আমার বলতে না পারা কথাটি বললেন মন্ত্রী!

জি. এম. মুরতুজা: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম এমপি তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন- ‘যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য মজুদ আছে এবং যথেষ্ট অর্থও আছে। যে কারও খাদ্য সংকট দেখা দিলে তাকে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করতে বলুন, খাদ্য চলে যাবে। সরকার প্রবর্তিত এই ব্যবস্থার সুবিধা নিতে জানতে হবে, সবাইকে জানাতে হবে। আবার সেই সাথে জনপ্রতিনিধিদের তাদের নিজস্ব এলাকায় এই ব্যবস্থার সুবিধা সম্পর্কে তথ্য পৌঁছে না দিয়ে “লোক সমাগম করে খাদ্য বিতরণ থেকে বিরত থাকা উচিত”। ৩৩৩ তে ফোন করে খাদ্য সামগ্রী না পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এটা সত্য করোনা প্রতিরোধে দীর্ঘদিন লোকডাউন চলায় নিম্নআয়ের মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছেন। ফলস্বরূপ খাদ্য সংকটে থাকা মানুষ আশা করেছিলেন ও করছেন যে, গত বছরের মত সরকারের পক্ষ থেকে এবং রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিগণ তাদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে খাদ্য পৌঁছে দিবেন।

এমনভাবে খাদ্য বিতরণকালে কত পরিমানে যে অনিয়ম ও দূর্নীতি করা হয়, তার কথা আমরা মূলধারার গনমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেনেছি। আমার মনে হয় এটা রোধ করার জন্যই হয়তো সরকার এবার ৩৩৩ হটলাইন নম্বর চালু করেছে, যাতে সত্যিকার অর্থে যারা খাদ্য সংকটে আছেন, কেবল তারাই যেন খাদ্য সরবরাহ পান। আর ৩৩৩ নম্বরে ফোন দিয়ে কেউ খাদ্য সহায়তা না পেলে যে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে, এটাও জনাব শাহরিয়ার আলম স্পষ্টত বলেছেন।

কিন্তু মাঠ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিগন এখনও শত শত মানুষকে মাঠে সমাবেত করে প্রধানমন্ত্রীর নামে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন। এতে দুটা শংকা তৈরী হচ্ছে।

প্রথমত: এই মহামারীকালে যতই স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাদ্য বিতরনের কথাই বলা হোক না কেন, যখন এক সাথে শত শত মানুষকে এক জায়গায় ঢেকে এনে খাদ্য দেয়া হচ্ছে তখন যে কি পরিমানে জটলা তৈরী হচ্ছে, তাতে স্বাস্থ্যবিধি কোনভাবেই মানা সম্ভব হয় না। এটা সাদা চোখে দেখলেই বোঝা যায়। ফলে একসঙ্গে এত মানুষের সমাগম হওয়ায় তাদের অনেকেই করোনায় সংক্রমিত হতে পারেন।

দ্বিতীয়ত: এই যে শত শত লোককে এক জায়গায় ঢেকে এনে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে, তাদের বেশীর ভাই কিন্তু রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিদের মুখ চেনা। ফলে সত্যিকার অর্থে খাদ্য সহায়তা যাদের দরকার তারা কিন্তু এই তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছেন। তার মানে এখানেও স্বজনপ্রিতীর বিষয়টি থেকে যাচ্ছে।

এরজন্যই সরকার দরিদ্রদের খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য ৩৩৩ হইলাইন চালু করেছেন। এটা কিন্তু রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিগণ খুব একটা প্রচার করছেন না। একারনেই বোধ হয় জনাব শাহরিয়ার আলম তাঁর ফেসবুক পোষ্টে বলেছেন, “জনপ্রতিনিধিদের তাদের নিজস্ব এলাকায় এই ব্যবস্থার সুবিধা সম্পর্কে তথ্য পৌঁছে না দিয়ে, লোক সমাগম করে খাদ্য বিতরণ থেকে বিরত থাকা উচিত”। বর্তমান মহামারীকালে আমি তাঁর এই কথার সাথে সম্পূর্ণ একমতপোষণ করছি উপরে বর্ণিত দুটি আশংকা থেকে।