দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে তথ্যবিভ্রাট !

দেশে

জি. এম. মুরতুজা: সারা দেশে প্রতিদিন করোনা সংক্রমিত হয়ে কতজন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যে তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে- এটা আংশিক এবং খন্ডিত। প্রতিদিন করোনায় সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা আরো অনেক বেশী। উদহারন হিসেবে বলা যেতে পারে- রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডগুলোতে ২৪ ঘণ্টায় (২৮ জুন সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার ২৯ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত) ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতালের সূত্র অনুযায়ী, এই ২৫ জনের মধ্যে করোনা পজিটিভ হিসেবে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এই দিন কেবল ৯ জনের মৃত্যুকেই সরকারী তালিকাভূক্ত করা হয়েছে, বাকি ১৬ জনের মৃত্যুকে তালিকাভূক্ত করা হয়নি। অথচ এই ১৬ জন বেশ কয়েকদিন ধরে হাসাপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং তাদের করোনা’র চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল।

এমনভাবে দেশের যেসব হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে, এগুলোতে করোনা পজিটিভ ব্যক্তির মৃত্যুকেই কেবলমাত্র তালিকাভুক্তি করে স্বাস্হ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। অথচ এসব হাসপাতালগুলোতে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত মানুষের সংখ্যা তালিকাভুক্ত করা হলে প্রতিদিন দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে যেত।

এটাতো গেল কেবলমাত্র হাসপাতালের হিসাব। এর বাইরে প্রতিদিন করোনা উপসর্গ নিয়ে আরো অনেক মানুষ এসব হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের অনেকে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই পথের মধ্যেই মারা যাচ্ছেন। আবার অনেকে হাসাপাতালে এসে চিকিৎসা সেবা নেয়ার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করছেন।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় করোনার উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন আরো অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এই যে করোনা উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন দেশে এত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তাদের প্রত্যেকের করোনা টেষ্ট করানো হলে অনেকেরই করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসতো। এসব মৃত্যুগুলোকে তালিকাভুক্ত করা হলে দেশে প্রতিদিন ৪০০ জনেরও বেশী মানুষের করোনায় মৃত্যু হিসেবে গণ্য হতো।

সবচেয়ে মারাত্মক বিষয়টি হচ্ছে, যে সব মানুষ করোনার উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন মৃত্যুবরণ করছেন, তাদের মৃত্যুর পর করোনা টেষ্ট করা হচ্ছে না। ফলে এটা জানা সম্ভব হচ্ছে কতজন মৃত ব্যক্তি সত্যিই করোনায় সংক্রমিত ছিল।

এটা জানা সম্ভব হলে, যে সব ব্যক্তি সত্যিই করোনা সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের পরিবারের সদস্যগণও করোনা টেষ্ট করিয়ে তাদের স্ট্যাটাস জানতে সক্ষম হতেন। এতে দেশে সত্যিকার অর্থে প্রতিদিন কতজন মানুষ করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে তার সঠিক তথ্যটিও জানা সম্ভব হতো।

কাজেই অতি সাধারণ হিসাবে চিন্তা করলে বা বিবেচনা করলে, এটা সুস্পষ্টভাবেই অনুধাবন করা যাচ্ছে যে, স্বাস্হ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রতিদিন করোনা সংক্রমিত মৃত মানুষের যে তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে তা খন্ডিত এবং আংশিক। কাজেই হাসপাতালগুলোর উচিত হবে করোনা উপসর্গ নিয়ে যারাই মৃত্যুবরণ করছেন, তাদের প্রত্যেকের করোনা টেষ্ট করানো।

এতে করোনায় মৃত্যুর সঠিক তথ্য জানা সম্ভব হবে। অন্যদিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা যে সব ব্যক্তির করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসবে, তাদের পরিবারের সদস্যরা সচেতন ও সজাগ হওয়ার সুযোগ পাবেন। আমার মনে সরকারের উচিত হবে দ্রুত এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়া।