমরা কর্মজীবীদের পূর্ণ বেতনে অন্তত ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ও এক মাস পিতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করব। নারীদের মাতৃত্বকালীন প্রজনন স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে আমরা যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবো। নারীদের কর্মস্থলে নিরাপদ যাতায়াতের জন্য বিশেষ বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হবে। সকল নারীর জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসামগ্রীর প্রাপ্যতা সুলভে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। অনুন্নত ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চল, মাদ্রাসা ও পাহাড়ি অঞ্চলের স্বল্প আয়ের পরিবারের নারীদের উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি চালু করব। বাল্যবিবাহ ও যৌতুক বন্ধের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রমে ধর্মীয় ও সামাজিক নেতাদের সম্পৃক্ত করব।

১৪। মানবকেন্দ্রিক ও কল্যাণমুখী অর্থনীতি

অর্থনীতির মূল ভিত্তি হওয়া উচিত মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ। অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে মানুষের সামগ্রিক বিকাশ। কেবল দক্ষতা নয়, মানুষের উদ্দেশ্য, মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়িত্ববোধ গঠনে বিনিয়োগ করতে হবে। আমরা বাজার-ভিত্তিক কিন্তু কল্যাণমুখী অর্থনৈতিক দর্শন মেনে একটি আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবো, যেখানে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বরদাশত করা হবে না, অলিগার্ক শ্রেণীর প্রভাব ধ্বংস হবে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার বিকাশ নিশ্চিত হবে। আমরা উন্নয়নকে শুধু জিডিপির সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করবো না। নাগরিকদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, ইন্টারনেট এসব মৌলিক সেবা ও সেবার মান এবং প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের সুরক্ষাই হবে আমাদের উন্নয়নের মানদণ্ড।
আমরা বেকার ভাতা, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিক ভাতা, শিশু ভাতা প্রভৃতি সামাজিক সুরক্ষা সেবাকে নাগরিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবো। পথশিশু ও ছিন্নমূল মানুষদের জন্য আমরা পুনর্বাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। আমরা কর কাঠামোর ন্যায্য সংস্কারের মাধ্যমে ধনী-গরিবের বৈষম্য কমিয়ে আনবো এবং সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করবো। মধ্যম আয়ের ফাঁদ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের তথ্যপ্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা প্রণয়ন করবো একটি দূরদর্শী ও সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা। আমরা ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের বিদ্যমান কাঠামোকে শক্তিশালী করবো, বাংলাদেশ ব্যাঙ্ককে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দেব, ঋণ খেলাপি রোধে একক ক্রেডিট আইডি সহ ন্যাশনাল ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম চালু করব, পুঁজিবাজার সংস্কার ও সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পুনর্গঠন করব এবং এই খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করব।

১৫। তারুণ্য ও কর্মসর্মংস্থান

আজ বাংলাদেশে প্রায় ৩০ লাখ বেকার, এদের প্রতি তিনজনের দুইজনই তরুণ। সকল কর্মক্ষম নাগরিকের জন্য দেশে ও বিদেশে মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে আমরা রপ্তানিমুখী শ্রমঘন-শিল্পের বহুমুখীকরণ এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলব। কর্মক্ষেত্রে প্রায়োগিক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে শিক্ষাজীবনে সরকারি ও বেসরকারি খাতে বেতনভুক্ত ইন্টার্নশিপের সুযোগ সম্প্রসারণ করবো। প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নফাঁস, দুর্নীতি, সুপারিশ ও স্বজনপ্রীতি সম্পূর্ণ দূর করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবো এবং গ্রেড ভিত্তিক সমন্বিত পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করবো।। আমরা তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতা-সহায়ক পরিবেশ তৈরি করব। আমরা জেলা-ভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট ওয়ার্ক হাব গড়ে তুলবো এবং পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম, কো-ওয়ার্কিং স্পেস, ও উচ্চগতির ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করবো। বিদেশে দক্ষ মানবসম্পদ রপ্তানির লক্ষ্যে আইটি, স্বাস্থ্যসেবা, নার্সিং, ব্যবস্থাপনা, লজিস্টিক্স, হসপিটালিটি ও প্রকৌশল খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেব। এজন্য আমরা ওই সেক্টর ও দেশভিত্তিক সুনির্দিষ্ট দক্ষতা ও ভাষা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলবো। আমরা বিদেশে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে বিভিন্ন কারিগরি পেশায় প্রশিক্ষণ ও সনদ প্রদানের আওতা বাড়াবো এবং সেগুলোকে আন্তর্জাতিক মানে উত্তীর্ণ করতে বিদেশী প্রত্যয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করবো। তরুণদের মাদক ও অপরাধপ্রবণতা রোধে প্রতি জেলায় আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়া কমপ্লেক্স তৈরি করব।

