ভারতীয় সেনার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন তালেবান শীর্ষনেতা !

শীর্ষনেতা

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পতনের পর একটি পরিষদের মাধ্যমে দেশটি পরিচালিত হতে পারে। যার সার্বিক দায়িত্বে থাকবেন তালেবানের শীর্ষনেতা হিবাতুল্লাহ আখুনদজাদা। ইসলামি আন্দোলনটির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমন তথ্য দিয়েছেন। তালেবান নেতা মোল্লা বরাদর হতে পারেন নতুন শাসক।

তালেবান নেতাদের ভেতর এমন একজন রয়েছেন যিনি তার সামরিক প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছ থেকে। তার নাম শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাই। ১৯৮২ সালে ভারতের সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ট্রেনিং নেন। সেই ‘শেরু’ এখন প্রথম দশ তালেবান নেতার অন্যতম।

ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমি (আইএমএ) সুপ্রসিদ্ধ। ভারতীয় সেনা ছাড়াও প্রতিবেশী কোনো কোনো দেশের সেনা অফিসাররা এখানে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। ১৯৭১ সাল থেকে আফগান সেনা ক্যাডেটদের জন্য আইএমএ-এর দরজা খুলে যায়। ১৯৮২ সালের ব্যাচে আরও ৪৫ জন ক্যাডেটের সঙ্গে আইএমএ-তে এসেছিলেন ২০ বছরের শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাই। বন্ধুরা তাকে ‘শেরু’ বলে ডাকতেন। সেই শেরু এখন প্রথম ১০ জন তালেবান নেতার একজন।

আইএমএ ক্যাডেট মেজর জেনারেল ডিএ চতুর্বেদি বলেন, ‘শেরুর কাছে কখনো চরমপন্থি কোনো কথা শুনিনি। আমরা বন্ধু ছিলাম। মনে পড়ে গোঁফ নিয়ে খুব সচেতন ছিল শেরু। দেখার মতো গোঁফ। তবে উচ্চতা একটু কম ছিল। তা নিয়ে ক্ষ্যাপানোও হতো ওকে।’ তিনি বিশ্বাস করতেই পারছেন না যে তার বন্ধু শেরু এখন তালেবান নেতা।

জানা যায়, আইএমএ-তে ট্রেনিং নেওয়ার পরে মোহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাই লেফটেন্যান্ট হিসেবে সরাসরি যোগ দেন আফগানিস্তানের জাতীয় সেনা বাহিনীতে। সবেমাত্র তখন সোভিয়েত আফগানিস্তান ছেড়ে গেছে। একদশক সেখানে কাজ করার পর ১৯৯৬ সালে সেনাবাহিনী ছেড়ে মোহাম্মদ আব্বাস তালেবান শিবিরে যোগ দেন। এবং অচিরেই গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে ওঠেন।

স্পষ্ট ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন মোহাম্মদ আব্বাস। এবং সে কারণেই তালেবান শিবিরে তার জনপ্রিয়তা তৈরি হয়। ১৯৯৭ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে স্টানিকজাইকে তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। তালেবানের আফগানিস্তানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাতে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে, তা নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেছিলেন স্টানিকজাই।

এরপর ২০১২ সালে দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক দফতরেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। একাধিক আলোচনায় তিনি মূল আলোচক হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমান তালেবান নেতৃত্বে তার অবস্থান প্রথম দশজনের মধ্যে।

শেরুর বন্ধুরা মনে করেন, এই সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত হবে না ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রকের। মেজর জেনারেল চতুর্বেদির মতে, আইএমএ-এর স্মৃতি উসকে দিয়ে তালেবানের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনায় যেতে পারে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এদিকে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির দেশত্যাগ ও রাজধানী কাবুল অধিকার করে নেওয়ার পর আফগানিস্তানে চলমান যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে তালেবান।

তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ নায়েম আল-জাজিরাকে জানান, তারা অতিদ্রুত আফগানিস্তানের নতুন সরকার সম্পর্কে সবকিছু পরিষ্কার করে জানাবে।

মোহাম্মদ নায়েম বলেন, আল্লাহকে ধন্যবাদ, দেশে যুদ্ধের অবসান ঘটেছে। আমরা সবার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক চাই।

তিনি বলেন, আমরা যেখানে পৌঁছাতে চেয়েছিলাম সেখানে পৌঁছেছি। আমরা মানুষের জন্য স্বাধীনতা এনেছি। আমরা কারো ক্ষতি করতে চাই না এবং অন্য কাউকে আমাদের ভূমি ব্যবহার করে কারো ক্ষতি করতে দিতে চাই না।

এর আগে রোববার ১৫ আগস্ট বিকেলে কাতারের দোহায় অবস্থানরত তালেবান মুখপাত্র সুহায়েল শাহীন বলেন, ‘আফগানিস্তানে যারা এর আগে আগ্রাসীদের জন্য কাজ করেছে, সাহায্য করেছে বা এখন যারা দুর্নীতিবাজ কাবুল প্রশাসনের বিভিন্ন পদে আসীন রয়েছেন তাদের সবার জন্য ইসলামিক আমিরাত দরজা খোলা রেখেছে এবং ক্ষমা ঘোষণা করেছে। আমরা আরেকবার তাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, যেন তারা দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে এগিয়ে আসেন।’

এসএইচ-১৯/২১/২১ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)