পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের যুগে বাংলাদেশ

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করা হয়ছে। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোম্বর) বিকেল ৩টায় ইউরেনিয়াম হস্তান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। দুই দেশের সরকার প্রধানের ঐতিহাসিক কমিশনিংয়ের মধ্যদিয়ে পরমাণু যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ।

ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এছাড়া আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসিও যুক্ত ছিলেন।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেস্কি লিখাচেভ সশরীরে উপস্থিত থেকে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করেন। বাংলাদেশের পক্ষে ইউরেনিয়াম গ্রহণ করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।

ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠান ঘিরে সাজ সাজ রব ছিল পাবনাজুড়ে। রূপপুর প্রকল্প ও গ্রিন সিটি আবাসিক এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। প্রকল্প এলাকাজুড়ে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার জাতীয় পতাকার পাশাপাশি বিভিন্ন রঙের পতাকা শোভা পাচ্ছে।

এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ নিরাপত্তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান এসে পৌঁছায়। সেদিন ঈশ্বরদীর তিনটি মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। উৎসুক এলাকাবাসী সড়কের পাশের দোকানপাট, বাসাবাড়ির ছাদ ও দূর থেকে মহাসড়ক দিয়ে ইউরেনিয়ামবাহী গাড়িবহর দেখে উল্লাস প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে ইয়াফেস ওসমান বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এই প্রকল্প দেশের তুলনামূলকভাবে প্রান্তিক উত্তরাঞ্চলে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘পরমাণু বিদ্যুতের লেভেলাইজড খরচ অন্যান্য বিদ্যমান জীবাশ্ম জ্বালানি-চালিত বিদ্যুতের তুলনায় সস্তা হবে।’

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিনো গ্রসি তার বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশ আইএইএ নির্দেশিকা অনুসরণ করে পারমাণবিক প্ল্যান্ট বাস্তবায়ন করছে এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বজায় রেখেছে।
অ্যালেক্সি লিখাচেভ বলেন, অন্তত ২ হাজার বাংলাদেশি এখানে চাকরির সুযোগ পাবেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ১ হাজার বাংলাদেশী প্রকৌশলীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি এবং তাদের আরএনপিপি পরিচালনার জন্য বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, পরিবেশবান্ধব প্রকল্প পরিচালনার জন্য পরবর্তী প্রজন্মের প্রকৌশলী এবং প্রযুক্তিবিদদের প্রশিক্ষণের জন্য প্ল্যান্ট সাইটে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

অ্যালেক্সি লিখাচেভ নির্ধারিত সময়ের আগে এই বিশাল কাজটি সম্পন্ন করতে নিঃশর্ত সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। গত সাত বছরে ৩০ হাজার লোক এ প্রকল্পে চব্বিশ ঘন্টা ধরে কাজ করেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘একজন বিশ্বস্ত বন্ধু হিসাবে আমরা প্রযুক্তি এবং জ্বালানি সরবরাহের মাধ্যমে আরএনপিপির কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বাংলাদেশকে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, রাশিয়ান সফট লোন এবং রাশিয়ান স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি কর্পোরেশন রোসাটমের প্রযুক্তি সহায়তায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন প্রতিটি ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার মোট ২,৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রকল্পের দুটি ইউনিট নির্মাণ করছে।

রাশিয়ান ফেডারেশনের পারমাণবিক জ্বলানি সরঞ্জাম ও পরিষেবা এবং রোসাটমের অন্যতম অংশীদার সংস্থা অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট এ প্রকল্পের সাধারণ ঠিকাদার।

কর্তৃপক্ষ ২০২৫ সালের প্রথম দিকে এ প্লান্টের উৎপাদন শুরু করার পরিকল্পনা করছে।

কনস্ট্রাকশন অব রূপপুর এনপিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শওকত আকবর গণমাধ্যমকে জানান, ইতোমধ্যে ১ম ইউনিটের প্রায় ৯০ শতাংশ এবং ২য় ইউনিটের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

সাধারণ চুক্তি অনুযায়ী, রোসাটম প্রথম তিন বছরের অপারেশনের জন্য জ্বালানি সরবরাহ করবে।
শওকত আকবর গণমাধ্যমকে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বিক্রেতা দেশ বর্জ্য জ্বালানি ফেরত নেবে।

এআর-০২/০৫/১০ (জাতীয় ডেস্ক)