নারীর যেসব সাধারণ সমস্যা হতে পারে ক্যানসারের লক্ষণ

নারীর

ঋতুস্রাব হওয়া থেকে শুরু করে মেনোপজ পর্যন্ত একজন নারীর শরীরে অসংখ্য পরিবর্তন আসে। এর পাশাপাশি এমন কিছু শারীরিক সমস্যা আছে, যা নারীকে উদ্বিগ্ন করে বা তাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে বাঁধা সৃষ্টি করে।

শরীরের ঘন ঘন পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার অভ্যাস সব নারীর মধ্যেই আছে! আর এ কারণেই বেশ কিছু শারীরিক সমস্যাকে সাধারণ ভেবে অবহেলা করেন তারা। যা হতে পারে ক্যানসারে কারণ।

২০২০ সালের রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বে ৮.৮ মিলিয়ন নারী ক্যানসারে আক্রান্ত। তবুও এ বিষয়টি নিয়ে নারীরা তেমন মাথা ঘামান না। বেশিরভাগ নারীই ক্যানসারের সাধারণ উপসর্গগুলো এড়িয়ে যান।

এজন্য সবারই জানা উচিত ক্যানসারের কিছু সাধারণ লক্ষণ সম্পর্কে। তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয়ের মাধ্যমে মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।

নারীরা সাধারণত স্তন, কোলোরেক্টাল, ফুসফুস, সার্ভিকাল, এন্ডোমেট্রিয়াল ও ত্বকের ক্যানসারেই বেশি ভুগে থাকেন। এমনকি শরীরের অন্যান্য অংশেও ক্যানসারও হতে পারে তাদের।

তেমনই কয়েকটি ক্যানসারের সাধারণ লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নিন। যেগুলো দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।-

ত্বকের তিল-মোলও হতে পারে ক্যানসারের লক্ষণ

ছোট্ট একটি ব্রণ, বেগুনি ক্ষত, খসখসে স্থান, লাল রঙের প্যাচ যদি কয়েক দিনের মধ্যে নাপ সারে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান। কারণ এটি হতে পারে ত্বকের ক্যানসারের লক্ষণ।

এমনকি চোখের পাতায় একটি শক্ত বাম্প বা ত্বকের একটি মোমযুক্ত দাগ খুঁজে পান, তাও হতে পারে ক্যানসারের লক্ষণ। অনেকেই এসব ব্যথাহীন ত্বকের তিল বা মোল অবহেলা করেন। তবে দেরি করলেই ত্বকের ক্যনসার আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

দীর্ঘদিনের পিঠে ব্যথা

পিঠে ব্যথা সবারই কমবেশি হয়ে থাকে। দীর্ঘক্ষণ একস্থানে বসে থাকা কিংবা ভারি কোনো কিছু তোলা ইত্যদি কারণে ব্যথা হতে পারে পিঠে। তবে দীর্ঘদিন যদি কোনো কারণ ছাড়াই পিঠ ব্যথা থাকে, তাহলে তা হতে পারে দুশ্চিন্তার কারণ। কারণ এটিও হতে পারে ক্যানসারের লক্ষণ।

পিঠের কাছে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা উপেক্ষা করা উচিত নয়। এটি অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। যেখানে মেরুদণ্ডের টিউমার নীচের অংশে ভয়ানক ব্যথার সৃষ্টি করে।

অনিয়মিত মলত্যাগ

এটি আরেকটি লক্ষণ যা প্রায়শই কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটের সমস্যা ভেবে ভুল করেন অনেক নারীই। অনিয়মিত মলত্যাগ কোলোরেক্টাল ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ।

এর পাশাপাশি যদি মলের রঙে পরিবর্তন, অলসতা, ওজন হ্রাসের মতো লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্রস্রাবে সমস্যা

নারীদের মধ্যে ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। এ কারণেই নারীদের মধ্যে প্রস্রাবের ধরনে ঘন ঘন পরিবর্তন হয়। এজন্য মূত্রনালী পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখার জন্য সর্বদা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত তাদের।

তবে কিছুদিন পরপরই ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে কিডনি ক্যানসারের লক্ষণ। তাই এমন সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

স্তনে পরিবর্তন

অন্যান্য ক্যানসারের চেয়ে বিশ্বব্যাপী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বগলে হাড়ে সমস্যা, স্তন থেকে তরল নিঃসৃত হওয়া, স্তনের ভেতরে ব্যথা, কমলা রঙের ত্বক, স্তনবৃন্ত ও তার চারপাশে চুলকানি ইত্যাদি সমস্যা একেবারেই অবহেলা করবেন না।

কারণ এসবই হলো স্তন ক্যানসারের লক্ষণ। এজন্য নিয়মিত স্ব-পরীক্ষা করুন। তাহলে এসব উপসর্গ তাড়াতাড়ি শনাক্ত করতে পারবেন। চাইলে ম্যামোগ্রামও করতে পারেন। যার মাধ্যমে জানা যাবে স্তনের টিস্যুর পরিবর্তনগুলি জানাবে।

মাসিকের পরও রক্তপাত বা স্রাব

মাসিক সেরে যাওয়ার কিছুদিরে মধ্যে যদি রক্ত ​​​​বা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব দেখতে পান তা নিয়ে হেলাফেলা করবেন না। কারণ তা হতে পারে সার্ভিকাল, যোনি বা এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসারের লক্ষণ। যদিও মাসিক আগের স্রাব হয়ে থাকে। তবে অতিরিক্ত দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব দেখলে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

দীর্ঘদিন কাশি ভোগা

ক্রমাগত কাশি বেশ কয়েকটি রোগের সঙ্গে যুক্ত। এমনকি এটি ক্যানসারের লক্ষণও হতে পারে। তাই দীর্ঘদিন ধরে কাশি থাকলে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন। দীর্ঘস্থায়ী কাশি ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।

গিলতে সমস্যা

মুখ, গলা বা খাদ্যনালীর ক্যানসারের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো গিলতে অসুবিধা হওয়া। কিংবা গেলার সময় গলায় বড় পিণ্ড অনুভব করা।

অনেকেই এ সমস্যাকে অ্যাসিড রিফ্লাক্স বলে মনে করেন। যদি এ সমস্যা না কমে তাহলে আপনার খাদ্যের খাল, গলা এবং মুখ সঠিকভাবে পরীক্ষা করা উচিত।

কানে ব্যথা

কোন সংক্রমণ ছাড়াই যদি কানে ব্যথা হয়, তা হতে পারে জিহ্বা, টনসিল বা মুখের ক্যানসারের লক্ষণ। যদি চিকিৎসার মাধ্যমেও কানে ব্যথা না সারে তাহলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শরীরের ক্যানসার কোষ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা করুন।