১৬। বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নীতি

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে রপ্তানির বহুমুখীকরণ এবং বিকল্প বাজারে প্রবেশাধিকারে বিনিয়োগ এখন সময়ের দাবি। রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে আমরা বিভিন্ন দেশ ও ব্লকের সাথে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করবো। আমরা গার্মেন্টসের বাইরে উচ্চ সম্ভাবনাময়, শ্রমঘন খাতগুলোতে বিনিয়োগ ও প্রণোদনা জোরদার করবো, যেমন, চামড়া ও পাদুকা শিল্প, আসবাব ও হোম ডেকর, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি-প্রক্রিয়াজাত পণ্য প্রভৃতি। পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন উচ্চ মূল্য সংযোজন খাত যেমন, ঔষধশিল্প, ইলেকট্রনিক্স, এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) প্রসারে বিশেষ নীতি সহায়তা প্রদান করবো। এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে দেশের ঔষধ শিল্পে সৃষ্ট সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলায় আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নেব। ব্যবসা সহজীকরণ, জ্বালানি নিরাপত্তা ও আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে বৈদেশিক বিনিয়োগের এক আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করবো। আমরা ৫০ বছর মেয়াদী শিল্প উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে শিল্পখাতের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, গবেষক ও নীতিনির্ধারকদের সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠন করবো। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য আমরা আমাদের তুলনামূলক সুবিধার (কম্পারেটিভ এডভান্টেজ) শ্রমঘন খাতগুলোতে বিশেষ প্রণোদনা প্রদান করবো। আমরা চট্টগ্রাম, মংলা, মাতাবাড়ি বন্দরকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়া ও আশেপাশের অঞ্চলের একটি লজিস্টিক হাব হিসেবে গড়ে তুলবো। ইকো ট্যুরিজম তথা পর্যটন শিল্পের বিকাশে উদ্যোগ নিব।

১৭। টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব

আমাদের নতুন বাংলাদেশে কৃষি পণ্যের সরবরাহ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে, পাশাপাশি ক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণ হবে। আমরা কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি, জলবায়ু-সহনশীল জাতের বীজ, পরিবেশবান্ধব সার এবং প্রযুক্তিনির্ভর সহায়তার উপর যথাযথ ভর্তুকি প্রদান করবো-যার মাআমধ্যমে উৎপাদনশীলতা ও লাভজনকতা বাড়ানো হবে। কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রমকে দক্ষ ও আধুনিক করে গড়ে তোলা হবে, প্রশিক্ষণ ও মোবাইলভিত্তিক পরামর্শসেবা সহজলভ্য করা হবে। ফসল, মাছ ও প্রাণিসম্পদ খাতে অঞ্চলভিত্তিক অভিযোজন কৌশল গ্রহণ করে উপকূলীয় লবণাক্ততা ও খরা প্রবণ এলাকার জন্য টেকসই সমাধান নিশ্চিত করা হবে। আমরা কৃষি উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতি বুঝতে একটি ডাইনামিক জাতীয় ডেটাবেস তৈরি করা হবে। খাদ্যদ্রব্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে আমরা টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে খাদ্যবিক্রি, বাজার বাফারিং অপারেশন এবং প্রয়োজনীয় আমদানিকে কৃষি উৎপাদন পরিস্থিতির সাথে সমন্বয় করে পরিচালনা করবো। কৃষি উপকরণে ভেজাল রোধে কঠোর নজরদারি ও জবাবদিহিমূলক লাইসেন্স ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। বিষমুক্ত ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ উৎসাহিত করে কৃষিকে রপ্তানিমুখী ও টেকসই খাতে রূপান্তর করা হবে। একইসঙ্গে, দেশীয় বীজ গবেষণা, সংরক্ষণ ও বিতরণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করে শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নয়, খাদ্য সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করাই হবে আমাদের অঙ্গীকার।

