সরকারের আহম্মকী ও শ্রমিকদের চরম ভোগান্তি!

শ্রমিকদের

জি. এম. মুরতুজা: দেশে চলছে সরকার ঘোষিত লকডাউন। সকল ধরণের যানবহন চলাচল বন্ধ। এরমধ্যেই সরকার আগামী ১ আগষ্ট থেকে পোশাক কারখানা খোলার অনুমতি দিয়েছে। সুযোগে থাকা পোশাক কারখানার মালিকগণও তাই শ্রমিকদের আগামী ১ আগষ্ট কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশনায় চরমভাবে বেকায়দায় ও ভোগান্তিতে পড়েছেন লাখ লাখ পোশাক শ্রমিক।

ঈদের ছুটিতে এসব শ্রমিকরা দেশের বিভিন্ন জেলায় স্ব স্ব বাড়ীতে অবস্থান করছিলেন। কারখানার মালিকদের নির্দেশ পাওয়ার পর তাই লাখ লাখ শ্রমিক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় যাওয়া শুরু করেছেন। দুরপাল্লার যানবহন চলাচল বন্ধ থাকায় তাদের পড়তে হচ্ছে চরম বেকায়দায়। কিন্তু কারখানায় কাজে যোগ না দিলে চাকুরী চলে যাওয়ার ভয়ে এসব শ্রমিকরা বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই পায়ে হেটে, অটো রিক্সায়, পন্যবাহী পিকআপ ভ্যান ও ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন ঢাকায়। এরফলে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট দিয়ে ঢাকামুখী বিভিন্ন জেলার মানুষের ঢল নেমেছে। ঠিক একইভাবে সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কে ঢাকামুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড়।

প্রথমত: চাকুরী বাঁচাতে এসব শ্রমিকরা যেকোন উপায়ে গাদাগদি করে ঢাকায় যাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পক্ষে সামাজিক দূরুত্ব মানার কোন লক্ষন নেই, মানা সম্ভবও নয়। বেশীরভাগ মানুষের মুখে নেই মাস্কও। ফলে সবাই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই ঢাকায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

দ্বিতীয়ত: ঢাকায় ফেরার কোন ব্যবস্থা না করেই আগামী ১ আগষ্ট শ্রমিকদের কারখানায় কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশনা দেয়ায় তাদের মধ্যে প্রচন্ড অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্ত রুটিরুজি সাথে তাদের ঢাকায় ফেরার বিষয়টি সম্পৃক্ত থাকায় তারা ক্ষোভ বুকে চেপে রেখেছেন।

সরকারের উচিত ছিল, পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই এসব শ্রমিকদের ঢাকায় নিরাপদে ফিরে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে বাস চলাচল করার ব্যবস্থা করা। যাতে পরিচয়পত্র দেখিয়ে এসব শ্রমিকরা বাসে চড়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকায় ফিরতে পারে। এতে এই লাখ লাখ পোশাক শ্রমিককে প্রচন্ড ভোগান্তি ও হয়ারনীতে পড়তে হতো না।

কিন্তু সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে কারনে চরভাবে খেসারত দিতে হচ্ছে এসব শ্রমিকদের। পোশাক কারখানার মালিকদেরও উচিত ছিল এসব শ্রমিকদের নিরাপদে ঢাকায় ফিরে যাওয়ার জন্য সরকারের সাথে এ্যাডভোকেসী করে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বাস চলাচল চালু করার। কিন্তু মালিকদের পক্ষ থেকেও এমন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। পোশাক শ্রমিকদের রক্তঘামে মালিকরা কোটি কোটি টাকার মুনাফা করেন।

অথচ শ্রমিকদের স্বার্থ দেখে না। আবার নিদিষ্ট সময়ে কারখানায় কাজে যোগ না দিলে চাকুরীচ্যুতির ভয় দেখায় শ্রমিকদের। ফলে নিরুপায় হয়ে শ্রমিকরা এখন শত কষ্ট আর ভোগান্তি মাথায় নিয়ে ঢাকায় ছুটছেন কাজে যোগ দিতে। সরকারের আহম্মকীপনায় বারবার চরম ভোগান্তি ও হয়রানীর সম্মুখিন হচ্ছেন এসব সাধারণ মানুষ। সরকারের নিকট মানবিকতা বলে কি কিছু নেই?