ঠোঁটের উপরে অবাঞ্ছিত লোম থাকছে?

ঠোঁটের উপরে

মহিলাদের ক্ষেত্রে ঠোঁট সব সবসময় একটা আকর্ষণের বিষয়। তাকে সুন্দর ভাবে রাখতে এবং সাজাতে যেকোনো মহিলারাই সবসময় সচেষ্ট হন। সঠিক যত্ন নেয়ার পাশাপাশি ভালোভাবে নানান প্রসাধনী ব্যাবহার করেন। কিন্ত অনেকের ঠোঁটের উপরেই চুল থাকে। কারুর ঘন, আবার কারুর পাতলা, যা যথেষ্ট বিব্রত হওয়ার কারন। যার জন্যে সপ্তাহে বারবার পার্লারে যাওয়ার দরকার পড়ে। অনেকেই অতিরিক্ত এই সমস্যার কারনে বাইরে সহজে বেরতে চান না। অনুষ্ঠান উৎসবে ঘরবন্দি হয়ে থাকতে চান।

অনেকেই এর হাত থেকে মুক্তি পেতে চান। কিন্তু কিভাবে পাবেন তার জানা পথ বলতে ঐ পার্লার। ফলে টাকার টাকা যায় কিন্তু সাময়িক মুক্তি মেলে। অনেকে ডাক্তারের কাছে অব্দি ছুটে যান এই সাধারন সমস্যার জন্যে। অনেকেই জানেন না যে এই সমস্যার কিছু ঘরোয়া সমাধান রয়েছে যে সমস্ত উপাদান হয়ত আমাদের রান্নাঘরেই পাওয়া যায়। সব পদ্ধতি গুলোই প্রাক্রিতিক এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত, ফলে নতুন কোন সমস্যা হওয়ার ভয়ও থাকেনা। আসুন আজকের আলোচনায় জেনে নেওয়া যাক সেরকমই কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি বা সমাধান।

১. কেন হয়

পুরুষদের থেকে মেয়েদের ঠোঁটের উপরের অংশে চুল গজানোর গতি অনেকটাই কম থাকে। যার কারনে পুরুষদের গোঁফ দাড়ি বেশি তাড়াতাড়ি গজায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হয় বেশিরভাগ সময় হরমোনের সমস্যার কারনে। হরমোন ঘটিত কারন এবং বংশগতভাবে কারুর এই সমস্যা থাকলে তবেই এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়াও মেয়েদের পলিসিস্তিক ওভারির সমস্যা থাকলেও এই ঠোঁটের উপরে চুল হওয়ার সমস্যা দেখা যেতে পারে।

২. চিনি এবং মধু

একটা পাত্রে তিন চামচ চিনি এবং এক চামচ মধু মেশান। পাত্রটা একটু গরম করুন যাতে চিনি পুরো মধুর সাথে মিশে যায় গলে গিয়ে। হালকা ঠান্ডা করে তাতে এক চামচ লেবুর রস দিন। মিশিয়ে ঠোঁটের উপরে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখুন। এরপর যেভাবে চুল উঠেছে ঠোঁটের উপরে, সেই নির্দেশ অনুযায়ী কোনো কাপড় দিয়ে মুছতে থাকুন। এটা বলা যায় ঘরোয়া ওয়াক্সিং পদ্ধতি যাতে লেবুর রস ব্লিচিং উপাদান হিসেবে কাজ করে।

৩. ডিম

একটা পাত্রে একটা ডিমের সাদা অংশ টা নিন শুধুমাত্র। তার মধ্যে আধা চামচ বেসন আর এক চামচ চিনি দিন। ভালো করে মিশ্রণটি মেশান। এরপর ওই মিশ্রণ ঠোঁটের উপরে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট মত রেখে দিন। এবার চুল ওঠার উল্টো দিকে এই মাস্ক আস্তে আস্তে তুলে দিন। ঠান্ডা জল দিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করে নিন এবং হালকা ক্রিম লাগিয়ে নিন। সপ্তাহে দুবার এই পদ্ধতি ব্যবহার করুন।

