সরকার গঠনের সুযোগ পাচ্ছেন নেতানিয়াহু

ইসরাইলের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী কট্টর ডানপন্থি নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার গঠনের সুযোগ পাচ্ছেন। তাকে খুব শিগগিরই সরকার গঠনের আহ্বান জানাবেন প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ। শুক্রবার এক ঘোষণায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি। বলেছেন, নেতানিয়াহুকে সরকার গঠনের আহ্বান জানাবেন তিনি।

এর মধ্যদিয়ে ষষ্ঠবারের জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন দুর্নীতির মামলায় বিচারাধীন নেতানিয়াহু। একই সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দেশের নেতৃত্ব দেয়ার রেকর্ড গড়বেন তিনি। সিএনএনের প্রতিবেদন মতে, শুক্রবার ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেটে সব দলের সঙ্গে বৈঠকের পর নেতানিয়াহুর নাম ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট হারজগ।

প্রেসিডেন্ট হারজগের অফিস থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আলোচনা ও পরামর্শের মধ্যদিয়ে নেসেটের ৬৪ জন এমপি লিকুদ পার্টির প্রধান নেতানিয়াহুকে সমর্থন দিয়েছেন। বিপরীতে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ মাত্র ২৮ এমপির সমর্থন পেয়েছেন। একই সংখ্যক তথা ২৮ জন এমপি কোনো দলকেই সমর্থন করেননি।

রোববার প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হারজগের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন নেতানিয়াহু। ওইদিনই তাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার গঠনের অনুমতি দেবেন প্রেসিডেন্ট। আইন অনুযায়ী, ওইদিনের পর থেকে সরকার গঠনে ২৮ দিন সময় পাবেন নেতানিয়াহু। এরপরও দরকার হলে আরও ১৪ দিন বাড়ানো হতে পারে।

ইসরাইলে গত সপ্তাহে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফের ক্ষমতায় ফিরছেন দুর্নীতির মামলায় বিচারাধীন কট্টর ডানপন্থি রাজনীতিক বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তার এ ফেরা ফিলিস্তিনি ও স্থানীয় আরবদের মধ্যে বেশ উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

কিন্তু নেতানিয়াহুর চেয়ে আরও বেশি উদ্বেগ দেখা দিয়েছে আরও এক রাজনীতিককে ঘিরে। যিনি এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এমনকি নেতানিয়াহুর সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পাচ্ছেন তিনি।

ইতামার বেন জিভির নামে ওই রাজনীতিককে নিয়ে শুধু ফিলিস্তিনি কিংবা আরবরাই নয়, উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ উদ্বেগের বিষয়টি উপলব্ধি করছেন খোদ ইসরাইল ও দেশটির সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।

যেমনটা ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের বক্তব্যেই প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেছেন, ইতামার বেন জিভিরের নির্বাচিত হওয়া নিয়ে ‘পুরো বিশ্বই উদ্বিগ্ন’। কিন্তু বেন জিভিরকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেন উদ্বিগ্ন? নিজের বক্তব্যেই সেটা স্পষ্ট করেছেন ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট।

বুধবার (৯ নভেম্বর) কট্টরপন্থি শাস পার্টির এক সভায় বেন জিভিরকে নিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের উদ্বেগ মূলত বেন জিভিরের উগ্রপন্থি অবস্থানের কারণে। হারজগ বলেন, আপনাদের একজন রাজনৈতিক অংশীদার রয়েছে যাকে নিয়ে সমগ্র বিশ্বই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি তার (বেন জিভির) সঙ্গেও কথা বলেছি।

আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, জিউইশ পাওয়ার পার্টি নামে একটি কট্টর ইহুদি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বেন জিভির। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভালো ফল করেছে বিতর্কিত দলটি।

তার পুরস্কার হিসেবে এখন নেতানিয়াহুর সরকারে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন বেন জিভির। কোন মন্ত্রণালয় চান, সম্প্রতি সেটাও জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চান। বিষয়টি ফিলিস্তিনিদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।

এদিকে বেন জিভিরের উগ্র অবস্থানের কারণে ‘কনজারভেটিভস মেসরশিয়ান জুডাইজম’ নামে কট্টরপন্থি ইহুদিদের একটি অংশ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এমনকি তাকে মন্ত্রী না করতে নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। গত মঙ্গলবার লিকুদ পার্টির প্রধান নেতানিয়াহুর উদ্দেশে লেখা এক খোলা চিঠিতে এই আহ্বান জানানো হয়।

এসএইচ-১০/১১/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)