বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল ইউনিয়ন বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া এক ইউপি চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ নেতা ইউসুফ আলীকে (৬০) পিটিয়ে আহত করেছেন।
ঘটনার সময় ওই প্রবীণ নেতাকে বাঁচাতে গেলে গাছের ডাল দিয়ে আরও পাঁচজন নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করেন চেয়ারম্যানের সহযোগীরা। বুধবার বিকেলে উপজেলার গোহাইল ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সামনে এ মারপিটের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গোহাইল ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন মুকুলের বিরুদ্ধে সিনিয়র শিক্ষক আফজাল হোসেন জেলা শিক্ষা অফিসে একটি অভিযোগ দেন। ঘটনার দিন অভিযোগ তদন্ত করছিলেন বগুড়া জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আমান উদ্দিন মন্ডল। তদন্ত চলাকালে অন্যান্য শিক্ষকদের অনুরোধে স্কুলে যান গোহাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ নেতা ইউসুফ আলী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেনসহ আরও ৩-৪ জন নেতাকর্মী।
তদন্ত চলাকালে কয়েকটি ঘটনার সাক্ষী হওয়ার অপরাধে অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন মুকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেনের ওপর ক্ষিপ্ত হন। এরপর তিনি বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদার ফজুকে মোবাইলে কল দিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে বলেন।
সেখানে এসেই চেয়ারম্যান ফজু আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মারমুখি আচরণ শুরু করেন। ঘটনা থামাতে গোহাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউসুফ আলী উদ্যোগী হন।
তিনি চেয়ারম্যান ফজুকে সংযত আচরণ করার অনুরোধ জানালে ক্ষিপ্ত ফজু মোবাইলে কল দিয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ডাকেন। অবস্থা বেগতিক দেখে স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকরা শাজাহানপুর থানার পুলিশের ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদকে ফোনে বিষয়টি জানিয়ে সহযোগিতা চান। পরে শাজাহানপুর থানা পুলিশের একটি দল সেখানে আসে।
এদিকে, চেয়ারম্যান ফজুর ডাকে সাড়া দিয়ে যুবলীগ নেতা বাদশা আলমগীর, লিটন, আলমগীরসহ যুবলীগের অন্যান্য নেতাকর্মীরা ৮-১০টি মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে। এরপর পুলিশের সামনেই চেয়ারম্যান ফজুসহ তার বাহিনীর সদস্যরা গোহাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউসুফ আলী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী সেলিম হোসেন, আব্দুর রশিদ, বাদশা মিয়া, শিপলুসহ আরও কয়েকজনকে গাছের ডাল দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন শাজাহানপুর থানা পুলিশের এসআই সুশান্ত। তার সামনে এ ঘটনা ঘটলেও বাধা দেননি তিনি।
এ বিষয়ে এসআই সুশান্ত বলেন, তিনজনের পুলিশ ফোর্স নিয়ে যতটুকু সম্ভব পরিবেশ শান্ত করার চেষ্টা করেছি। পরে ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ, এসআই ছাম্মাকসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে গেলে পরিবেশ স্বাভাবিক হয়।
গোহাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি সেলিম হোসেন বলেন, নব্য আওয়ামী লীগ নেতা ফজু প্রথমে বিএনপির লোকজনকে দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে পিটিয়েছে। পরে তার অনুগত যুবলীগের একটি বাহিনীকে ডেকে নিয়ে দ্বিতীয় দফা মারপিট করে। দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে এমন আচরণ মোটেই সুখকর নয়। এরা দলের শত্রু।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইউসুফ আলী বলেন, আমি বৃদ্ধ মানুষ। এত বছর আওয়ামী লীগ করি, কখনো কেউ আমাকে মারধর করেনি। অথচ নতুন করে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তারা আমার গায়ে হাত তুললো। পুলিশের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনার শেষে আমাদের উদ্ধার করে তাদের গাড়িতে করে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে। এ ঘটনা জেলার নেতাদের জানানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
শাজাহানপুর উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতি আলী ইমাম ইনোকী বলেন, বিএনপি নেতা আলী আতোয়ার তালুকদার ফজু আওয়ামী লীগের ব্যানার ব্যবহার করে ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছেন। নব্য আওয়ামী লীগ সেজে বিএনপির লোকজন দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা থেকে শুরু করে ত্যাগী নেতাদেরকে মারপিট করছেন।
এর আগেও তিনি রাস্তার ইট তুলে নিয়ে গিয়ে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঘর বানান। এ ব্যাপারে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে সেই ইট আবার রাস্তায় রেখে যান। তার এসব অপকর্মের কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদার ফজু বলেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ তদন্ত করতে এলে স্থানীয় কিছু টাউট-বাটপার ঝামেলা সৃষ্টি করে। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে অধ্যক্ষের ফোন পেয়ে সেখানে যাই। তদন্তকারী কর্মকর্তা বাদী ও বিবাদীকে উপস্থিত থাকতে বলেছেন। সেখানে বাইরের লোকজনের উপস্থিতি দেখে তাদের কাছে কারণ জানতে চাইলে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এ সময় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। তবে আমি কাউকে মারপিট করিনি।
থানা পুলিশের ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পাঠিয়ে পরিবেশ শান্ত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ইউপি চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদার ফজু দীর্ঘদিন ধরে গোহাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে জেলা বিএনপির গ্রুপিংয়ের কারণে পদ থেকে ছিটকে পড়ে যান।
বিএনপির প্রার্থী হতে না পেরে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্তের দিন ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং বিজয়ী হন। এর আগে বিএনপি নেতা থাকাকালীন চারবার গোহাইল ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।
বিএ-১৫/০৯-০৫ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)