রসের ফল আনারস

রসের ফল

আমাদের দেশের মৌসুমি ফলগুলোর নানা রকম গুণ থাকে। আনারস, আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুল সবই পাওয়া যায়। তবে শুধু আনারস খেয়েই পাওয়া যেতে পারে অনেক ধরনের উপকারিতা। এ ফল খেয়ে যেমন শরীরে পানির চাহিদা মেটানো যায় তেমনি বাড়তি পুষ্টিগুণও পাওয়া সম্ভব। এ গরমে তাই খাদ্য তালিকায় যুক্ত হোক আনারস।

আনারস নিয়ে অনেকের মাঝে কিছু ভুল ধারণা কাজ করে। তবে এ ফলটি কখন, কীভাবে এবং কারা খাচ্ছে সেটার ওপরই নির্ভর করে এর ভালো খারাপ। আনারস আর দুধ একসঙ্গে খাওয়া যায় না, এটি কুসংস্কার। এখন পর্যন্ত আনারস এবং দুধের মাঝে এমন কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া খুঁজে পাওয়া যায়নি যার জন্য মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

অনেক খাবারেই দুধ ও আনারস একসঙ্গে মেশানো হয় এবং সারা বিশ্বেই তা খাওয়া হয়। এটি আসলে উপকরণের সঠিক পরিমাণের ওপর নির্ভর করে।

কীভাবে খাওয়া যায়-

গরমের দিনে সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে আনারস খেতে পারেন জুস করে কিংবা সালাদ করে। দুই কাপ টুকরো করা আনারস, সামান্য চিনি, লবণ, সাদা গোলমরিচের গুঁড়া ১/২ চা চামচ, পানি ১/২ কাপ একসঙ্গে দিয়ে ব্লেন্ড করে ঠাণ্ডা করে তৈরি করতে পারেন মজাদার আনারসের জুস। এ ছাড়া আনারসসহ কিছু ফল ও সবজি, চাট মসলা, বিট লবণ, লেবুর রস দিয়ে তৈরি করতে পারেন মজাদার সালাদ। এ ছাড়া আনারস দিয়ে তৈরি করতে পারেন কিছু সুইট অ্যান্ড সাওয়ার তরকারিও।

এবার জেনে নেয়া যাক, আনারসের কিছু উপকারিতা

ওজন কমাতে

যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে সমস্যায় আছেন তাদের জন্য এটি একটি ভালো খাবার হতে পারে। এতে প্রচুর ফাইবার ও ভিটামিন সি থাকে। অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। তাই আনারসের স্মুদি বা ফ্রুটস সালাদ, ব্রেকফাস্ট বা ডেজার্ট হিসেবে খেতে পারেন।

ত্বকের যত্নে

আনারসে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের ডেড সেল দূর করে, ত্বককে কুঁচকে যাওয়া থেকে বাঁচায়, অ্যান্টিএজিংয়ের কাজ করে, ত্বকে কোলাজেন তৈরি করে ইলাসটিসিটি ধরে রাখে। এছাড়া তৈলাক্ত ত্বক, ব্রণসহ সব রূপ লাবণ্যের যত্নে আনারসের যথেষ্ট কদর রয়েছে।

রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ

আনারসে থাকা ব্রোমেলিন উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। অ্যাসপিরিনের বিকল্প হিসেবেও কাজ করে আনারস।

ভাইরাসজনিত ঠাণ্ডা ও কাশি প্রতিরোধে

এতে থাকা প্রচুর ভিটামিন সি ভাইরাসজনিত ঠাণ্ডা ও কাশি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া জ্বর ও জন্ডিসের প্রকোপ কমাতে আনারস বেশ উপকারী। নাক দিয়ে পানি পড়া, গলাব্যথা এবং ব্রংকাইটিসের বিকল্প ওষুধ হিসেবে আনারসের রস কাজ করে। তাই এ গরমে নিয়মিত আনারস খেয়েই দূর করা যাবে গরম- ঠাণ্ডার জ্বর, জ্বর-জ্বর ভাবসহ নানা সমস্যা।

হাড় ও দাঁতের গঠনে

এতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ দাঁত ও হাড়কে মজবুত করে। মাড়ির সমস্যা এবং দাঁতে জীবাণুর আক্রমণ কম হয়। তাই প্রতিদিনের খাবার তালিকায় আনারস রাখা ভালো।

পুষ্টির অভাব পূরণে

পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল হচ্ছে এ আনারস। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, থিয়ামিন,

রাইব্ফ্লোভিন, ভিটামিন বি-৬, ফোলেট, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। এসব অপরিহার্য উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ক্যান্সার প্রতিরোধী

আমাদের দেহের কোষের ওপর ফ্রি-রেডিকেলের বিরূপ প্রভাবে ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে। দেশি আনারসে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-সি যা দেহকে ফ্রি-রেডিকেল থেকে আমাদের দেহকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

চোখের যত্নে

আনারসে থাকা বিটা ক্যারোটিন চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত আনারস খেলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

প্রজনন ক্ষমতা

এতে থাকা ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন, জিঙ্ক, কপার, ফোলেট পুরুষ ও মহিলা উভয়েরই প্রজনন ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।

কৃমিনাশক হিসেবে

কৃমিনাশক হিসেবে আনারসের জুস ভালো কাজ করে। নিয়মিত আনারসের জুস খেলে কৃমির সমস্যা দূর করা সম্ভব।

আনারসের কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া

আনারসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা থাকলেও এটি অনেকের এলার্জির সমস্যা থাকলে বিভিন্ন ধরনের চুলকানি, ফুস্কুরি ইত্যাদি হতে পারে।

আনারসে অতিরিক্ত ভিটামিন সি থাকায় কেউ খুব বেশি পরিমাণ একসঙ্গে খেলে ডায়রিয়া, বমি, পেট ব্যথা, বুক জ্বালা হতে পারে।

এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি যা ডায়বেটিস রোগীদের জন্য বেশি খেলে ক্ষতিকর। এটি বেশি খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা অতিরিক্ত পরিমাণ আনারস খাবেন না।

আনারস একটি এসিডিক ফল। তাই যাদের অ্যাসিডিটি আছে তারা খালি পেটে খেলে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।

অতিরিক্ত আনারস খেলে এতে থাকা ব্রোমেলিন এনজাইম রক্তের জমাট বাধার প্রক্রিয়াতে বাধা দিতে পারে। এছাড়া স্কিন র‌্যাশ, বমি, ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে। আবার সাময়িকভাবে মুখ, জিহ্বা ছিলে যেতে পারে।

কাঁচা আনারস বা এর জুস কোনোভাবেই খাওয়া যাবে না। এটি অত্যন্ত বিষাক্ত। চরম পর্যায়ের ডায়রিয়া ও বমি হয়ে দেহ পানিশূন্য হয়ে যেতে পারে।

কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে এ প্রচণ্ড গরমে দেহকে সুস্থ রাখতে আনারস অতুলনীয় ও কার্যকরী একটি ফল। মৌসুমি ফল হিসেবে এটি দামেও সস্তা এবং সহজলভ্য। এছাড়া এর বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যে কোনো মৌসুমি একটি ফল রাখা যায় সেটা আনারস হতেই পারে।

আরএম-০৬/২৬/০৬ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)