৪. হলুদ

একটা পাত্রে এক চামচ হলুদ আর একচামচ দুধ নিন। এর সাথে এক চামচ চালের গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে পারেন। এবার পুরো মিশ্রণ ভালো ভাবে মেশান। মেশানো হয়ে গেলে নিজের আঙ্গুল দিয়ে আস্তে আস্তে ঠোঁটের উপরের অংশে মেসেজ করার মত করে লাগিয়ে দিন এবং 5 থেকে 10 মিনিট রেখে দিন ওই ভাবেই। পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে নিজের আঙ্গুল হালকা করে জল দিয়ে ভিজিয়ে ওই মুখ শুকনো মিশ্রণ টাকে চুল ওঠার বিপরীত নির্দেশে তুলতে থাকুন। পুরো তোলা হয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে জায়গাটা ধুয়ে নিন। সপ্তাহে এই পদ্ধতি দুই থেকে তিনবার অনুসরণ করুন।

৫. শুধু চিনি

একটা পাত্রের এক চতুর্থাংশ জল দিয়ে ভরুন এবং তার মধ্যে দু কাপ চিনি মেশান। সাথে এক কাপ এর এক চতুর্থাংশ লেবুর রস ওই পাত্রে মেশান। এবার পুরো মিশ্রণটা কে গরম করুন এবং ততক্ষণ অব্দি গরম করুন যাতে করে ওর মিশ্রন ফুটতে না থাকে। হালকা ফোটা শুরু হয়ে গেলেই উষ্ণতা কমিয়ে মিশ্রণটিকে ঠান্ডা হতে দিন। এবারে কিভাবে ওই পেস্ট নিজের ঠোঁটের উপরের অংশে লাগান। চাইলে তুলো দিয়ে মিশ্রণ নিজের ঠোঁটের উপরে লাগাতে পারেন। 10 থেকে 15 মিনিট এই মিশ্রন রেখে দেয়ার পর একইভাবে তুলে ফেলুন। চাইলে বাড়তি বাকি মিশ্রণ বায়ু নিরোধক পাত্রে রেখে ব্যবহার করতে পারেন।

৬. আটা

একটা পাত্রে এক চামচ আদা এবং এক চতুর্থাংশ হলুদ নিয়ে অল্প দুধ বা জল মেশানো এবং একটা ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। উপরোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করুন মানে এ কিভাবে ঠোঁটের উপরে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে আস্তে আস্তে তুলে ফেলুন এবং ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন।

৭. পুদিনা চা

আগেই আলোচনায় বলা হয়েছে যে অনেক মহিলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হরমোনাল সমস্যার জন্য ঠোঁটের উপরে এই চুলের সমস্যা দেখা যায়। কারো শরীরে অতিরিক্ত এন্ড্রোজেন হরমোন ক্ষরণ হলে এই সমস্যা দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে পুদিনা চা খেলে উপকার পাওয়া যায় কারণ পুদিনা চা এন্ড্রোজেনের অতিরিক্ত নিঃসরণ বন্ধ করে বা নিয়ন্ত্রণ করে। চেষ্টা করুন এই পুদিনা চা খাওয়ার সময় এক চামচ মধু মিশিয়ে খেতে।

৮. পেঁপে

পেঁপের বহুবিধ গুন আমরা অনেকেই জানি। স্ক্রাব হিসেবেও পেঁপের নির্যাস অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। 1 থেকে 2 চামচ পেঁপে নির্যাস নিয়ে তার মধ্যে হাফ চামচ হলুদ মিশিয়ে নিতে হবে ভালো করে। মিশ্রন ঘন হলে ওই মিশ্রণ নিজের আঙ্গুল দিয়ে ঠোঁটের উপরের অংশে লাগিয়ে নিতে হবে এবং 5 থেকে 10 মিনিট রাখার পর তুলে ফেলতে হবে। এই মিশ্রণ সপ্তাহে একবার লাগালে যথেষ্ট।

আরএম-৩২/১২/০৫ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)