গর্ভাবস্থায় অনাকাক্ষিত ঝামেলা এড়াতে চান?

গর্ভাবস্থায় অনাকাক্ষিত

আপনি মা হতে যাচ্ছেন? তাহলে এখন থেকেই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, আপনি ও আপনার শিশু খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছেন কি না। আপনার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় অবশ্যই প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন জাতীয় খাবার থাকতে হবে।

গর্ভাবস্থায় প্রোটিনের চাহিদা বৃদ্ধি পায় প্রায় ১/৩ ভাগ। স্বাভাবিক অবস্থায় শরীরে যে পরিমাণ প্রোটিনের দরকার, এই সময় তা বেড়ে যায় অনেকটা। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় যেন অতিরিক্ত ১৪ গ্রাম প্রোটিন থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাভাবিক অবস্থায় আপনার খাদ্যতালিকায় যেসব খাবার ছিল, তার সঙ্গে অতিরিক্ত একটি ডিম, এক বাটি ডাল বা শিমের দানা অথবা এক ঠোঙ্গা বাদাম গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে সক্ষম।

স্বাভাবিক অবস্থায় যতটুকু ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন, গর্ভাবস্থায় এর প্রয়োজন বেড়ে যায় প্রায় ২০০ মি. গ্রামের মতো। গর্ভস্থ ভ্রুণের বৃদ্ধি, নিজের শরীরের যত্ন এবং বুকের দুধ তৈরিতে অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। ক্যালসিয়াম মূলত দরকার হয় গর্ভাবস্থার পরের ছয় মাস থেকে। দুধ জাতীয় খাদ্য, বাটা মাছ, রুই মাছ থেকে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এছাড়াও খাওয়া যেতে পারে শুঁটকি ও চিংড়ি। এগুলোতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ এতটাই বেশি যে, অল্প পরিমাণে খেলেও চাহিদা পূরণ হয়।

গর্ভের শিশু তার আয়রন পেয়ে থাকে মায়ের শরীর থেকে। তাই মায়ের শরীরে যদি আয়রনের ঘাটতি হয় তখন শিশু জন্মের পরপরই রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত হয়। এ জন্য গর্ভাবস্থায় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। আয়রনের সবচেয়ে ভালো উৎস রেড মিট। এ ছাড়া কচুতেও প্রচুর আয়রন পাওয়া যায়। ফলের মধ্যে কাঁচা আম, পাকা তেঁতুলে আয়রনের পরিমাণ বেশি। শুঁটকি মাছ থেকেও প্রচুর আয়রন পাওয়া যায়। এ ছাড়া ফুলকপি আগাসহ খেলেও আয়রনের চাহিদা পূরণ হয়।

স্বাভাবিক অবস্থার থেকে দ্বিগুণ পরিমাণের ফলিক অ্যাসিডের প্রয়োজন গর্ভবতী অবস্থায়। ফলিক অ্যাসিডের অভাবে শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। তাই গর্ভবতী মায়ের উচিত ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়া। ফলিক অ্যাসিড খুব বেশি পরিমাণ পাওয়া যায় ব্রোকলি, ডাল ও পালংশাকে। এছাড়া বাঁধাকপি, ফুলকপি, কমলা, মটরশুঁটি ও হোলগ্রেন রুটিতেই ফলিক অ্যাসিডের পরিমাণ ভালো।

ভিটামিন ‘বি’ পরিবারভুক্ত ৬টি ভিটামিনের মধ্যে গর্ভাবস্থায় চাহিদা বেড়ে যায় ভিটামিন বি-১ বা থায়ামিন, বি-২ বা রিবোফ্লাবিন ও বি-৩ বা নায়াসিনের। বি-ভিটামিন ডায়জেস্টিভ সিস্টেমকে চালু রাখে, ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি চামড়ার শুষ্কভাব কমিয়ে সতেজ রাখে। গর্ভাবস্থায় যেহেতু হরমোনের পরিবর্তনের কারণে পেট, কোমর, গলার এসব জায়গার চামড়ার রং পরিবর্তন হয়, পেটের চামড়া স্ফিত হওয়ায় টান লাগে, তাই বি-ভিটামিন এই সময় চামড়ার যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রেড মিট, কলিজা, ডিম, কলা, কিডনি, বিনস, পালংশাক, কাঠবাদাম ও দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি পাওয়া যায়। আয়রন শোষিত হওয়ার জন্য ভিটামিন-সি প্রয়োজন।

এ জন্য ডাক্তার বা পুষ্টিবিদরা আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরপরই লেবু, কমলা, বাতাবিলেবু বা আমলকী খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের সুষম ব্যালেন্স শিশুর হাড় ও দাঁত তৈরিতে সাহায্য করে। সে কারণে গর্ভবতী অবস্থায় ডিম, দুধ, পনির, দই ও ছোট মাছ বেশি পরিমাণে খাওয়া খুবই দরকার। ভ্রুণের মানসিক বৃদ্ধিতে ভিটামিন-সি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভিটামিন-সি ফলিক অ্যাসিডকে কার্যকর করে তোলার চালিকাশক্তি। গর্ভের শিশুর মাংসপেশি ও হাড় গঠনের কোলাজেন প্রোটিনের প্রয়োজন। ভিটামিন-সি কোলাজেন তৈরিতেও সাহায্য করে। মায়ের শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে।

গর্ভকালীন সময়ে মায়ের চাই বিশেষ যত্ন। মহিলাদের গর্ভধারণের পূর্বেই নিজের স্বাস্থ্য, গর্ভধারণ ও সন্তান পালন সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার। কারণ একজন সুস্থ মা-ই পারে একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশুর জন্ম দিতে।

আরএম-১৬/০৯/০৫ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)