অ্যাসপিরিন যখন বিপজ্জনক

অ্যাসপিরিন যখন

আপনার মনে হতে পারে যে অ্যাসপিরিন সেবনে কোনো ক্ষতি হবে না, কিন্তু কিছু দশা ও কিছু পরিস্থিতির ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন সেবন বিপজ্জনক হতে পারে, এমনকি জরুরি বিভাগে যাওয়ার প্রয়োজনও হতে পারে। তাই কোন কোন ক্ষেত্রে এই ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ (যা কিনতে ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন লাগে না) গ্রহণ করা যাবে না তা জেনে রাখা ভালো। কখন অ্যাসপিরিন বিপজ্জনক হতে পারে তা নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* অ্যাসপিরিন সেবনে কতটুকু উপকার হয়?

আপনি জানেন যে অ্যাসপিরিন ব্যথা উপশম করতে পারে, অনেকে হয়তো শুনেছেন যে এই ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে পারে। কিন্তু গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, খুব সামান্য লোকই অ্যাসপিরিন থেকে হার্টের উপকার পেয়ে থাকেন। সাউথ ফ্লোরিডার কার্ডিওলজিস্ট অ্যাডাম স্প্ল্যাভার বলেন, ‘অনেক বছর আগে চিকিৎসকরা রোগীদেরকে অ্যাসপিরিন সেবনের পরামর্শ দিতেন। আপনি হয়তো এ কথাটি শুনেছেন যে প্রতিদিন একটি অ্যাসপিরিন চিকিৎসক থেকে দূরে রাখে। কিন্তু আপনার জেনে রাখা ভালো যে খুব নগণ্য ক্ষেত্রে এটি সত্য হতে পারে, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন আপনাকে জরুরি বিভাগে পাঠাতে পারে।’

* ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ যেখান থেকে কিনবেন

যেহেতু আপনি ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ হিসেবে অ্যাসপিরিন কিনতে পারেন, তাই আপনি সম্ভবত মনে করেন যে এটি নিরাপদ। কিন্তু আসলে কি তাই? আপনি কোত্থেকে এ ওষুধ কিনছেন তার ওপর ভিত্তি করে আপনার বিপদ হতে পারে, অন্যান্য ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। ভুলেও রাস্তাঘাট থেকে এ ধরনের ওষুধ কিনবেন না। স্পোর্টস নিউরোলজিস্ট এবং ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থিত সিডার্স-সিনাই কেরলান-জোব ইনস্টিটিউটের অন্তর্গত সেন্টার ফর স্পোর্টস নিউরোলজি অ্যান্ড পেইন মেডিসিনের ডিরেক্টর ভারনন উইলিয়ামস বলেন, ‘আমাদের সকলের জীবনে কোনো না কোনো সময় পিঠ ব্যথা, মাথাব্যথা অথবা হাঁটু ব্যথা হয়ে থাকে এবং বেশিরভাগ মানুষই ব্যথা উপশম করতে ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথানাশক সেবন করে থাকেন। তারা মনে করেন না যে এতে কোনো ক্ষতি হবে। হ্যাঁ আমরা চিকিৎসকেরাও তাই মনে করি, যদি আপনি ওষুধের দোকান থেকে অনুমোদিত জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ওষুধ কিনেন।’ যত্রতত্র থেকে অখ্যাত ওষুধ সেবনে আপনার স্বাস্থ্য বা জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।

যদি রক্তক্ষরণের রোগ থাকে

যদি আপনার রক্তক্ষরণের রোগ থাকে, তাহলে অ্যাসপিরিন থেকে দূরে থাকুন। হোয়াগ মেডিক্যাল গ্রুপের ফিজিশিয়ান এলিজাবেথ ইয়ান্নি বলেন, ‘রক্তক্ষরণের রোগ আছে এমন লোকদের অ্যাসপিরিন সেবন করা উচিত নয়, কারণ এটি হলো ব্লাড থিনার বা রক্ত পাতলাকারী।’ অ্যাসপিরিন সেবনে অত্যধিক রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং তা জীবনাশের কারণ হতে পারে। অ্যাসপিরিন রক্তকে জমাট বাধতে দেয় না এবং কিছু লোকের ক্ষেত্রে ছোট ক্ষত মারাত্মক সমস্যায় রূপ নিতে পারে। নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে অবস্থিত ব্রুকডেল হসপিটাল মেডিক্যাল সেন্টারের অন্তর্গত ইন্টারনাল মেডিসিন রেসিডেন্সির অ্যাসোশিয়েট প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট নিকেত সোনপাল বলেন, ‘অ্যাসপিরিন প্লাটিলেট সক্রিয়তার জন্য প্রয়োজনীয় সিকোয়েন্স সূচনাকারী এনজাইমকে বাধা দিয়ে প্লাটিলেটের আঠালোর মাত্রা হ্রাস করে। প্লাটিলেট ছাড়া রক্তক্ষরণ দীর্ঘস্থায়ী হয়।’

