রোজায় যা খাচ্ছেন, তা নিরাপদ তো?

এই রোজায় বাড়িতে থাকতে পারছেন বলেই সেহরি আর ইফতারে মুখরোচক সব পদ রেঁধে বসে আছেন। তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী সেই খেয়াল রাখছেন তো? অন্যান্য সময়ের রোজা আর এবছরের রোজার মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো করোনাভাইরাস। এবার রোজা রাখার পাশাপাশি আমাদের লড়তে হচ্ছে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউন উঠে গেলে কিন্তু রোগটা বাড়বে। ঠিক কতটা বাড়বে, সেটা এখন থেকে আন্দাজ করা সম্ভব নয়। যে মুহূর্তে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার শুরু হবে, অফিস খুলবে, তখন রোগীর সংখ্যা বাড়তে বাধ্য।

বাড়িতে থেকে আমরা খেয়েছি, শুয়ে-বসে ছুটি কাটিয়েছি। চাকরি থাকবে কিনা এই চিন্তায় কপালে ভাঁজ ফেলে রাত জেগেছি। ফলে হরমোনের স্তরে গন্ডগোল হয়েছে। বেড়েছে প্রেশার, সুগার, ওজন সবই। এই অবস্থায় যেকোনো রোগের আক্রমণ হওয়াটা সহজ। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে আপনার প্রতিদিনের ডায়েট।

খাবার আমাদের শক্তি জোগায়। তাই এমনভাবে খান যাতে শরীর সুস্থ থাকে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শরীর সুস্থ করুন। ডালগোনা কফি না খেলেও চলবে, তার চেয়ে অনেক কাজের গ্রিন টি-এর অ্যান্টিঅক্সিডান্ট। একান্ত তা হাতের কাছে না পেলে লিকার চা খান। এমনই পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাজার খোলা থাকছে তাই অহেতুক ভিড় জমাবেন না, প্রতিদিন বাজারে যাওয়ার দরকার নেইও। যাদের বয়স ২০-৩৫ এর মধ্যে, তারা সাধারণত এই রোগের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিরোধ তৈরি করতে পারছেন, বাড়িতে তেমন কেউ থাকলে তাকে বাজারে পাঠান। সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মেনে চলুন। না হলে বাজার থেকেই বিপদ আসবে।

ফল আর সবজি দুটোই পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। ভাত, ডাল, তরকারি, ডিম, সয়াবিন, কোনোকিছুরই অভাব নেই এখনও পর্যন্ত। তবে সবজি বা ফল খুব ভালো করে ধোয়া জরুরি। ফল বা সালাদ খেলে খোসা বাদ দিয়ে খাওয়াই ভালো। কাঁচা খাবারের থেকে রান্না করা খাবারে জোর দিন বেষিশ। রান্না করে নেয়া খাবার যে জীবাণুমুক্ত, সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ হওয়া যায়।

আমাদের প্রতিদিনের প্রোটিন ইনটেকের অনেকটাই আসে মাছ থেকে। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও ঠিক যে সংক্রমণের আশঙ্কায় একের পর এক পাইকারি মাছ বাজার বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাজারে ক্রমশ তাজা মাছের জোগানও কমছে।

খুব বড় যেসব মাছ মিলছে সেগুলো আসছে কোল্ড স্টোরেজ থেকে এবং এই পরিস্থিতিতে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। মনে রাখবেন, ঠান্ডায় রাখা মাছের শরীরেও কিন্তু কিছু মাইক্রোব্যাক্টেরিয়া জন্মায়। তা থেকে আবার নতুন বিপত্তি হতে পারে।

মুরগির মাংস খেতে পারেন, তবে এই সময় নাগাদ কিন্তু বার্ড ফ্লুয়ের প্রাদুর্ভাবও হয় প্রতি বছর। সেক্ষেত্রে তার জোগানেও টান পড়তে পারে। সেদিক থেকে ডিম অনেক নিরাপদ এবং তা খারাপ হলে বোঝা যায়।

ভিটামিন সি খান। অর্থাৎ সব ধরনের লেবু জাতীয় ফল চলবে। অ্যান্টিঅক্সিডান্ট আপনাকে ভিতর থেকে সুস্থ রাখবে। সরষের তেলের ইরিউসিক অ্যাসিড খুব ভালো অ্যান্টিঅক্সিডান্ট। খেতে পারেন সরষে ও পোস্ত- এর ভিটামিন ইও শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডান্ট। রান্নায় ব্যবহার করুন টমেটো, রসুন, জিরা, ধনে, আদা, হলুদ, দারুচিনি। গোটা মশলা পানিতে ভিজিয়ে খেতে পারেন ইফতারে। সব মশলায় এসেনশিয়াল অয়েল থাকে, সেটা অত্যন্ত কার্যকর অ্যান্টিঅক্সিডান্ট।

ইফতারে অনেকে বাইরে থেকে অর্ডার করে খাবার খাচ্ছেন। সেটা কতটা নিরাপদ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইরের খাবার এখন মোটেই নিরাপদ নয়। সেসব খাবার কোথায় তৈরি হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে, কে ডেলিভারি আনছেন, তার কিচ্ছু আপনি জানেন না। এই পরিস্থিতিতে রান্না করা খাবার খাওয়াটা একেবারেই নিরাপদ নয়। বাড়িতেই স্বাস্থ্যকর রান্না করে নিন।