১৮। শ্রমিক-কৃষকের অধিকার

আমরা বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহ, অভিবাসী, পরিবহন ও স্বনিয়োজিত সকল শ্রমিকের স্বীকৃতি ও আইনী সুরক্ষা নিশ্চিত করবো। আমরা দিনমজুর, চা শ্রমিক, গৃহকর্মী, নির্মাণকর্মী, পরিবহন কর্মীসহ সকল নিম্নআয়ের শ্রমিকের অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অঞ্চল-ভিত্তিক আয়-সক্ষমতা ও ক্রয়ক্ষমতার নিরিখে একটি সমন্বিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো তৈরি করবো। আমরা শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা, আইনী সুরক্ষা ও পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রভাব থেকে রক্ষা এবং শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার সামগ্রিক সুরক্ষার জন্য ‘স্থায়ী শ্রম কমিশন’ গঠন করবো। আমরা শ্রম আইনকে যুগোপযোগী এবং শ্রম ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা ও সহজলভ্যতা বৃদ্ধি করবো। আমরা শ্রমিকদের জন্য বাধ্যতামূলক কর্ম-সুরক্ষা-বীমা ও নূন্যতম পেনশন তহবিল গঠনে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করবো। শ্রমিক, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আমরা বিদ্যমান সরকারি সঞ্চয় স্কীমে সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করবো। অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে কর্মরত বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের জন্য আমাদের থাকবে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা। জোরপূর্বক শিশুশ্রম বন্ধে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমাদের লক্ষ্য প্রতিটি কৃষকের জন্য মর্যাদাপূর্ণ, নিরাপদ ও লাভজনক জীবিকা নিশ্চিত করা। কৃষকের কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হিমাগার, সরাসরি বিক্রয়কেন্দ্র ও পরিবহন সেবা সম্প্রসারণ করে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমানো হবে। আমরা “Area-Yield-Index” ভিত্তিক কৃষি বীমা চালু করে কৃষকদের উৎপাদন ঝুঁকি হ্রাস করবো। আমরা স্মার্ট কৃষির সুবিধা পৌঁছে দিতে কৃষকদের জন্য আবহাওয়া, বাজারদর ও সরকারি সহায়তা সম্পর্কিত তথ্য প্রদানকারী একটি সমন্বিত জাতীয় মোবাইল প্ল্যাটফর্ম চালু করব।

১৯। জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা

আমরা জাতীয় প্রাকৃতিক সম্পদের উপর জনগণের সার্বভৌম মালিকানা প্রতিষ্ঠা করবো। প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণে আমরা দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি করবো। আমাদের নীতিমালায় প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার হবে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের চাহিদার সমন্বয় করে। এছাড়া প্রাকৃতিক সম্পদে স্থানীয় জনগণের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা হবে। আমরা বেপরোয়া ও অবৈধভাবে কয়লা, গ্যাস, পাথর ও খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান ও নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করবো এবং সকল প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনে জাতীয় স্বার্থের সুরক্ষার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক চুক্তি পুনর্বিন্যাস করব। সমুদ্রসীমা ও এক্সক্লুসিভইকোনমিক জোনে মৎস্য ও খনিজ সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণার প্রসার ঘটাবো। সুন্দরবনসহ দেশের জীববৈচিত্র্য ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলকে প্রাকৃতিক সম্পদের অংশ হিসেবে সুরক্ষিত রেখে ক্ষতিকর শিল্পায়ন রোধ করব।

