হিট স্ট্রোক নিরাময়ে হোমিও সমাধান

হিট স্ট্রোক

হিট স্ট্রোক হলো এমন একটি জরুরি অবস্থা, যার ফলে শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নামে। তাতে কপালে চিন্তার ভাঁজ পরাটা অস্বাভাবিক নয়। এ কথা কে না জানে যে, গরম একা আসে না, সঙ্গে নিয়ে এমন কিছু সমস্যাকে; যা বাস্তবিকই ভয়ের কারণ।

যেমন ধরুন অতিরিক্ত গরমের কারণ যেকোনো সময় হিট স্ট্রোক হয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ক্লান্তি এবং পেশিতে ক্র্যাম্প লাগার মতো আসুবিধা তো রয়েছেই। তাই সাবধান হওয়াটা জরুরি। আজ হিট স্ট্রোক নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট হোমিও গবেষক ডা. এম এ মাজেদ।

গরমের সময় সব থেকে বেশি ভয় থাকে হিট স্ট্রোক হওয়ার। অনেক সময় খোলা জয়গায় থাকলে শরীরের অন্দরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে পানি এবং লবণের পরিমাণ কমে গিয়ে দেখা দেয় এ সমস্যা।

প্রসঙ্গত, এ ক্ষেত্রে হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, মাথা যন্ত্রণা, বমি ভাব, ত্বক গরম হয়ে যাওয়া, চোখের সামনে বারবার অন্ধকার হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি প্রভৃতি লক্ষণগুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে।

এ ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে ঠাণ্ডা জয়গায় বসিয়ে পানি খাওযাতে হবে। প্রয়োজনে সারা গায়ে পানি ঢাললেও আরাম মিলতে পারে। তার ওপরে চলে যায় এবং, এই অবস্থায় সূর্যের প্রখর তাপ সরাসরি লাগার পর, শরীর তার স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে পারে না।

সাধারণত, উচ্চ-তাপমাত্রায় শরীর স্বাভাবিকভাবে নিজেকে ঠাণ্ডা করে রোমকূপের মাধ্যমে ঘাম বের করে কিন্তু, এই পরিস্থিতিতে শরীর তার সেই স্বাভাবিক কাজকর্ম বজায় রাখতে পারে না।

তাপজনিত এই সমস্যা গ্রীস্মকালে খুব সাধারণ ব্যাপার যা অত্যাধিক তাপের সংস্পর্শে আসার ফলে বাচ্চা ও বয়ষ্কদের ওপরেই বেশি প্রভাব ফেলে।

যারা বাইরে কাজ করেন, তারাও হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। যদি হিট স্ট্রোকের অবিলম্বে ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে এটা শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রতঙ্গকে নষ্ট করে দিতে পারে এবং তা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

করণীয়—

ঠাণ্ডা পরিবেশে থাকুন : ঘরে যথাসম্ভব ঠাণ্ডা পরিবেশে অবস্থান করুন। অপ্রয়োজনীয় কারণে দিনে, বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা বাইরে বের না হওয়া ভালো। বের হলে অবশ্যই ছাতা সাথে নেবেন। গরমে কালো রঙের ছাতা পরিহার করুন।

প্রচুর পানি পান করুন : সারা দিনে প্রচুর পানি পান করুন। বাইরে বের হওয়ার সময় পানি সাথে নিন। দিনে কমপক্ষে তিন লিটার পানি পান করুন।

আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন : গরমে আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন। বাচ্চাদের জন্য সুতির হাল্কা রঙের কাপড় নির্বাচন করুন। খুব গরমে কালো রঙ পরিহার করুন।

মৌসুমী ফল গ্রহণ করুন : প্রচুর পরিমাণে ফল ও ফলের জুস খান। গরমের সময় টক ফল খুবই ভালো। কিন্তু যাদের নিম্ন রক্তচাপ, গরমের সময় তারা অতিরিক্ত টক খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

সবুজ সালাদ বা সবজি খান : প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবুজ সালাদ বা সবজি রাখুন। এতে শরীরে পানি ও খনিজের ঘাটতি হবে না এবং শরীর ঠাণ্ডা থাকবে।

বর্জনীয়—

সফট অথবা হার্ড ড্রিঙ্কস নেয়া থেকে বিরত থাকুন : অতিরিক্ত গরমে সফট অথবা হার্ড ড্রিঙ্কস নেয়া থেকে বিরত থাকুন। ড্রিঙ্কস শরীরের পানিকে নিরুদিত করে যা শরীরে পানিস্বল্পতা তৈরি করে। এ ছাড়াও ঘন ঘন পানি পিপাসা পায় এবং গলা শুকিয়ে আসে। তাই গরমে সাময়িক তৃষ্ণা মেটাতে অবশ্যই ড্রিঙ্কস নয়।

পানি পানের সময় সতর্ক থাকুন : গরমের কারণে যেকোনো জায়গা থেকে পানি পানে বিরত থাকুন। দূষিত পানি থেকে পানিবাহিত রোগ হতে পারে। এ জন্য পানি পান করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। বাইরে পানি পান করার ক্ষেত্রে অবশ্যই মিনারেল ওয়াটার গ্রহণ করুন।

ফাস্টফুডকে না বলুন : ফাস্টফুড এবং তেল চর্বি জাতীয় খাবারকে না বলুন। ফাস্টফুড এবং তেল চর্বি জাতীয় খাবার শরীরের জন্য খারাপ। গরমে তেলে ভাজা বা রিচ ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। গরমে এ জাতীয় খাবার যত বেশি খাবেন, তত বেশি গরম লাগবে। সুতরাং এ ধরনের খাবার না খাওয়াই ভালো। স্ট্রিট ফুড বর্জন করুন অতিরিক্ত গরমে।

স্যালাইন খাওয়ার সময় সতর্ক থাকুন : গরমের কারণে ঘরে থাকতে চাইলেও অনেকেই আছেন শারীরিক পরিশ্রম করেন। তাদেরকে কাজের জন্য বাইরে যেতেই হয়।

অনেকেই আছেন দিন আনেন দিন খান। সে ক্ষেত্রে যেনো শরীরে পানি বা লবণের স্বল্পতা না হয় এই জন্য স্যালাইন খেতে পারেন। বাইরে চলাচলের সময় কাছে স্যালাইন রাখতে পারেন।

যদি শরীর দুর্বল মনে হয়, সে ক্ষেত্রে সাথে সাথে স্যালাইন খেয়ে নিতে পারেন। এতে দুর্বলতা কমবে। প্যাকেটের গায়ে নির্দেশিত পরিমাণ পানির চেয়ে কম পানি দিয়ে স্যালাইন খাবেন না। শুধু স্যালাইন গুড়া খেলে বা কম পানি দিয়ে স্যালাইন খেলে লবণের ঘনত্ব বেড়ে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।

পরামর্শ : গরমে নিজের পাশাপাশি পরিবারের যত্ন নিন। বাইরে চলাফেলার সময় বয়স্ক এবং শিশুদের দিকে খেয়াল রাখুন এবং তাদেরকে অগ্রাধিকার দিন যানবাহনে চলাচলের ক্ষেত্রে। কেউ অসুস্থ হলে সচেতনতার সাথে সিদ্ধান্ত নিন।

হোমিও সমাধান : রোগ নয়, রোগীর চিকিৎসা করা হয় তাই অভিজ্ঞ চিকিৎসকে হিট স্ট্রোক রোগীর রোগের পুরো লক্ষণ নির্বাচন করতে পারলে তাহলে আল্লাহর রহমতে হোমিওতে সম্ভব।

বিশেষজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে যেই ওষুধ নির্বাচন করে থাকেন, বেলেডোনা, গ্লোনিয়ম, আর্সেনিক অ্যালম্বা, ব্রায়োনিয়া, কেলকেরিয়া কার্ব, কেলকেরিয়া সালফ, ডালকামারা, হিপার সালফ, কেলি আয়োড, মার্কসল, চায়না, ন্যাট্রাম মিউর, জেলসিয়াম, ন্যাট্রাম সালফ, নাক্স ভমসহ আরো অনেক ওষুধ লক্ষণের উপর চিকিৎসক নির্বাচন করে থাকেন, তাই মেডিসিন নিজে নিজে ব্যবহার না করে বিশেষজ্ঞ হোমিওচিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আরএম-২১/২০/০৩ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)