করোনাভাইরাস: কতটা মারাত্মক বায়ুবাহিত সংক্রমণ?

বিশেষ পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের ‘বায়ুবাহিত সংক্রমণের’ আশঙ্কা থাকতে পারে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। কতটা মারাত্মক হতে পারে এই সংক্রমণ?

কয়েকদিন আগে পর্যন্তও করোনাভাইরাসের উপস্থিতি থাকা কোনো সমতলে স্পর্শ করার মাধ্যমেই কেবল কভিড-১৯ সংক্রমণ হতে পারে বলে ধারণা করছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

শুরুর দিকে ধারণা করা হতো যে হাঁচি বা কাশির ফলে ছড়ানো ড্রপলেটের মাধ্যমেই করোনাভাইরাস ছড়ানো সম্ভব।

সে কারণে মহামারির শুরুর দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা কভিড-১৯ থেকে সুরক্ষার জন্য হাত ধোয়াকে অন্যতম একটি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন।

কিন্তু এখন তারা বলছেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের ‘বায়ুবাহিত সংক্রমণের’ আশঙ্কা থাকতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যেখানে মানুষের ভিড় বেশি, ঘর বন্ধ কিংবা যেখানে বাতাস চলাচলের ভালো ব্যবস্থা নেই, সেসব জায়গায় বাতাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বা কথা বলার সময় মুখ থেকে বের হওয়া অতি ক্ষুদ্র কণার মাধ্যমেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে।

বিবিসি বাংলা জানায়, আর এই ধরণের সংক্রমণের প্রমাণ সম্পর্কে যদি নিশ্চিত হওয়া যায়, তাহলে বদ্ধ জায়গায় কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, সেই সংক্রান্ত গাইডলাইনে পরিবর্তন আসতে পারে।

ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াবাহিত যেসব কণা বাতাসে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত ভেসে থাকতে পারে, তেমন কণা নিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করার মাধ্যমে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার বায়ুবাহিত সংক্রমণ হয়ে থাকে। অতি ক্ষুদ্র এসব ড্রপলেট বড় পরিসরের জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে থাকতে পারে।

বায়ুবাহিত রোগের উদাহরণ হলো- যক্ষ্মা, ফ্লু এবং নিউমোনিয়া।

গবেষণায় দেখা গেছে, কৃত্রিমভাবে বাতাসে ছড়িয়ে দেয়া করোনাভাইরাস তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

তবে এই পরীক্ষাটি ল্যাবরেটরিতে করা হয়েছে, আর বাস্তব জীবনে পরিস্থিতি ল্যাবরেটরির চেয়ে ভিন্ন হতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।

তাই বাস্তব জীবনে ভাইরাস বেঁচে থাকার সময়ে তারতম্য হতে পারে। বাতাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোকে ‘সুপারস্প্রেডিং’ হিসেবে বলা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের মাউন্ট ভারমন শহরে একজন নারী ৪৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই নারী সংক্রমিতদের সঙ্গে একই গায়ক দলের অংশ হয়ে অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন।

চীনের গুয়াংজুতে জানুয়ারিতে একই ধরনের একটি ঘটনার কথা জানা যায়। ওই ঘটনায় একজন ভাইরাস বহনকারী ব্যক্তি রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে নয়জনকে সংক্রমিত করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।

বিজ্ঞানীদের মতে, ওই ঘটনায় সংক্রমিতদের একজন ভাইরাস বাহকের চেয়ে ছয় মিটার দূরে অবস্থান করছিলেন।