২০। নগরায়ন, পরিবহন ও আবাসন পরিকল্পনা

অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে আমাদের শহরগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আমরা রাজধানীসহ শহরগুলোতে নদী ও খালকেন্দ্রিক নগর ব্যবস্থাপনা এবং সমন্বিত উচ্চগতির গণপরিবহনমুখী ও নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তুলব। বায়ু দূষণ মোকাবেলা, সুপেয় পানির সুব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, খাল ও দখলকৃত জমি উদ্ধার, গ্রিন বেল্ট, জনপরিসর তৈরি করবো। পাশাপাশি নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের জন্য ভর্তুকিযুক্ত সামাজিক আবাসন ও এলাকাভিত্তিক বাড়ি ভাড়া নীতি কাঠামো তৈরির মাধ্যমে শহরগুলোকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বসবাসযোগ্য করে তোলা হবে। শহরাঞ্চলে বসবাসরত দরিদ্র ও ভাসমান জনগোষ্ঠী, যারা এখনও পর্যন্ত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে রয়ে গছেন, তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করবার উপর বিশেষ জোর দেয়া হবে। শুধু আধুনিকায়ন নয়, আমাদের নগর পরিকল্পনায় আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রাণ-প্রকৃতি এবং আমাদের সভ্যতাগত পরিচয় অক্ষুণ্ণ থাকবে। অন্যান্য শহরে নাগরিক সেবা, সরকারি পরিসেবা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে আমরা রাজধানী ঢাকার কার্যকর বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করবো। এছাড়া শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদানে আমরা নগর সরকারের ধারণা বাস্তবায়ন করবো। আমরা আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর ও সাশ্রয়ী করতে দেশের সব জেলাকে দ্রুতগতির ট্রেন ও এক্সপ্রেসওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসবো এবং সিভিল এভিয়েশনের পরিধি বাড়াবো। আঙ্গলিক বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবো। আমরা গ্রাম ও শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ ও সবুজ স্থান সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করবো।

২১। জলবায়ু সহনশীলতা ও নদী-সমুদ্র রক্ষা

আমরা একটি জলবায়ু-সহনশীল, দূষণমুক্ত ও পরিকল্পিত বাংলাদেশ গড়ব যেখানে নদী, বায়ু ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সবুজ-প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। বড়বড় শহর ও তার আশেপাশের এলাকাকে আমরা “No Brick-Kiln Zone” ঘোষণা করবো। এছাড়া আমরা সামাজিক বনায়নে বিশেষ গুরুত্বারোপ করবো। আমরা অপরিকল্পিত বালু-পাথর-খনিজ উত্তোলন ও বনজ সম্পদ ধ্বংস বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করব। উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু দুর্যোগ, লবণাক্ততা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধির ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জন্য আমরা নিরাপদ বাসস্থান ও অবকাঠামো নির্মাণ করব। নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়িয়ে জ্বালানি নিরাপত্তা ও পরিবেশ সংরক্ষণের টেকসই ভিত্তি গড়ে তুলব। আমরা সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, নদী ভাঙন ও বন্যা মোকাবেলায় টেকসই অবকাঠামো গড়ে তুলবো। আমরা আবহাওয়া ও দূর্যোগ পূর্বাভাস ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করব ও জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ফ্রেমওয়ার্ক বানাবো। বঙ্গোপসাগরে আমাদের সমদ্রসীমা ঘি রে একটি সুনীল অর্থনীতি গড়ে তুলবো ও বঙ্গোপসাগরের রাজনৈতিক হিস্যা দেশের জনগনের অভিপ্রায়ের মাধ্যমে নিশ্চিত করবো। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির ন্যায্য ক্ষতিপূরণ আদায়ে আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে কূটনৈতিক চাপ তৈরি করবো।

