করোনা প্রতিরোধে মডেল চাঁপাই নবাবগঞ্জ!

করোনা

জি. এম. মুরতুজা: করোনা মহামারী প্রতিরোধে গত বছর মডেল ছিল রাজশাহী। রাজশাহীর সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করে সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহীকে গত বছর অনেকটা করোনামুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। মূলত: জনাব লিটনের প্রজ্ঞা, বিচক্ষনতা ও দায়িত্বশীল নেতৃত্বের কারনে গত বছর রাজশাহীর মানুষ করোনার ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। কিন্তু দৃশপট পাল্টে গেছে এবার। গত বছরের মডেল রাজশাহী এখন করোনা সংক্রমনের হটস্পট। আর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হচ্ছে এখন করোনায় মৃত্যুপুরি।

অথচ মাত্র কিছুদিন আগেও করোনা সংক্রমনের হটস্পট ছিল চাঁপাই নবাবগঞ্জ। ২৪ মে পর্যন্ত এই জেলায় করোনা সংক্রমনের হার ছিল ৬২ থেকে ৬৬ শতাংশ। কিন্তু মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে এই জেলায় সংক্রমনের হার নেমে এসেছে ১০ শতাংশে। এই সংক্রমনের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে মূখ্য ভূমিকা হচ্ছে জনপ্রতিনিধি, প্রসাশন, সামাজিক ও বেসরকারী সংগঠন এবং জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ। প্রথমে চাপাইনবাবগঞ্জ- ১ আসনের সাংসদ ডা: সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল তার নির্বাচনী এলাকা শিবগঞ্জে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, বেসরকারি সংস্থা এবং নারী-পুরুষ-তরুণসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সংগঠিত করে করোনা সংক্রমন মোকাবেলায় কাজ শুরু করেন। বলতে গেলে তিনি একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছেন।

ডা: শিমুলকে অনুসরণ করে জেলার অন্যান্য এলাকার সাংসদ জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে সামাজিকভাবে করোনা প্রতিরোধে কৌশল নির্ধারণ করেন। বিশেষ করে তরুণদের নিয়ে পাড়া-মহল্লায় কমিটি গঠন করে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালান। এসব কমিটি মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ব মানা ও মানুষকে বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে নিরুৎসাহিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। এর ফল হচ্ছে মাত্র তিন সপ্তাহে পুরো চাঁপাই নবাবগঞ্জে করোনার সংক্রমন দ্রুত কমতে শুরু করেছে।

গত বছরের রাজশাহীর চিত্র এবং এখনকার চাঁপাই নবাবগঞ্জের অবস্থা সৃষ্টির পেছনে কিন্তু মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন সিটি মেয়র জনাব লিটন এবং সাংসদ ডা: শিমুল অর্থাৎ জনপ্রতিনিধি। কাজেই একজন জনপ্রতিনিধি যদি আন্তরিক, বিচেক্ষন ও প্রজ্ঞাবান হোন তাহলে করোনার মত মহামারী মোকাবেলা অনেক সহজ হয়ে যায়। এই দুই জনের উদহারন তার বাস্তব প্রমান। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে সিটি মেয়র লিটন এই বছর করোনা সংক্রমন বাড়ার পরই থেকে কেন যেন উদ্যোমী এবং অগ্রমান ভূমিকায় অবতীর্ণ হোননি। গত বছরের মত বলিষ্টতা ও আন্তরিকতা দেখাননি। তার ফল হচ্ছে রাজশাহীর করোনা সংক্রমনের হটস্পটে পরিনত হওয়া। করোনায় মানুষের মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে উঠা।

সামনে কোরবানীর ঈদ। করোনা সংক্রমন যে হারে বাড়ছে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে। শুধুমাত্র সরকার ঘোষিত লকডাউন এবং প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচেষ্টায় রাজশাহীতে ক্রমবর্ধবান সংক্রমনকে কমিয়ে আনা কোনভাবেই সম্ভব হবে না। কাজেই সিটি মেয়র জনাব লিটনের কাছে রাজশাহীবাসীর পক্ষ থেকে আমাদের আকূল নিবেদন, দয়া করে আপনি করোনা মহামারী প্রতিরোধের নেতৃত্বটি আপনার হাতে তুলে নিন। আপনি উদ্যোগী হোন। আপনার প্রজ্ঞা ও দায়িত্বশীল নেতৃত্ব দেশবাসীকে আবার দেখিয়ে দিন। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, অন্যান্য জনপ্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠন, বেসরকারী সংস্থাসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ এবং তরুণ যুবাদের সম্পৃক্ত করে সামাজিকভাবে করোনা প্রতিরোধে কার্যকর কৌশল নির্ধারণ করেন। পাড়া মহল্লায় কমিটি গঠন করে ব্যাপক প্রচারাভিযান শুরু করুন। মানুষকে মাস্ক পরতে ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদ্বুদ্ধ করুন। সকল স্তরের মানুষকে আলোড়িত ও উজ্জীবিত করে তোলেন। কোরবানীর ঈদে পশু জবাই, চামড়া ব্যবস্থাপনাসহ সামগ্রিকভাবে যেসব ঝুঁকি আছে সেসব বিষয়ে মানুষকে এখন থেকেই সর্তক করে তোলেন। আমার বিশ্বাস আপনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলে ডা: শিমুল চাঁপাই নবাবগঞ্জে যে কাজটি করে দেখিয়েছেন, আপনি তার চেয়েও দ্রুততম সময়ে রাজশাহীতে করোনা সংক্রমন নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আনতে সক্ষম হবেন। আবার রাজশাহীকে করোনা প্রতিরোধে মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবেন। আপনার উপর সেই বিশ্বাস, আস্থা এবং ভরসা শুধুমাত্র আমার নয়, রাজশাহীর সকল মানুষেরই আছে। আর আমরা আছি আপনার সাথে সবসময়, সবখানে।