ছেলে ও মেয়ে কখনো ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’ হতে পারে না কেন?

ছেলে ও মেয়ে

একটা ছেলে ও একটা মেয়ে কি কখনো ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’ হতে পারে? উত্তরে হয়তো অনেকেই পাল্টা প্রশ্ন করে বসবেন, ‘কেন নয়?’ কিন্তু বাস্তবতা কি বলে! প্রেমহীন কাম তো আছে। কামহীন প্রেম বা ‘প্লেটোনিক লাভ’ এর অস্তিত্ব কি আসলেই আছে? মানবের অবচেতন মন কি প্রেমের আবেদন সংবরণ করে বিপরীত লিঙ্গ থেকে শুধু বিশুদ্ধ বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে তৃপ্ত থাকে? এরকম বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সম্প্রতি নতুন একটি গবেষনা চালিয়েছেন আমেরিকার একদল গবেষক। চলুন জেনে নিই, মানব সমাজে হাজার বছর ধরে চলা বিতর্কিত বিষয়টি নিয়ে কি বলছে নতুন এই গবেষণা।

গবেষণার জন্য গবেষক দলটি প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ৮৮ টি জুটি নির্বাচন করেন। প্রত্যেক জুটির ছেলে ও মেয়েটি নিজের পরস্পরের শুধুমাত্র ভাল বন্ধু বলে পরিচয় দেয়। পরবর্তীতে তাদের আলাদা করে ফেলা হয় কিছুদিনের জন্য। তারপর তাদের প্রত্যেকের কাছে গোপনে নিজের সঙ্গী বা সঙ্গীনীর ব্যাপারে তাদের সত্যিকারের আবেগ জানতে চাওয়া হয়।

দেখা যায়, ছেলেরা মনে মনে তাদের মেয়ে বন্ধুটির সাথে একটি রোম্যান্টিক সম্পর্কের আশা রাখে। এবং তাদের অধিকাংশই মনে করে, তাদের মেয়ে বন্ধুটিও তাদের সাথে রোম্যান্টিক সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী, কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছে না। এছাড়াও ছেলেরা তাদের সুন্দরী সিঙ্গেল মেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যেতে বেশি পছন্দ করে। ঘুরাঘুরির ছলে তারা সবসময়ই একটা রোম্যান্টিক সম্পর্ক স্থাপনের স্বপ্ন বুনে থাকে।

অপরদিকে মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তারা মনে করে যে তার ছেলে বন্ধুটি তার প্রতি তেমন আকর্ষণবোধ করে না। তাই তার ছেলে বন্ধুটি তাকে প্রপোজ করছে না। এ থেকে বোঝা যায় অনেকক্ষেত্রেই মেয়েরাও তাদের ভালো ছেলে বন্ধুর কাছ থেকে রোম্যান্টিক একটা সম্পর্ক আশা করে থাকে। কিন্তু তাদের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রেম গড়ে ওঠে না কেন? গবেষকরা বলছে, উভয়পক্ষের ধারণাগত ভিন্নতাই এই প্রেমের সম্পর্ক গড়ে না ওঠা্র মূল কারণ। ছেলেরা তাদের ভালো মেয়ে বন্ধুর আবেগ সম্পর্কে অতি উচ্চধারনা পোষণ করে থাকে। অপরদিকে মেয়েরা তাদের ভালো ছেলে বন্ধুটির আবেগ সম্পর্কে অতি নিম্নধারণা পোষণ করে।

গবেষণাটির পরবর্তী ধাপে গবেষকরা ২৪৯ বিবাহিত পুরুষ ও তাদের ভালো বান্ধবীদের(বিবাহিত) নিয়ে একইরকম গবেষনা করেন। এক্ষেত্রেও প্রায় একই ফলাফল পাওয়া যায়। বরং বিবাহিত পুরুষ ও নারীরা তাদের বিবাহ বহির্ভূত ভালো বন্ধুত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত খোলামেলা হয়। এই বন্ধুত্বগুলো প্রকৃত যৌনসম্পর্ক নির্ভর না হলেও চেতন বা অবচেতন মনে যৌনতৃপ্তির একটা ব্যাপার রয়েই যায়।

আসলে সমাজজীবনে চলতে গিয়ে আমরা বিপরীত লিঙ্গের অনেকের সাথেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলি। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্র, পরিবার, প্রতিবেশ সকল ক্ষেত্রেই শত রঙের সম্পর্ক মানুষকে জড়িয়ে নেয়, আগলে রাখে। আর ভালো সম্পর্ক মানেই তো বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বের রঙও তাই হাজার রকমের। ছেলে ও মেয়ের মধ্যে শুধুমাত্র ভালো বন্ধুত্ব হতে পারে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক হয়তো আজীবন থেকে যাবে। তবু যতটা ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তারই প্রচেষ্টা হিসেবে আমেরিকান গবেষকদল গবেষণাটি চালিয়েছিলেন।

আরএম-০৮/১৮/১০ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)