একটুতেই বমি বমি ভাব? শরীরে মারাত্মক অসুখ বাসা বাঁধছে না তো!

একটুতেই বমি

হঠাৎ বমি? একটুতেই গা গুলিয়ে ওঠে? এই অস্বস্তির সঙ্গে আপস করা খারাপ। আপাতদৃষ্টিতে গা বমি পেটের সমস্যা ভাবলেও তা ভিন্ন রোগের লক্ষণও বটে।

পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার পথে গা-বমি ভাবের আতঙ্কে কাঁটা হয়ে থাকেন অনেকে। কারও আবার রোজ যাতায়াতের পথে ট্যাক্সি, বাসে উঠলেই শরীরে তোলপাড় শুরু। আর খাদ্যরসিক বাঙালির বদহজমে গা গুলানোর কষ্ট তো অতি পরিচিত অস্বস্তি। তবে এই বমি ভাব লক্ষণের পিছনে লুকিয়ে থাকতে পারে নানা ধরনের অসুখ। কাজেই তুচ্ছ সমস্যা ভেবে উপেক্ষা করা একেবারেই চলবে না।

এমন অস্বস্তির উৎস

বমি করার আগে সারা শরীর যেন উথাল-পাতাল করতে থাকে। মস্তিষ্কে সিটিজেড (কেমোরিসেপ্টর ট্রিজার জোন) নামে একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। এখানে উপস্থিত স্নায়ু দ্বারাই বমি অনুভূতি তৈরি হয়। যখন সিটিজেড অংশে উপস্থিত স্নায়ুগুলি উত্তেজিত হয় তখনই আমরা বমি ভাব অনুভব করি।

বিভিন্ন কারণ

অনেকরকম শারীরিক এবং মানসিক কারণ মস্তিষ্কের সিটিজেডের স্নায়ুকে উত্তেজিত করে গা বমি ভাবেব উদ্রেক করে।

১. মোশন সিকনেস– এক্ষেত্রে গাড়ি, বাস, ট্রেনে চলন্ত অবস্থায়, পাহাড়ে চড়লে বা নাগরদোলা জাতীয় ঘূর্ণায়মান পরিস্থিতিতে শুধু গা বমি করে তা নয়, অনেক ক্ষেত্রে বমিও হয়।

২. গর্ভাবস্থায়- অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমন লক্ষণ দেখা যায়। প্রথম তিন মাসের মধ্যে ৭০% গর্ভবতী মহিলাদের এমন হতে পারে।

৩. পেটের গোলমাল- গ্যাসট্রো রিফ্লাস ডিজিজ/ সেপটিক আলসার ডিজিজ/ নন আলসার ডিসপেপসিয়া- এই ধরনের পাকস্থলি বা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রদাহ বা অসুখ, প্যানক্রিয়াটিস (অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ), অন্ত্রে কোনও বাধার সৃষ্টি হলে (ইন্টেসটিনাল অবস্ট্রাকশন), হেপাটাইটিস, ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজের (ক্রনস ডিজিজ বা আলসারেটিভ কোলাইটিস) মতো সমস্যার ক্ষেত্রে গা বমি ভাব হতে পারে।

৪. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া- কিছু কিছু ওষুধ খাওয়ার ফলে গা বমি ভাব হয়। অ্যান্টিবায়োটিক যেমন এরিথ্রোমাইসিন, টেট্রাসাইক্লিন ওষুধ, ব্যথার ওষুধ, যক্ষ্মা ও ক্যানসারের কেমোথেরাপি, গর্ভনিরোধক বড়ি, গর্ভমোচনকারী ওষুধ, মানসিক রোগের ওষুধে (অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট) বমির লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এছাড়াও যে কোনও ব্যক্তিরই যে কোনও ধরনের ওষুধে সাইড এফেক্ট হিসাবে গা বমি হতে পারে।

৫. মানসিক কারণ- মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তায় (পরীক্ষার আগে) গা বমি ভাব হয়।

৬. নেশার কারণ- অধিকাংশ ক্ষেত্রে যখন কেউ প্রথমবার নেশা (খৈনি, জর্দা, ধূমপান, মদ) করে তখন বমি ভাব হতে পারে। যে কোনও নেশার ড্রাগ অতিরিক্ত নিলে বা নিতে নিতে হঠাৎ বন্ধ করে দিলে এই গা বমি করে বা বমি হয়।

৭. ব্যথা- কিছুক্ষেত্রে আঘাতজনিত বা আধকপালি, মাইগ্রেনের মতো যে কোনও অসহনীয় যন্ত্রণায় বমির প্রবণতা দেখা দেয়।

নিজে নিজে চিকিৎসা নয়

বেশিরভাগ মানুষই বমি হলে নিজে নিজে ওষুধ খেয়ে সমাধানের চেষ্টা করে। জ্বর, সর্দি, কাশির মতোই গা বমিভাব তেমন ভয়ের কিছু নয় ভেবে অবহেলা করেন অনেকেই। এমন না করে বারবার এই লক্ষণ প্রকাশ পেলে তা ফেলে না রেখে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করা জরুরি। কেবল শিশু কিংবা বয়স্করাই নয় কম বয়সিদেরও এমন হলে সাবধান।

বিশেষ নজর

১. কখনও কখনও এই সমস্যাকে হালকাভাবে নিলে তা গুরুতর পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।

২. গা গুলানোর সঙ্গে যদি মাথা ঘোরা বা কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ হয় তবে তা কানের সমস্যা হতে পারে।

৩. মাথাব্যথা এবং চোখের সমস্যার সঙ্গে গা বমিভাব থাকলে তা চোখের সমস্যা থেকেও হতে পারে। বিশেষত চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়লে এমন সমস্যা হতে পারে।

৪. কান ভোঁ ভোঁ করা, মাঝেমাঝেই বমির সঙ্গে মাথা ঘোরা বা মাথায় ব্যথা করলে, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে থাকলে, হাঁটতে গেলে রোগী টলে গেলে, মাথা ঘুরে পড়ে গেলে বা অজ্ঞান হয়ে গেলে তা মস্তিষ্কের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

৫. খুব গা বমিভাব নেই অথচ বমি হলে, বিশেষত সকালের দিকে মাথা যন্ত্রণা এবং জোরালো বমি হলে সেটা চিন্তার। তাহলে হয়তো সমস্যার উৎস রয়েছে মস্তিষ্কে।

৬. গর্ভাবস্থায় বমি অতিরিক্ত হলে তা হাইপারএমেসিস গ্রাভিডেরাম অসুস্থতা। এক্ষেত্রে গর্ভবতীর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে জল ও লবণ বেরিয়ে যায়। এতে শরীরে জল ও লবণের পরিমাণের তারতম্য ঘটে। এমন হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

যে কোনও অসুস্থতার মতোই গা বমিভাবের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার। বলা যায় না, ভরসার চিকিৎসককে দেখেই আপনার বমিভার কমে যেতে পারে।

আরএম-১১/১৭/০৭ (স্বাস্থ্য ডেস্ক, তথ্যসূত্র: সংবাদপ্রতিদিন)