বাগদাদির অনুচরকে আড়াই কোটি ডলার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

কুর্দি বাহিনীর গোয়েন্দা নয়, সিআইএ-র সদস্যও নয়, বাগদাদির গোপন আস্তানার খোঁজ দিতে মার্কিন বাহিনীকে সবচেয়ে বেশি যে সাহায্য করেছিল সে আইএসেরই এক সক্রিয় সদস্য, বাগদাদির পরম বিশ্বস্ত অনুচর।

সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের কমান্ডার মাজলুম আবদি বলেছেন, আইএস ডেরায় থেকেও সে সাহায্য করেছিল মার্কিন গোয়েন্দাদের। বাগদাদির ঘাঁটির নকশা জানিয়েছিল কুর্দি বাহিনীকে। তার নির্দেশ মতোই আইএস প্রধানকে হত্যার ছক সাজানো হয়েছিল। এসডিএফ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি আসলে বাগদাদির পরম বিশ্বস্ত অনুচরদের মধ্যে একজন।

বারিশার কম্পাউন্ডের আনাচকানাচ ছিল তার নখদর্পণে। চিনুক এবং ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারে ডেল্টা ফোর্স-সহ এলিট বাহিনী যখন আইএস ঘাঁটি ঘিরে ফেলেছিল, বাগদাদির এই অনুচরকে আশ্রয় দিয়েছিল মার্কিন বাহিনী। সেনার প্রতিঘাত এড়িয়ে আত্মরক্ষার জন্য বাগদাদি ঠিক কী পদক্ষেপ নিতে পারে, সেটাও সবিস্তারে জানিয়েছিল সে।

নিরাপত্তার জন্যই ওই চরের নাম সামনে আনেনি মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। জানানো হয়েছে, তার পরিবারকেও নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। বাগদাদিকে হত্যার অভিযানে আগাগোড়া মার্কিন বাহিনীর পাশে থাকার জন্য ওই ব্যক্তিকে আড়াই কোটি ডলার পুরস্কার দেওয়া হবে। বস্তুত, বাগদাদির মাথার দাম আড়াই কোটি ডলারই ধার্য করেছিল আমেরিকা।
বাগদাদির ওই অনুচরের পরিচয় সামনে না আনলেও, এসডিএফ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি আরবের গোঁড়া সুন্নি মুসলিম।

‘জিহাদ’-এর তালিম দিয়ে তাকে দলে টেনেছিল বাগদাদি। আইএসের অনেক নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী ছিল সে। একসময় বাগদাদির ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু তার ভাবনায় বদল আসে গত কয়েক বছরে। এসডিএফ জানিয়েছে, তারই পরিবারের একজনকে জিহাদের নামে হত্যা করে আইএস। নিজের সুরক্ষার জন্য বাগদাদির সঙ্গে থাকলেও, ভিতরে ভিতরে আইএসের বিরোধী হয়ে উঠেছিল সে। দিনের পর দিন একটু একটু করে বাগদাদির গোপন খবর কুর্দি বাহিনীর কাছে পৌঁছে দিতে শুরু করে।

পাঁচ মাস আগে থেকেই আইএস প্রধানকে হত্যার ছক সাজাচ্ছিল সিরিয়া ও ইরাকের কুর্দি বাহিনী। বারিশা চত্বরে বাগদাদির সম্ভাব্য আস্তানার খোঁজ মেলার পর থেকেই তার প্রতিটা গতিবিধির উপর সতর্ক নজর ছিল সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের। এসডিএফ ও গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রেখে চলেছিল এই ব্যক্তি।

এমনকি তাকে বিশেষ প্রশিক্ষণও দিয়েছিলেন এসডিএফের দক্ষ কমান্ডাররা। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির উপর বাগদাদির বিশ্বাস এতটাই প্রবল ছিল যে, তার সন্তান ও স্ত্রীদের দেখাশোনার দায়িত্বও ছিল তারই কাঁধে। বাগদাদির সন্তানদের কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, গোপনে কোন ডাক্তার ডেরায় ঢুকে আইএস প্রধান ও তার অনুচরদের চিকিৎসা করে যান, তার সবই গোয়েন্দাদের জানিয়েছিল ওই ব্যক্তি।

কুর্দি বাহিনীর অফিসার পোলাট ক্যান জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির তথ্যের উপর ভিত্তি করেই ডিএনএ মেলানোর জন্য বাগদাদির অন্তর্বাস চুরি করার পরিকল্পনা করেছিলেন কুর্দি গোয়েন্দারা। রাতের আঁধারে কুর্দি গোয়েন্দা বিভাগের দক্ষ দুই অফিসার যখন আইএসের ডেরায় ঢুকেছিলেন, তাঁদেরকেও সাহায্য করেছিল বাগদাদির ওই ঘনিষ্ঠ অনুচর।

ইরাকের গোয়েন্দা বিভাগ দাবি করেছে, বাগদাদিকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করেছে তার আরও এক ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ইসমাইল আল-ইথাউইয়ি। বাগদাদি হত্যার কিছুদিন আগে তুরস্কে গ্রেফতার করা হয়েছিল ইথেউইয়িকে। তার পর তাকে ইরাকের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেখানেই সে বাগদাদি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। বাগদাদির গতিবিধি এবং গোপন ডেরার খবর সেও দিয়েছিল গোয়েন্দাদের। ইথাউইয়ি এবং বাগদাদির ওই অনুচর দু’জনেই ইরাকি এবং কুর্দিশ সেনাদের জানিয়েছিল ঘন ঘন ডেরা বদলে ফেলত বাগদাদি। ধরা পড়া এড়াতে আনাজ-ভর্তি মিনিবাসে চড়ে রণকৌশল নিয়ে আলোচনা চালাত বাগদাদি।

এসএইচ-২০/৩১/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)