২২। প্রবাসী বাংলাদেশির মর্যাদা ও অধিকার

আমরা মনে করি প্রবাসী বাংলাদেশিরা কেবল রেমিট্যান্সের উৎস নন, তাঁরা রাষ্ট্রের সম্মান, সংগ্রাম ও পুনর্গঠনের অন্যতম অংশীদার এবং বিদেশে বাংলাদেশের দূত। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে দেড় কোটির বেশি প্রবাসী অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন, আমরা সেই অবদানকে যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করবো। আমরা প্রবাসী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা ও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতে কাজ করবো। কোন প্রবাসী শ্রমিক মারা গেলে তার মরদেহ হয়রানিমুক্তভাবে দেশে আনার ব্যবস্থা নেব এবং তার পরিবারকে সর্বপ্রকার সহায়তা প্রদান করবো। প্রবাসীদের জন্য ভোটাধিকার, দূতাবাস ও বিমানবন্দরগুলোতে হয়রানি-মুক্ত সেবা, জরুরি সহায়তা তহবিল, দেশে নিরাপদ বিনিয়োগ ও ডিজিটাল সরকারি সেবা নিশ্চিত করব। দেশে ফিরে আসা কিংবা সংকটে পড়া প্রবাসীদের জন্য থাকবে পুনর্বাসন ও সম্মানজনক কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত। আমরা মানবপাচার রোধ এবং বিদেশে বাংলাদেশী নাগরিকদের স্বার্থ ও মানবাধিকার সুরক্ষায় সুদৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। আমরা একই সাথে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় প্রবাসীদের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করব।

২৩। বাংলাদেশপন্থী পররাষ্ট্রনীতি

আমরা বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশের স্বার্থে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সবসময় দলীয় স্বার্থ ও সংকীর্নতার উর্ধে থাকবে। এনসিপি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি রক্ষার প্রশ্নে আপোষহীন থাকবে। আমরা পারস্পরিক সম্মান ও সম-মর্যাদার ভিত্তিতে বৈদেশিক সম্পর্ক গড়ে তুলবো এবং আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে যেকোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করব। সীমান্ত হত্যা বন্ধে ও আন্তর্জাতিক নদীসমূহের পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে পেতে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সর্বোচ্চ পর্যায়ে দৃঢ় ভূমিকা নেয়া হবে। আমরা দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক কূটনীতির মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট মানবিক সমাধান করব। আমরা মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রসমূহের সাথে সুদৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলবো। শান্তি, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, পরিবেশ রক্ষা, ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সার্ক, আসিয়ান, ওআইসি, ন্যাম, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সক্রিয় অংশীদারত্ব গড়ে তোলা হবে। শুধু মাত্র স্টেট এক্টর নয়, প্রতিটা দেশের আন্ত যোগাযোগ ও তাদের ইনসাফ নিশ্চিতকরণে পাবলিক ডিপ্লোম্যাসিকে গুরুত্ব দিবো। দক্ষিণ এশিয়া, গ্লোবাল সাউথসহ বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের প্রতি বাংলাদেশের থাকবে অকুণ্ঠ সমর্থন, সহযোগিতা ও সংহতি।

