করোনায় মৃত স্ত্রীর লাশ নিয়ে কাঁদছিলেন স্বামী, দাফন করলেন ইউএনও !

কাঁদছিলেন

জি. এম. মুরতুজা: কয়েক দিন আগে করোনায় আক্রান্ত হোন শাহ আলম ভূঁইয়া এবং শাহনাজ বেগম নামক এক বৃদ্ধ দম্পতি। তাদের বয়স যথাক্রমে ৬০ ও ৫০ বছর। থাকেন চাঁদপুর শহরের ট্রাক রোডের খানবাড়ি এলাকায়। তাদের দুই পুত্র সন্তান থাকেন দুবাইয়ে। আর একমাত্র মেয়ে থাকেন আমেরিকায়। বাড়ীতে তাদের দেখাশুনা কিংবা সেবা দেয়ার নেই কেউ। গত এক সপ্তাহধরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বাড়ীতে দিন কাটাছিলেন তারা।

এই বৃদ্ধ দম্পতিকে হাসপাতালে নিতে এগিয়ে আসেনি কোন আত্বীয়স্বজন কিংবা প্রতিবেশী। ফলে বিনা চিকিৎসায় তারা বাড়ীতে পড়েছিলেন। সোমবার সকাল ৯টার দিকে করোনায় কেড়ে নেয় শাহনাজ বেগমের জীবন। স্ত্রীকে হারিয়ে ঘরের মধ্যে একা বিছানায় শুয়ে চিৎকার করে কাঁদছিলেন শাহ আলম ভূঁইয়া। বেশ কয়েক ঘন্টা তার কান্নার আওয়াজ শুনেও প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেনি তাদের খোঁজ নিতে। জনাব শাহ আলম নামে স্থানীয় এক গণমাধ্যমকর্মী এই মর্মাত্মিক ঘটনাটি জানার পর ফোন দিয়ে জানান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব সানজিদা শাহনাজকে। খবর পেয়ে তিনি ছুটে আসেন শাহ আলম ভূঁইয়া’র বাড়ীতে।

দেখেন শাহ আলম ভূঁইয়া’র শাররীক অবস্থা খুবই শোচনীয়। অবস্থা বেগতিক দেখে জনাব সানজিদা শাহনাজ দ্রুত এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসে শাহ আলম ভূঁইয়াকে মুমূর্ষ অবস্থায় পাঠান সদর হাসপাতালে। এছাড়া তিনি নিজ উদ্যোগে মৃত অবস্থায় বাড়ীতে পড়ে থাকা শাহনাজ বেগমকে নিকটস্থ গোরস্তানে দাফনের ব্যবস্থা করেন।

এমন মানবিক কাজটি করায় আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানায় ইউএনও সানজিদা শাহনাজকে। আপনি একজন যোগ্য প্রশাসকের পরিচয় দিয়েছেন। মানুষ হিসেবেও আপনি মহত্বের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। অথচ আপনারই একজন সহকর্মী মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুনা লায়লাকে “আপা” বলে সম্বোধন করাই পিটানো হয়েছে তপন চন্দ্র দাশ নামক এক ব্যবসায়ীকে।

কত পার্থক্য আপনাদের দুই জনের মধ্যে। একজন মহত্বের পরিচয় দিয়ে সবাইকে ধন্য করেন। অন্যজন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে মানুষের ধিক্কার কুড়ায়। বাংলাদেশের প্রতিটি প্রশাসক যদি সানজিদা শাহনাজ অথবা খালেদা খাতুন রেখা-এর মত মানবিকতা ও মহত্বের পরিচয় দিতো, তবে সাধারণ মানুষ সত্যিই উপকৃত হতো। অনেক খারাপ সংবাদের পরেও সানজিদা শাহনাজ অথবা খালেদা খাতুন রেখা-এর মত তরুণ প্রশাসকগন আমাদের আশা দেখান, স্বপ্ন দেখায়। আশা করি সকল প্রশাসক তাঁদের মত মানবিক হয়ে উঠবেন।