সাবধান- এখন শিশুরাও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে!

শিশুরাও

জি. এম. মুরতুজা: ছবিতে যেসব কোমলমতি শিশুদের দেখছেন এরা সবাই করোনায় আক্রান্ত। অত্যন্ত আশংকার বিষয় হচ্ছে দেশে এখন শিশুরাও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। এবং শিশুদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গত ২৬ জুন মাত্র ৪৫ দিনের এক নবজাতক শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। শিশুটির নাম আফরিন রহমান। তার বাড়ী রাজশাহী মহানগরীর ছোট বনগ্রাম বড় রাস্তার মোড় এলাকায়। যথাযথ চিকিৎসা নেয়ায় নবজাতক এই শিশুটি এখন অবধি সুস্থ আছে বলে জানা গেছে। ৫ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা’র ৭ বছরের শিশু প্রজন্ম প্রকৃতি এবং ২ বছরের শিশু প্রাঙ্গন প্রতিকৃত।

৭ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের ডাক্তার রাকিবুজ্জামান চৌধুরীর দুই শিশু সন্তান রিদওয়ান জামান চৌধুরী ও রিজওয়ান জামান চৌধুরী। তাদের বয়স যথাক্রমে ১০ ও ৩ বছর। অন্যদিকে ডিবিসি নিউজ-এর রাজশাহী ব্যুরো প্রধান সৌরব হাবীবের আড়াই বছরের শিশুকন্যা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। শিশুটির নাম শুভেচ্ছা সৌরভ। গত ৩ জুলাই মিডল্যান্ড ব্যাংক-রাজশাহী শাখার ম্যানেজার সামিউল করিমের ৯ বছরের শিশু সন্তান সাফওয়ান করিম সাফিন-এর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া গত ২৮ জুন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন নুরজাহান খাতুন অনিয়া নামের ৩১ বছরের এক গৃহবধু। তার দুই শিশু সন্তানও করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।

এই উদহারণগুলো থেকে সহজেই বোঝা যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় নবজাতক শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের শিশুরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। এসব শিশুরা পরিবারের অন্যান্য সংক্রমিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। অথচ আমাদের সমাজের বেশীরভাগ মানুষেরই ধারণা শিশুরা করোনায় আক্রান্ত হবে না।

অনেক চিকিৎসকও বলেছেন, শিশুদের করোনায় সংক্রমনের সম্ভাবনা কম। কিন্তু এসব ধারণাকে ভুল প্রমান করে এখন দেখা যাচ্ছে, পরিবারের বড়দের মাধ্যমে শিশুরাও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। এই বিষয়টি খুবই মারাত্বক এবং উদ্বেগজনক। কেননা বর্ষাকালের স্যাতস্যাতে আবহাওয়ায় শিশুরা এমনিতেই ঠান্ডাজনতি রোগে আক্রান্ত হয়, যার লক্ষনগুলো সাধারণত করোনার লক্ষনের সাথে মিলে যায়।

কাজেই সকলের উচিত হবে, শিশুদেরও করোনার সংক্রমন থেকে বাঁচানোর জন্য তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা। বিশেষ করে যেসব বাসায় করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি থাকবেন, তাদের বাসায় শিশুদের অতি সাবধানে রাখা, যেন বাসার শিশু সন্তানরা কোনক্রমেই করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসে।

আবার যেসব শিশু এই সময়ে জ্বর ও সর্দি জাতীয় রোগে আক্রান্ত হবে, তাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেকোন শিশুর জ্বর ও সর্দি বাড়লে দ্রুত করোনা টেষ্ট করিয়ে নিতে হবে। কেননা শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম। ফলে শিশুরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর দীর্ঘসময় চিকিৎসাবিহীন থেকে গেলে, তাদের মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে।

কাজেই সকলের প্রতি অনুরোধ সবাই সাবধানে থাকুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সম্ভব হলে সবসময় বাসাতেই থাকুন। আর আপনাদের শিশুদেরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করুন। এই মহাদূর্যোগকালে শিশুদের বাড়ীর বাইরে বেরুনো থেকে বিরত রাখুন। আমাদের একটু ভুলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখে পড়তে পারে আমাদের অতি আদরের শিশু সন্তান। ফলে শিশুদের প্রতি এখন বিশেষভাবে যত্ন নিন। দেশের সকল শিশু ভাল থাকুক, সুস্থ থাকুক, নিরাপদে থাকুক- এটাই একমাত্র কামনা ও প্রার্থণা করি।