পূর্বসূরিদের পরিণতির মুখোমুখি ইমরান খান!

পাকিস্তানের ৭৪ বছরের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রীই তার মেয়াদকাল পূর্ণ করে যেতে পারেননি। এদের মধ্যে কেউ বরখাস্ত হন, আবার কেউ ইস্তফা দিতে বাধ্য হন।

দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে বিরোধীরা। ঘোরতর এ বিপদের দিনে একে একে সহযোগীরা তাকে ছেড়ে যাচ্ছেন। হাত মেলাচ্ছেন সরকারের পদত্যাগ ও পুনর্নির্বাচনের দাবিতে গড়ে ওঠা বিরোধী জোট পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (পিডিএম) সঙ্গে।

সর্বশেষ ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) জোটসঙ্গী মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) যোগ দিয়েছে পিডিএমের অন্যতম দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সঙ্গে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে পার্লামেন্টে ভোট দিতে চুক্তিও করেছে দল দুটি।

অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগ তুলে গত সোমবার (২৮ মার্চ) পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিরোধী নেতারা। এরপর বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) বিকেল ৪টা পর্যন্ত পরিষদের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার আসাদ কায়সার।

পাকিস্তান সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করা হলে এর অন্তত তিন দিন পর এবং সাত দিনের মধ্যে ভোটাভুটির আয়োজন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একাধিক সূত্র বলছে, আগামী সোমবার অনাস্থা ভোট হতে পারে।

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মোট আসন ৩৪২টি। ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ১৭২টি ভোট প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত বিরোধী জোটে রয়েছেন ১৭৬ জন আইনপ্রণেতা। এর মধ্যে পিএমএল- এনের ৮৪ জন, পিপিপির ৫৬ জন, মুত্তাহিদা মজলিশ-ই-আমলের ১৫ জন, বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টির চারজন, আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির একজন, বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির চারজন, পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কিউয়ের একজন, জামহুরি ওয়াতান পার্টির একজন, এমকিউএম-পির সাতজন ও স্বতন্ত্র তিনজন রয়েছেন। অপরদিকে ইমরান খান সরকারের পক্ষে রয়েছেন ১৬৬ আইনপ্রণেতা।

এর বাইরে জাতীয় পরিষদে ইমরানের দলের বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতাও অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তাই ভোটের দিন দলীয় আইনপ্রণেতাদের জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে নিষেধ করেছেন ইমরান খান।

ইমরান খান ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। তার সরকারের মেয়াদ রয়েছে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত। এ অনাস্থা ভোট ইমরানের বিপক্ষে গেলেও পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হবে না।

আগামী আগস্ট পর্যন্ত সরকার চালিয়ে নিতে জাতীয় পরিষদের আইনপ্রণেতাদের ভোটে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য পরিষদের সব দলই প্রার্থী দিতে পারবে। নতুন প্রধানমন্ত্রী তার ক্ষমতাবলে যেকোনো সময় সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দিতে পারবেন। অপরদিকে ভোটে যদি কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান, সে ক্ষেত্রেও পরিষদ ভেঙে দিয়ে সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।

পাকিস্তানের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইমরান খান ক্ষমতায় থাকছেন কি না তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

ইমরান খানের আগে বেনজির ভুট্টো, নওয়াজ শরিফ, সওকত আজিজরা গদি হারিয়েছেন। পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত ১৮ জন প্রধানমন্ত্রী গদিতে বসেছেন। এদের মধ্যে ছিলেন কেয়ারটেকার সরকার। কিন্তু কেউ ৫ বছর টেকেননি। কাউকে সরতে হয়েছে সেনাবাহিনীর চাপে, কেউ সরেছেন আদালতের নির্দেশে। ইমরান খান হারলে তিনি বেনজির ভুট্টো, সওকত আজিজের দলে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

পাকিস্তানের যেসব প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ শেষ করতে পারেননি
লিয়াকত আলি খান

খাজা নাজিমুদ্দিন চৌধুরী

মোহাম্মদ আলী বগুড়া

মুহাম্মদ আলী

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী

ইব্রাহীম ইসমাঈল

ফিরোজ খান নুন

নুরুল আমিন

জুলফিকার আলী ভুট্টো

মুহাম্মদ খান জুনেজু

বেনজীর ভুট্টো

নওয়াজ শরীফ

জাফরুল্লাহ খান জামালি

সুজাত হোসাইন

শওকত আজিজ

সৈয়দ ইউসুফ রাজা গিলানী

পারভেজ আশরাফ

শহীদ খান আব্বাসী

এসএইচ-০৬/৩১/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)