পাকিস্তানি নাটকে ঝুঁকছে বাংলাদেশি দর্শক

আশি ও নব্বইয়ের দশকে শুধুমাত্র বিটিভি থাকার কারণে বাংলা নাটকের দর্শকের সংখ্যা ছিল বেশি। ২০০০ সালের পর থেকে ডিশ লাইন বা ক্যাবল কানেকশন সহজলভ্য হতে শুরু করলে বিদেশি ভাষার নাটকের প্রতি সবার আকর্ষণ জন্মাতে শুরু করে। বর্তমানে পাকিস্তানি ড্রামা সিরিয়ালের প্রতি চরমভাবে ঝুঁকেছে বাংলাদেশি দর্শকরা।

২০০০ সালের পর থেকে ভারতীয় সিরিয়ালের বেশ বড় ধরনের প্রভাব দেখা যায়। প্রথমে হিন্দি সিরিয়াল, পরবর্তীতে ভারতীয় বাংলা সিরিয়াল। পাশাপাশি কয়েক বছর আগে বিভিন্ন চ্যানেলে বাংলায় ডাবিংকৃত তুর্কি সিরিয়াল প্রচার শুরু হলে অনেক দর্শক সেদিকেও ঝুঁকেছেন। আর ২০২০ সালে করোনার লকডাউনের সময় হতে নতুন এক ইন্ডাস্ট্রির নাটকে মজেছে দর্শকরা, আর তা হলো পাকিস্তানি ড্রামা সিরিয়াল।

রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের কোনো চ্যানেলে পাকিস্তানি নাটক প্রচারের অনুমতি নেই। ক্যাবল মালিক-সমিতিরও পাকিস্তানি স্যাটেলাইট চ্যানেল ব্রডকাস্টিংয়ের পারমিশন নেই। কিন্তু ইউটিউবে এদেশের অসংখ্য মানুষ পাকিস্তানি ড্রামা দেখছেন, যার নমুনা দেখা যায় সেখানে তাদের করা কমেন্টে। আর পাকিস্তানি ড্রামা বেইসড একাধিক বাংলাদেশি ফেসবুক গ্রুপের ব্যাপক এক্টিভিটিতে বোঝা যায় কতটা ‘আসক্ত’ হয়েছে দেশের মানুষ।

পাকিস্তানি ড্রামা সিরিয়ালের প্রতি আসক্ত হওয়ার কারণ অনেক। ভালো গল্প, সুশ্রী নায়ক নায়িকা, ন্যাচারাল লুক, শালীন, স্টাইলিশ পোশাক, সংলাপ, কালার গ্রেডিং, সুন্দর লোকেশন, ক্যামেরার কাজ এবং বড় বাজেট ও নির্মাণশৈলী।

পাকিস্তানে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে আর বাংলাদেশেরও অধিকাংশ মানুষ মুসলিম। তাই পাকিস্তানি সিরিয়ালের প্রতি এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক নৈকট্য তারা বোধ করে। সেটা থেকে এক ধরনের আগ্রহ তৈরির কারণে এর দর্শক বেড়েছে। মেরে হামসাফার, দিওয়াঙ্গী, ক্যায়সে তেরা খুদগার্জি, ইয়ে দিল মেরা, খামোশি সহ অসংখ্য পাকিস্তানি সিরিয়ালের প্রচুর দর্শক তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে।

এমনিতেই দেশের নাটক ইন্ডাস্ট্রি অনেক বছর ভুগেছে ভারতের সিরিয়ালগুলোর দৌরাত্ম্যের কারণে। বর্তমানে নতুন করে যুক্ত হয়ে পাকিস্তানি নাটক। দেশেও এখন প্রচুর নাটক তৈরি হচ্ছে, ভালো নাটকও হচ্ছে অনেক, কিন্তু দর্শক টানতে পারছে না। পাকিস্তানি নাটকগুলো ইউটিউবে সহজেই দেখা যায় বলে কেউ টিভিতে আর দেশের নাটক দেখছেন না।

হিন্দি সিরিয়াল, কলকাতার বাংলা সিরিয়াল আর এখন পাকিস্তানি সিরিয়াল। সন্দেহাতীতভাবে বিদেশি এই সিরিয়ালগুলো নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে। যদিও বিদেশি সিরিয়ালের নেতিবাচক দিক নিয়ে বহুদিন ধরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। কিন্তু এতে পরিবর্তন হয়নি, বরং বেড়েছে এর দর্শক সংখ্যা। এর পেছনের কারণ কী?

বাংলাদেশে ভালো সিরিয়াল নির্মিত না হওয়া…? কারণ বহুবিধও হতে পারে। এখন প্রয়োজন সমাধানের পথে যাওয়া, তবে কোনপক্ষ সেটি শুরু করতে পারে, তা অবশ্য অজানা।

এসএইচ-১০/২৯/২২ (বিনোদন ডেস্ক)