যদি পেটের সমস্যার ইতিহাস থাকে

যদি আপনার ঘনঘন পেট ব্যথা করে অথবা আলসার থাকে, তাহলে অ্যাসপিরিন এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। ডা. ইয়ান্নি বলেন, ‘পাকস্থলির আলসার অথবা পরিপাকতান্ত্রিক সমস্যার ইতিহাস আছে এমন লোকদের অ্যাসপিরিন সেবন করা উচিত নয়, কারণ এটি আলসার জনিত রক্তক্ষরণের কারণ হতে পারে।’ অ্যাসপিরিন পাকস্থলি সুরক্ষার ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করে। ডা. সোনপাল বলেন, ‘পরিপাকতান্ত্রিক মিউকোসা বা শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি পাকস্থলিতে স্তর বা মিউকাস লেয়ার সৃষ্টি করতে এনজাইম ব্যবহার করে। দিনে এমনকি ১০ মিলিগ্রাম অ্যাসপিরিন ডোজও এনজাইমকে স্তর সৃষ্টিতে বাধা দিয়ে শেষপর্যন্ত আলসার সৃষ্টি করে।’ গবেষণায় পাওয়া যায়, দীর্ঘমেয়াদে অ্যাসপিরিন সেবন পাকস্থলিতে আলসার বা পেপটিক আলসার সৃষ্টি করে।

যদি কিছু প্রেসক্রিপশন ওষুধ সেবন করেন

অ্যাসপিরিন ও প্রেসক্রিপশন ওষুধের সমন্বয়ে মারাত্মক ইন্টার‍্যাকশন সৃষ্টি হতে পারে, যা স্বাস্থ্যকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারে। ডা. ইয়ান্নির পরামর্শ হলো, ‘অ্যাসপিরিনের সঙ্গে প্রেসক্রাইবড ওষুধ সেবন করা যাবে কিনা জানতে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাসপিরিন ও অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট একসঙ্গে সেবন করলে উপরিস্থ পরিপাকতান্ত্রিক রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় এবং তা মারাত্মক হতে পারে।’

যদি মদপান করেন

যদি বার বা পার্টিতে মদপানের ইচ্ছে থাকে, তাহলে অ্যাসপিরিন এড়িয়ে চলুন। অ্যালকোহল ও অ্যাসপিরিন উভয়েই রক্তক্ষরণের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, তাই তাদের সমন্বয় কখনোই ভালো আইডিয়া নয়। এ সমন্বয় খুব দ্রুত আপনার রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা বাড়াতে পারে। জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে, যারা অ্যালকোহল পানের এক ঘণ্টা পূর্বে ১০০ মিলিগ্রাম ডোজের অ্যাসপিরিন সেবন করেছিল তাদের রক্তে অ্যালকোহলের ঘনত্ব যারা একই পরিমাণ অ্যালকোহল পানের পূর্বে অ্যাসপিরিন সেবন করেননি তাদের তুলনায় বেশি ছিল।

যদি অ্যাজমা থাকে

অ্যাসপিরিনের মতো প্রদাহ-বিরোধী ওষুধ মারাত্মক সমস্যা তৈরি করতে পারে, যদি আপনার অ্যাজমা থাকে। জার্নাল অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমিউনোলজিতে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, এসব ওষুধ ব্রঙ্কোস্প্যাজম সৃষ্টি করতে পারে বা আপনার শ্বাসপ্রশ্বাসীয় মাংসপেশিকে টাইট করতে পারে, যা অ্যাসপিরিন প্ররোচিত শ্বাসপ্রশ্বাসীয় রোগ (অ্যাসপিরিন-এক্সাসারবেটেড রেসপিরেটরি ডিজিজ) সৃষ্টি করতে পারে।

যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে

উচ্চ রক্তচাপ আপনাকে স্ট্রোকের ঝুঁকিতে রাখতে পারে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের দ্বারা হেমোরেজিক স্ট্রোক হয়ে থাকে এবং একারণে উচ্চ রক্তচাপে অ্যাসপিরিন সেবন বিপজ্জনক। অন্যদিকে রক্ত জমাটবদ্ধতার দ্বারা সৃষ্ট ইস্কেমিক স্ট্রোকের রোগীদের অ্যাসপিরিন সেবনের পরামর্শ দেয়া যেতে পারে।

আরএম-০৭/২৪/০৫ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)