প্রাণী থেকে মানবদেহে আসা রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা

প্রাণী থেকে যেসব রোগ মানুষের শরীরে আসে বিজ্ঞানের পরিভাষায় সেগুলোকে বলা হয় জুনটিক রোগ এবং বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ রক্ষা করতে না পারলে এধরনের রোগের সংখ্যা আরো বাড়তেই থাকবে বলে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন।

কভিড-১৯ এর মতো রোগের বৃদ্ধির জন্য তারা প্রাণীজাত প্রোটিন বা আমিষের তীব্র চাহিদা, পরিবেশের কথা বিবেচনা না করে করা কৃষিকাজ এবং জলবায়ুর পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন।

তারা বলছেন, এধরনের রোগের ব্যাপারে খুব একটা নজর দেওয়া হয় না, কিন্তু এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে সারা বিশ্বে প্রতি বছর ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।

এসব রোগের কারণে আর্থিক ক্ষতিও কম নয়। বলা হচ্ছে, কোভিড-১৯ রোগের ফলে আগামী দু’বছরে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে নয় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ইবোলা, ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস এবং সার্স – এসবও জুনটিক রোগ। এগুলো শুরু হয়েছে প্রাণী দেহে, পরে সেখান থেকে ছড়িয়েছে মানবদেহে।

কিন্তু প্রাণী থেকে এসব রোগ মানুষের মধ্যে আপনা-আপনি আসে না।

জাতিসংঘের পরিবেশ ও গবাদিপশু সংক্রান্ত গবেষণা ইন্সটিউটের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এসব ভাইরাস মানবদেহে আসে প্রাকৃতিক পরিবেশে হস্তক্ষেপের কারণে।

এসব হস্তক্ষেপের মধ্যে রয়েছে জমির ক্ষতিসাধন, বন্যপ্রাণীর ব্যবহার, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং জলবায়ুর পরিবর্তন।

গবেষকরা বলছেন এসবের কারণে মানুষ ও প্রাণীর সম্পর্কে পরিবর্তন ঘটছে।

“গত শতাব্দীতে আমরা অন্তত ছয় বার নোভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখেছি,” বলেন ইঙ্গার এন্ডারসেন, জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব এবং পরিবেশ কর্মসূচির প্রধান নির্বাহী।

“কভিড-১৯ এর আগে গত দুই দশকে জুনটিক রোগের কারণে ১০০ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।”

তিনি বলেন, “এ ধরনের রোগে প্রত্যেক বছর নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব অসুখের মধ্যে রয়েছে অ্যানথ্রাক্স, বোভাইন যক্ষা এবং জলাতঙ্ক।”

তিনি বলেন, গবাদিপশুর ওপর অতিরিক্ত মাত্রায় নির্ভরশীলতা এবং বন্যপ্রাণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই এসব ঘটছে।

এন্ডারসেন এরকম একটি উদাহরণ টেনে বলেন যে গত ৫০ বছরে মাংসের উৎপাদন ২৬০% বৃদ্ধি পেয়েছে।

“আমরা কৃষিকাজ বাড়িয়েছি, বনাঞ্চলে অবকাঠামোর সম্প্রসারণ ঘটিয়ে সেখান থেকে সম্পদ আহরণ করছি।”

তিনি বলেন, “মানুষের শরীরে যতো সংক্রামক রোগ হয় তার ২৫ শতাংশের সাথে বাঁধ, সেচ, কারখানা, খামারের সম্পর্ক রয়েছে। ভ্রমণ, পরিবহন এবং খাদ্য সরবরাহের চক্র – এসবের ফলে সীমান্ত ও দূরত্ব মুছে গেছে। জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার পেছনে জলবায়ুর পরিবর্তনও দায়ী।”

ভবিষ্যতে এধরনের মহামারি ঠেকাতে কী ধরনের কৌশল নিতে হবে সেবিষয়ে সরকারগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এই গবেষণা প্রতিবেদনে।

এতে জমির পরিকল্পিত ব্যবহার, জীব বৈচিত্র বাড়ানো এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আরো বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে।

“বিজ্ঞানে এটা স্পষ্ট যে বন্যপ্রাণীর যথেচ্ছ ব্যবহার এবং পরিবেশ ধ্বংস করার কারণে মানবদেহে জুনটিক রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।”

তিনি বলেন, এসব বন্ধ করা না হলে আগামীতে প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে রোগের প্রবাহ বাড়তেই থাকবে।

“ভবিষ্যতে এসব রোগের প্রকোপ প্রতিরোধে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় আমাদের আরো বেশি সচেষ্ট হতে হবে।”

– বিবিসি বাংলা