২৪। জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল

আমরা বিশ্বাস করি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ছাড়া কার্যকরী বৈদেশিক নীতি সম্ভব নয়। গণপ্রতিরক্ষা দর্শনের ভিত্তিতে আমরা তরুণ জনগোষ্ঠীকে একটি সংগঠিত সুশৃঙ্খল শক্তি হিসেবে দেশের সর্বাত্মক সেবায় উদ্বুদ্ধ করবো। আমরা অত্যাধুনিক সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেমের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবো। পাশাপাশি, সর্বাধুনিক ড্রোন প্রযুক্তি অধিগ্রহণ, দেশীয় সামরিক গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ এবং উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে একটি UAV (Unmanned Aerial Vehicle) ব্রিগেড গঠন করবো। একই সঙ্গে, আমরা আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সংহত করতে নন-নিউক্লিয়ার সেকেন্ড স্ট্রাইক সক্ষমতা অর্জন করবো এবং আমাদের নৌবাহিনীকে সাবমেরিন-ভিত্তিক একটি শক্তিশালী ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসেবে গড়ে তুলবো। আমাদের প্রতিরক্ষা কৌশলের কেন্দ্রে থাকবে নিজস্ব ভূ-প্রাকৃতিক গঠন, যা নদী-বিধৌত অঞ্চল ও বঙ্গোপসাগর-কেন্দ্রিক নিরাপত্তা চাহিদা মাথায় রেখে সুসমন্বিতভাবে গড়ে তোলা হবে। রাষ্ট্রীয় সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে, আমরা একটি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করবো। আমাদের সমন্বিত প্রতিরক্ষা নীতির কেন্দ্রে থাকবে সংসদীয় নজরদারি, নাগরিক অধিকার রক্ষা, এবং আঞ্চলিক শান্তি ও কূটনৈতিক ভারসাম্যের প্রতি প্রতিশ্রুতি।

এআর-০১/০৩/০৮ (জাতীয় ডেস্ক)

জুলাই সনদের ভিত্তিতেই আগামী নির্বাচন হতে হবে: নাহিদ ইসলাম

আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তবে এই সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।

নাহিদ বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র অবশ্যই সংবিধানের প্রস্তাবনা ও তপশিলে উল্লেখ করে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। পাশাপাশি জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতির সুরাহা হয়ে সব রাজনৈতিক এতে স্বাক্ষর করবে। আমরা বলেছি, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। এই সরকারের আমলেই এই সনদ কার্যকর করতে হবে।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই পদযাত্রায় আমরা গণহত্যার বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়েছিলাম। পাশাপাশি আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের কথা বলেছিলাম। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা জানতে পেরেছি, জুলাই ঘোষণাপত্রটি সরকার আগামী ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সব পক্ষ এবং রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ঘোষণা করতে যাচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের দাবি ছিলো, ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদের বিষয়টিও যেন সুরাহা হয়। যদিও ঐক্যমত্য কমিশন এখনো জানায়নি ‘নোট অব ডিসেন্টে’র বিষয়গুলোর সমাধান কী হবে।

গত বছরের ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকার পতন ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের দাবিতে এক দফা ঘোষণা করা হয়েছিলো। আগামীকাল রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের মাধ্যমে জুলাই পদযাত্রার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হবে। এই সমাবেশ থেকে নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার পাঠ করা হবে। সেখানে এনসিপির পক্ষ থেকে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা এবং কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বিকেল ৪টায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় তিনি এনসিপির নেতাকর্মীসহ সারাদেশের মানুষকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই সমাবেশে অংশগ্রহণ করা আহ্বান জানান।

রোববারের সমাবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, আগামীকাল এইচএসসি পরীক্ষা আছে। এছাড়া ছাত্রদলের সমাবেশ রয়েছে। তারা আমাদের অনুরোধে কর্মসূচি স্থানান্তর শাহবাগে নেওয়ায় তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। একই এলাকায় দুটি বড় কর্মসূচি থাকায় ভোগান্তি হতে পারে। একাধিক বড় সমাবেশের কারণে ঢাকাবাসী এবং এইসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছে অগ্রিম দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ৩ আগস্ট একটা ঐতিহাসিক দিন। এ কারণে এই দিনে এই সমাবেশ করছি আমরা। এই দিনের বিশেষ গুরুত্বের কারণে ছুটির দিনের বাইরে এটা করতে হচ্ছে। তবে আমাদের চেষ্টা থাকবে যেন মানুষের ভোগান্তি কম হয়।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, এই এক বছরে তার পূর্ণতা আমরা লক্ষ্য করিনি। জুলাই সনদের মধ্য দিয়ে সেই আকাঙ্ক্ষাটা আংশিক পূরণ হবে। দেশের একটা গণতান্ত্রিক সংস্কার হচ্ছে। কিন্তু অর্থনৈতিক সংস্কার, কর্মসংস্থান এবং মানুষের জীবনমানের পরিবর্তনের বিষয়গুলো নিয়ে এত অল্প সময়ের মধ্যে কাজ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এই সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে এনসিপির জন্ম। এই বিষয়গুলোই ৩ আগস্টের সমাবেশে উঠে আসবে।

