নিজেই জানুন স্তন ক্যান্সার আছে কি না

নিজেই জানুন

বর্তমানে বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার শীর্ষে। এরপরই রয়েছে জরায়ু মুখের ক্যান্সার। এক সময় নারীদের জরায়ু মুখের ক্যান্সার বেশি হলেও বর্তমানে বেশি হচ্ছে স্তন ক্যান্সার। এছাড়া ক্যান্সারে নারীদের মৃত্যুর শীর্ষেও রয়েছে স্তন ক্যান্সার। অথচ একটু সচেতন হয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে ৯৮ শতাংশ রোগীকেই সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব। তাহলে এবার চলুন জেনে নেয়া যাক স্তন ক্যান্সারের আদ্যোপান্ত।

স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে যারা

⇒ বংশগত (মা, খালা, বোন, মেয়ে)

⇒ তাড়াতাড়ি ঋতুস্রাব শুরু (১২ বছরের নিচে)

⇒ দেরীতে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া (৫৫ বছরের উপরে)

⇒ বেশী বয়সে (৩৫ বছর) সন্তান ধারণ অথবা সন্তানহীনতা

⇒ ঋতুস্রাব বন্ধের পর হরমোন গ্রহণ

⇒ সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো

⇒ মাত্রাতিরিক্ত ওজন

⇒ শারীরিক ব্যায়াম না করা

⇒ ৩০ বছর বয়সের পূর্বে রেডিয়েশন চিকিৎসা ইত্যাদি।

স্তন ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ

⇒ স্তনে অথবা বগলের নিচে ব্যথামুক্ত চাকা

⇒ স্তনের আকার ও আকৃতি পরিবর্তন

⇒ স্তনের চামড়া লাল হয়ে যাওয়া

⇒ স্তনের চামড়া ভিতরের দিকে ঢুকে যাওয়া ও ছোট-ছোট গর্ত হওয়া (কমলালেবুর খোসার মতো)
স্তনবৃন্ত থেকে ক্ষরণ

⇒ স্তনে বা স্তন বৃন্তে ঘা দেখা যাওয়া

⇒ স্তনবৃন্ত ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া

স্ক্রিনিং কী?

স্ক্রিনিং বলতে বুঝায় লক্ষণ প্রকাশের পূর্বে রোগ নির্র্ণয় করা। এর ফলে প্রাথমিক পর্যায়েই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হলে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে সকল রোগই নিরাময় করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে স্তনক্যান্সার শনাক্ত করার জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

তিনটি উপায়ে স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং করা যায়

১. ব্রেস্ট সেল্‌ফ এক্সামিনেশন (বিএসই): নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করা। বিশ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে একবার নিজের স্তন নিজের পরীক্ষা করা উচিত। প্রতি মাসে একবার একটি নির্দিষ্ট দিনে পরীক্ষা করা যায়। সাধারণত মাসিকের ৭-১০ দিনের মধ্যে এই পরীক্ষা করা উচিত।

নিয়ম:

ক. শরীরে উপরিভাগ উন্মুুক্ত করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাত পাশে ঝুলিয়ে পর্যাপ্ত আলোতে পরীক্ষা করুন। প্রথমে লক্ষ্য করুন স্তনের আকার, আকৃতি, ত্বক বা ত্বকের রংয়ের কোনো পরিবর্তন, দুই স্তনের কোনো তারতম্য। স্তনের কোথাও কোনো চাকা কিংবা কোনো অংশ বিশেষ পুরু মনে হয় কি না। স্তনবৃন্তের কোনো অস্বাভাবিকতা যেমন-ভিতরের দিকে ঢুকে যাওয়া ইত্যাদি।

খ. এবার হাত দুটো সোজা মাথার উপরে তুলে উপরিল্লিখিত কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কি না লক্ষ্য করুন।

গ. এরপর দুই হাত কোমরে চাপ দিয়ে টানটান করে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করুন। পর্যবেক্ষণ শেষে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার হাতের মাঝের তিন আঙ্গুলের ভিতরের অংশ দ্বারা হালকা চাপ ও পরে গভীর চাপ দিয়ে পুরো স্তন ও বগলের নিচে পরীক্ষা করুন। স্তনবৃন্ত চেপে কোনো ক্ষরণ হয় কি না দেখুন। ডান হাত দিয়ে বাম স্তন ও বাম হাত দিয়ে ডান স্তন পরীক্ষা করুন। যে স্তন পরীক্ষা করবেন সেই পাশের হাত মাথার নিচে রাখুন। কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হলে সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

২. ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এক্সামিনেশন: অর্থাৎ চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা করানো। ক) ২০-৩৯ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি তিন বছরে একবার খ) ৪০ বছর ও তদুর্ধ্ব প্রতি বছরে একবার চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা করাবেন।

৩. ম্যামোগ্রাফি পরীক্ষা: ক. ৪০-৪৪ বছর বয়সীরা ডাক্তারের পরামর্শ চাইলে (ঐচ্ছিক) ম্যামোগ্রাফি শুরু করা যায়। খ. ৪৫-৫৪ বছর বয়সীরা প্রতি বছরে একবার। গ. ৫৫ বছর ও তদুর্ধ্ব বয়সীরা প্রতি দুই বছর অন্তর একবার অথবা প্রতি বছরে একবার।

স্ক্রিনিং দ্বারা প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে তা সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করা সম্ভব।

আরএম-১৯/০২/১১ (স্বাস্থ্য ডেস্ক, তথ্যসূত্র: দৈনিক আজাদ)