অরুচির পেছনের কারণ কী গ্যাস্ট্রিক-ক্যানসার-অ্যালঝাইমার, জেনে নিন করণীয়

অরুচির পেছনের

মজাদার খাবার চোখের সামনে। ক্ষুধাও পেয়েছে। অথচ খেতে ইচ্ছে করছে না। খেতে গেলেই পেট কেমন যেন ভরা ভরা মনে হয়। কিন্তু আহামরি কিছুই খাওয়া হয়নি। তাহলে কেন খাবারে রুচি পাচ্ছেন না? হঠাৎ অরুচি জটিল কোনো রোগের লক্ষণ নয়তো! বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের শরীরকে সচল রাখতে জ্বালানি প্রয়োজন। আর এ জ্বালানির জোগান দেয় খাবার। তাই অরুচি বা ক্ষুধামান্দ্য হলে প্রথমেই বুঝতে হবে পেটে কোনো গোলযোগ রয়েছে। একে মোটেও হালকাভাবে নেওয়া ঠিক নয়। কেননা, তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। সুতরাং, জেনে নিতে পারেন হঠাৎ অরুচি ও ক্ষুধামান্দ্যর বিষয়-আশয়।

কারণ

পেটে গ্যাস: তলপেটে ব্যথা। সে সঙ্গে খাবার খাওয়ার ইচ্ছেও কমে যাচ্ছে। এমনটা হলে বুঝতে হবে আপনি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রমে আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ অন্ত্র ও পরিতন্ত্রে কোনো সমস্যা হয়েছে। অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকলে গ্যাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়। তাই বেশি সময় পেট খালি রাখবেন না। তিন থেকে চার ঘণ্টা পর কিছু না কিছু খাবেন।

লিভারের সমস্যা: হঠাৎ ক্ষুধা কমেছে। মুখে রুচিও নেই। এ সময় ক্লান্তি, মাথা ঘোরা ও ডায়রিয়ার মতো সমস্যায়ও ভুগছেন। এসব লক্ষণ দেখা গেলে বুঝতে হবে আপনি হয়তো কোনো লিভার রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। কারণ, লিভার ফাংশন ঠিকমতো কাজ না করলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে

ফাঙ্গাল ইনফেকশন: ফাঙ্গাল ইনফেকশন হলেও ক্ষুধা কমে যেতে পারে। যেমন, মুখে সংক্রমণ হলে খাবারের স্বাদ পাওয়া যায় না; ফলে অরুচি দেখা দেয়।

ভিটামিনের অভাব: শরীরে আয়রন ও ভিটামিন ‘বি১২’র মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে হ্রাস পেলে ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়। তাই হঠাৎ ক্ষুধা কমে যায় ও খাবারে রুচি থাকে না।

মানসিক সমস্যা: মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পড়লে আমাদের শরীরে নানা পরিবর্তন হতে শুরু করে। এ সময় কোনো খাবার খেতে ইচ্ছে করে না।

অবসাদ: অবসাদের কারণেও অরুচি হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের কারণে অনেক সময় ক্ষুধা কমে যায়।

ওষুধ: কিছু ওষুধের কারণেও ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে। যেমনÑঅ্যান্টিবায়োটিক, মরফিন, কেমোথেরাপির মতো ওষুধের কারণে খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায়।

ক্যানসার: ক্যানসারে আক্রান্ত হলে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে খাওয়ার প্রতি কোনো ইচ্ছা থাকে না। যেমন, স্টমাক ক্যানসার, কোলন ক্যানসার, ওভারিয়ান ক্যানসার প্রভৃতি আক্রান্ত হলে খাবারের প্রতি অনীহা দেখা দেয়।

অ্যালঝাইমার: এ রোগে আক্রান্ত হলে খাবার খাওয়ার ধরনে অনেক পরিবর্তন আসে। সে সঙ্গে খাওয়ার ইচ্ছাও মরে যায়।

হার্টের সমস্যা: হার্ট অ্যাটাকের কারণেও অনেক সময় ক্ষুধা কমে যায়। তাই খাবারে অরুচি বা ক্ষুধা কমে যেতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

করণীয়: উল্লিখিত কারণ ছাড়াও যকৃতে কোনো সমস্যা হলে কিংবা জন্ডিসে আক্রান্ত হলে রুচি কমে যেতে পারে। কিডনি রোগীদেরও একই সমস্যা হতে পারে। এ সময় অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যতালিকা নির্বাচন করতে হবে।

বেছে নিন পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার: বেশি খেতে পারছেন না বা খেতে ইচ্ছা করছে না! তাহলে এমন খাবার বেছে নিন, যা কম খেলেও বেশি পুষ্টি দেবে। যেমন, শাকসবজি বা ফলমূল, গোটা শস্য, বাদাম, বীজজাতীয় খাদ্য প্রভৃতি। চিপস বা ফাস্টফুড থেকে দূরে থাকুন। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, মাছ ও মুরগির আমিষ মস্তিষ্কের ক্ষুধাকেন্দ্রকে উজ্জীবিত করে।

খাবারকে দৃষ্টিনন্দন করুন: খাবারে শুধু স্বাদ হলেই চলে না, বরং গন্ধ, রঙ ও চেহারাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই খাবার প্রস্তুতে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। নানা রঙ ও স্বাদ যোগ করে খাবারকে দৃষ্টিনন্দন করতে হবে। যেমন ক্যাপসিকাম, লেটুস, টমেটো ও নানা রঙের ফলমূল খাবারের তালিকায় রাখতে হবে। গন্ধ বাড়াতে লেবুর রস, সরষে, নানা ধরনের মসলা মেশাতে পারেন খাবারে।

খাওয়ার সময় বেশি পানি নয়: খাওয়ার সময় শুরুতে পানি বা তরল-জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। কারণ, এ সময় পানি পান করলে পেট অল্পতে ভরে যায়। ফলে খাবারের ইচ্ছা কমে আসে।

সঙ্গী: একা একা খাওয়ার তুলনায় পছন্দের সঙ্গী বা বন্ধুবান্ধব থাকলে খাবারের রুচি বাড়ে। তাই মাঝেমধ্যে পছন্দের সঙ্গীর সঙ্গে খেতে বসতে পারেন।

ব্যায়াম: প্রতিদিন কিছু ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করুন। এতে মেটাবলিজম বাড়বে। ফলে বাড়বে ক্ষুধাও।

আরএম-০৬/২৯/১০ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)