এআর-০৩/০২/০৮ (জাতীয় ডেস্ক)

৫ আগস্ট সারাদেশে জামায়াতের গণমিছিল

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ৫ আগস্ট দেশব্যাপী গণমিছিল করবে জামায়াতে ইসলামী।

শনিবার (০২ আগস্ট) জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এক বিবৃতিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্রজনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী পালন উপলক্ষে পূর্ব ঘোষিত মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ৫ আগস্ট মঙ্গলবার জামায়াতে ইসলামীর সব মহানগরী ও জেলা শাখাকে শান্তিপূর্ণ গণমিছিল করার আহ্বান জানান।

গণমিছিল সফল করতে দলটির নেতাকর্মীদের ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে এবং সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে বলেন তিনি।

জামায়াতের গণমিছিলে দলটির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দেশের অন্য নাগরিককে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার। একই সঙ্গে তিনি কর্মসূচি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সহযোগিতা চান।

এআর-০২/০২/০৮ (জাতীয় ডেস্ক)

সংসদের মাধ্যমেই সংবিধান সংশোধন করতে হবে : আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সংবিধানে কোনো সংশোধনী আনতে হলে তা অবশ্যই সংসদের মাধ্যমেই করতে হবে। সংসদের বাইরে সংবিধান সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই।

শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর নীলক্ষেতে আইসিএমএবি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মরহুম আবদুল মান্নানের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণসভার আয়োজন করে মান্নান নিলুফার মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সংবিধান সংশোধন নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে। যদি সংবিধানে কোনো পরিবর্তন আনতেই হয়, তবে তা সংসদের মাধ্যমেই আনতে হবে। প্রতিটি দলকে এ বিষয়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হবে ও এই প্রক্রিয়া অবশ্যই সংসদীয় কাঠামোর ভেতরেই সম্পন্ন করতে হবে। স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কোনো পরিবর্তন আনতে হলে তা সংসদের বাইরের কোনো মাধ্যমে আনা যাবে না।

আমীর খসরু আরও বলেন, যারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত ও নির্বাচনকে প্রতিহত করতে চায়, তারা আসলে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা সংসদীয় ব্যবস্থাতেও বিশ্বাস করে না। এমনকি তারা নিজেরাও জানে না কী পদ্ধতি অনুসরণ করবে।

রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করে আমীর খসরু বলেন, আমরা যত সংস্কারই করি না কেনো, যদি আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে না পারি, তাহলে সব সংস্কার ব্যর্থ হবে। আমাদের অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহনশীল হতে হবে। একমাত্র এভাবেই আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে পারব। দেশের স্বার্থে ঐক্য দরকার, আর এই ঐক্য আমাদেরই গড়ে তুলতে হবে।

রাজনৈতিক ঐক্য প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, অনেকে বলছেন, জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর দলগুলোর মধ্যে ঐক্য ভেঙে গেছে। আমি তা দেখি না। প্রতিটি দলের নিজস্ব মতাদর্শ ও চিন্তা-ভাবনা থাকবে। যেটুকুতে আমরা একমত হতে পারব, ততটুকুতে এক হব, আর বাকি বিষয়গুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। জনগণই মালিক। তাদের কাছে বিষয়গুলো উপস্থাপন করতে হবে ও তাদের সিদ্ধান্তই সংসদে পাস করাতে হবে।

এআর-০১/০২/০৮ (জাতীয় ডেস্ক)