সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবি, না হলে প্রতীকী ক্লাস

সেপ্টেম্বরের

সব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। আজ মঙ্গলবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় না খুললে প্রতীকী প্রতিবাদ কর্মসূচি হিসেবে শিক্ষকরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতীকী ক্লাস নেওয়া শুরু করবেন। আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টেস্ট এবং টিকাদানের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে হলে প্রবেশ করা শিক্ষার্থীরা কোভিড টেস্ট এবং টিকাগ্রহণে অগ্রাধিকার পায়। ক্যাম্পাসে ব্যবস্থা করা গেলে সবচেয়ে ভালো হয়। এতে শিক্ষার্থীরা ভিড় এড়িয়ে টিকা নিতে পারবে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক আয়োজিত এই অনলাইন সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গীতি আরা নাসরীন। বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন— জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল হাসান মামুন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জের শিক্ষক আরাফাত রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী মারুফুল ইসলাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসির উদ্দিন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে আরও যুক্ত ছিলেন মানস চৌধুরী, রবিউল আলম, ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা, তপন মাহমুদ লিমন, বখতিয়ার আহমেদ, মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, সামিনা লুৎফা, রুশাদ ফরিদী ও সৌভিক রেজা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত এক বছর ধরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমরা হতাশ হয়েছি কারণ আমাদের আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে, যথেষ্ট পূর্ব-প্রস্তুতি ছাড়াই অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ফেলা হয়েছে নানা প্রকারের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে। এটি নতুন অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। অনলাইন লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করে নিজস্ব সামর্থ বৃদ্ধি না করে গুগল ক্লাসরুমের মাধ্যমে এবং কনফারেন্সিং অ্যাপ জুমে এক ধরনের জোড়াতালি দিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সারা বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই (অনেক দেশে সংক্রমণের হার আমাদের থেকে বেশি থাকা অবস্থাতেও) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নানাভাবে খোলা ছিল। ইতালি, ইংল্যান্ড কিংবা আমেরিকায় যখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছিলো তখনও এসব দেশ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়নি। যেখানে লকডাউন বা রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয় সেসব জায়গায় কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল যদিও অনলাইন ক্লাস চালু ছিল। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও কখনো পুরো দেশজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাখা হয়নি। যেখানে সংক্রমণ বেশি খারাপ সেখানে স্কুল সাময়িক বন্ধ রেখেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা মনে করি, বাংলাদেশে শিক্ষায়তন খুলে না দেবার মনোভাবটি পাবলিক শিক্ষাকে দুর্বল বা অনুপযুক্ত দেখানোর অভিপ্রায় থেকে আসতে পারে। এই মনোভাবটি নীতিনির্ধারক পর্যায়ে নতুন কিছু নয়। তবে করোনা উপলক্ষে এই ধরনের মানসিকতা একটি নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা মনে করি, সব কিছু খুলে কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার মাধ্যমে আমরা জাতি হিসেবে শিক্ষার প্রতি এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রতি অন্যায় করছি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম কীভাবে চালু করা যায় সে বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হলে ফেরার সুযোগ করে দিতে হবে। আবাসিক হলে প্রথমে শুধু অনার্স এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা, যারা তাদের শিক্ষা জীবনের শেষের দিকে রয়েছে তাদের ওঠার অনুমতি থাকবে। আবাসিক হলে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত না করে কোনোভাবে এই পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা যাবে না।

ছাত্রাবাসগুলোতে যাতে শুধু শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলে অবস্থান করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্যাম্পাসগুলোতে অবস্থিত মেডিকেল সেন্টারগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, আইসোলেশনের ব্যবস্থা, অসুস্থ হলে শিক্ষার্থীদের দেখাশোনার ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। সর্বশেষ ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে তাদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনার সেফটি নেটের ব্যবস্থা করতে হবে।

এসএইচ-১৫/২৪/২১ (শিক্ষা ডেস্ক)