অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরেও যে কারণে সারছে না রোগ

অ্যান্টিবায়োটিক

বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে থাকি। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরও রোগ ভালো হয় না। এর কারণ জানেন কি?

সম্প্রতি বাংলাদেশে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের ওপর এক গবেষণা চালিয়েছেন।

তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে অন্তত ১৭টির কার্যক্ষমতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। যে কারণে দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার কারণে অসুখ ভালো হচ্ছে না।

এসব অ্যান্টিবায়োটিক মূলত মূত্রনালির সংক্রমণ, নিউমোনিয়া এবং জখম সারানোসহ বিভিন্ন সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হতো। তাই কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে অন্য ওষুধও।

গবেষকরা বলছেন, এসব ওষুধ কার্যক্ষমতা হারানোর কারণে শিশু এবং হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীরা মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।

কী আছে গবেষণায়?

আইইডিসিআরের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডা. জাকির হোসাইন হাবিব। তিনি দেশের ৯টি মেডিকেল কলেজের রোগীদের ওপর গবেষণা চালিয়েছেন।

গবেষণায় তিনি পেয়েছেন, গত কয়েক দশকের মধ্যে অন্তত ১৭টি অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। যার মানে হলো– অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধী হয়ে ওঠা। অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ায় এমন অবস্থায় রোগীদের ওপর রিজার্ভ অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ বেড়ে গেছে।

ডা. হাবিব জানিয়েছেন, গবেষণায় তিনি দেখেছেন জীবাণুর মধ্যে ক্ষত সংক্রমণ জীবাণু প্রায় ৫৭ শতাংশ সক্রিয় ছিল। ফলে প্রচলিত ওষুধ দিয়ে সারানো সম্ভব হচ্ছিল না।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টান্ট হওয়ার কারণ কী?

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেন, বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে কোন নীতিমালা নেই। তিনি জানিয়েছেন, কয়েকটি কারণে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টান্ট হয়ে থাকে।

১. বিনা প্রেসক্রিপশনে ঘন ঘন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা।

২. পুরো কোর্স শেষ না করে মাঝপথে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করে দেয়া।

৩. প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া।

৪. ভাইরাসজনিত কোন অসুখে, অর্থাৎ যেসব ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে এমনি ভালো হয়ে যেত। বিশেষ করে শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক দিলে।

ভয়াবহ?

আইইডিসিআরের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডা. হাবিব জানিয়েছেন, এ পরিস্থিতি যথেষ্ট ভয়াবহ। বাংলাদেশে বহু মানুষ বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ফার্মেসিতে গিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে সেবন করেন। ফলে শরীর অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টান্ট হয়ে যাচ্ছে এবং পরে কোনো সংক্রমণ হলে সেটি আর ওষুধে হয়তো সারবে না। যেসব খাবার খাচ্ছি তার অনেকগুলো থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

যেমন-

১ মুরগির মাংস, গরু বা খাসির মাংস

২. দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার।

৩. মাছেও হরমোন ব্যবহার করা হয়, সেখানেও অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয় রোগ প্রতিরোধী করার জন্য।

৪. শাকসবজি যদিও এতে সরাসরি অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয় না। তবে কীটনাশক দেয়া হয়।

আরএম-০৫/২৬/১১ (স্বাস্থ্য ডেস্ক, তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা)