নাকের যে কোষ করোনাভাইরাস প্রবেশে ভূমিকা রাখে

নতুন করোনাভাইরাসের প্রধান প্রবেশ পথ নাক, যে কারণে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে দ্রুত। ‘গবলেট’ এবং ‘সিলিয়াটেড’- নাকের এই দুই ধরনের কোষের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। যুক্তরাজ্যের ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউট’য়ের গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে।

এর কারণ হল এই দুই কোষ ব্যবহার করেই করোনাভাইরাস দেহের ভেতর ঢুকতে ব্যবহার করে। কোষগুলোর এই বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের তীব্র গতি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে বলে দাবি করেন গবেষকরা।

‘ন্যাচার মেডিসিন’ শীর্ষক জার্নালে প্রকাশিত হয় এই গবেষণা।

এতে আরও বলা হয়, শুধু নাক নয়, চোখ ও অন্যান্য অঙ্গেও এই ধরনের প্রোটিনসমৃদ্ধ কোষ রয়েছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলো এধরনের প্রোটিনসমৃদ্ধ কোষকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সেটাও জানা যায় এই গবেষণায়।

পাশাপাশি ‘কোভিড-১৯’ চিকিৎসার মাধ্যমে সংক্রমণ কমানোর সম্ভাব্য উপায়ও জানা যায়।

২০০৩ সালে মহামারী আকার ধারণ করা ‘সার্স’ ভাইরাস যেভাবে কোষকে সংক্রমিত করত, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পদ্ধতি অনেকটাই তেমন। একথা জানা থাকা পরেও এর আগে নাকের এই বিশেষ ধরনের কোষগুলোকে শনাক্ত করা যায়নি।

করোনাভাইরাস সংক্রমণে কোন কোষগুলো ভূমিকা রাখে তা জানতে ‘সিঙ্গেল সেল আরএনএন সেকুয়েন্সিং’য়ের একাধিক ‘হিউম্যান সেল অ্যাটলাস (এইচসিএ) কনসোর্টিয়াম ডেটাবেইজ’ নিয়ে গবেষণা চালানো হয়।

সংক্রমণের শিকার হয়নি এমন মানুষের ২০ ধরনের ‘টিস্যু’য়ের নমুনা পর্যবেক্ষণ করা হয় এই গবেষণার জন্য। আর সংগ্রহ করা হয় ফুসফুস, নাক, চোখ, অন্ত্র, হৃদযন্ত্র, যকৃত এবং বৃক্ক থেকে।

গবেষণার প্রধান, যুক্তরাজ্যের ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউট’য়ের ড. ওয়ারাডন সাংনাক বলেন, “আমরা দেখেছি, ‘রিসেপ্টর প্রোটিন এসিই টু’ এবং ‘টিএমপিআরএসএস ২ প্রোটিয়েজ’ করোনাভাইরাসকে সংক্রমণে সহায়তা করে। আর এগুলো নাকের ভেতরের আবরণ ছাড়াও আরও অনেক অঙ্গে ছড়িয়ে আছে।”

“পরে আমরা জানতে পারি যে, শ্বাসতন্ত্রের সকল কোষের মধ্যে নাকের ‘মিউকাস’ সৃষ্টিকারী ‘গবলেট’ ও ‘সিলিয়াটেড’ কোষে এই দুই প্রোটিনের মাত্রা সবচাইতে বেশি। অর্থাৎ প্রাথমিকভাবে এই পথেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।”

গবেষণার আরেক গবেষক, নেদারল্যান্ডের ‘ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার গ্রোনিংগেন’য়ের মার্টিজন নাওয়াইজন বলেন, “করোনাভাইরাস যেভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে তার সঙ্গে আমাদের এই গবেষণার সঙ্গতি আছে। নাকের ভেতরের যেস্থানে এই কোষগুলো থাকে সেখানে ভাইরাসের পৌঁছে যাওয়া অত্যন্ত সহজ। আবার অন্যদের সংক্রমিত করতেও সেগুলো সহায়ক।”

গবেষকরা বলেন, “প্রধান দুটি ‘এন্ট্রি পয়েন্ট’, ‘এসিই টু’ ও ‘টিএমপিআরএসএস টু’, ‘কর্নিয়া’তে এবং অন্ত্রের ভেতরের আবরণেও থাকে। অর্থাৎ চোখ ও অশ্রুজল গ্রন্থির মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ সম্ভব। মলের মাধ্যমে তা ছড়ানোর সম্ভাবনা নাকচ করা যাবে না।”

“বিভিন্ন ধরনের কোষের বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করার মাধ্যমে ‘কোভিড-১৯’সহ আরও অনেক রোগ শনাক্ত, পর্যবেক্ষণ এবং চিকিৎসার উপায় খুঁজে পেতে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করছে ‘হিউম্যান সেল অ্যাটলাস’, দাবি গবেষকদের।