পাওনা টাকা আদায়ের কৌশল!

পাওনা টাকা

সানি একজন শান্তিপ্রিয় ভদ্রলোক। তার একটি পাইকারী মাল বিক্রির দোকান আছে। জনি সানির দোকানের একজন নিয়মিত ক্রেতা। নিয়মিত ক্রেতা সেই সুবাদে জনি প্রায় সময়ই সানির দোকানে বাকিতে পণ্য ক্রয় করে থাকে। এভাবেই এক সময় জনি প্রচুর পরিমাণে বাকিতে পণ্য ক্রয় করে যাচ্ছে। একসময় জনি সানির কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা বকেয়া পাওনা হয়ে যায়। বকেয়া টাকা উঠানোর জন্য সানি জনির পিছনে ঘুরতে ঘুরতে এখন ক্লান্ত। কিন্তু বকেয়া টাকা সে জনির কাছ থেকে তুলতে পারল না।

কিভাবে জনির কাছ থেকে এই পাঁচ লক্ষ টাকা তুলতে পারবে তা নিয়ে সানি ভিষণ চিন্তায় পরে গেল। একসময় সানি বুঝতে পারল সে এভাবে জনির কাছ থেকে টাকা তুলতে পারবে না। তাকে জনির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিভাবে জনির কাছ থেকে সে পাঁচ লক্ষ টাকা পাওনা আদায় করতে পারবে সে সম্পর্কে জানতে সে গেল একজন আইনজীবির কাছে।

ব্যবসা পরিচালনার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোককে বাকীতে মাল দিতে হয়। কিন্তু অনেক সময় অনেক অসাধু লোক উক্ত টাকা পরিশোধ করে না। এটা যে শুধুমাত্র উক্ত দেনাদারের আর্থিক অক্ষমতার কারণে হয়ে থাকে তা নয়। কিছু মানুষ আছে যারা পাওনা টাকা পরিশোধ না করে পাওনাদারকে পিছনে ফেলতে খুব আনন্দ পায়। আবার কিছু লোক আছে যারা স্থানীয়ভাবে খুব প্রভাবশালী। তারা মানুষকে হয়রাণী করতেও কেন যেন পছন্দ করে। এখন আমরা দেখি কিভাবে সানি জনির কাছ থেকে সেই পাঁচ লক্ষ টাকা আদায় করবে।

এজন্য সানিকে যে সমস্ত কাগজপত্র আনতে হবে তা হলো: সানি যে জনির কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা পায় সেই পাঁচ লক্ষ টাকা দাবীর সাপেক্ষে যে সমস্ত কাগজ পত্র বা যে সমস্ত প্রমাণ সানির কাছে আছে সে সব কিছু নিয়ে আসতে হবে। যেমন- রশিদ থাকতে পারে-ইত্যাদি যে সমস্ত ডকুমেন্টগুলো আছে সেগুলি নিয়ে আসতে হবে।

মূল মামলায় যাওয়ার আগে সানিকে প্রথমেই একজন আইনজীবির কাছে যেতে হবে। এবং সেখানে গিয়ে উক্ত আইনজীবির মাধ্যমে জনিকে লিগ্যাল নোটিশে সানির পাওনা পাঁচ লক্ষ টাকা পরিশোধের জন্য কয়েক দিন সময় দিতে হবে। এই নোটিশে জনিকে ৩০ দিনের আল্টিমেটাম দেওয়া হল।

উক্ত নোটিশে আরো লিখতে হবে উক্ত টাকা নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ না করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উক্ত লিগ্যাল নোটিশটি অবশ্যই রেজিস্ট্রারে ডাক যোগে জনির ঠিকানায় পাঠাতে হবে। লিগ্যাল নোটিশে দেওয়া উক্ত সময়ের মধ্যে যদি জনি সানির পওনা টাকা পরিশোধ করে তাহলেতো ভাল।

কিন্তু এই সময়ের মধ্যে যদি উক্ত টাকা পরিশোদ না করে সেক্ষেত্রে সানি জনির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য প্রমাণগুলো সাথে নিয়ে সানিকে যেতে হবে নিকটতস্থ কোর্টে। সেখানে গিয়ে একজন ভাল আইনজীবির মাধ্যমে সানি জনির বিরুদ্ধে একটি মানি সুটের মামলা করতে হবে।

উক্ত মামলা করার জন্য কি পরিমাণ কোট ফি দিতে হবে? পাওনা টাকার উপর ২.৫% হারে এডভেলোরেম ফি দিতে হবে। অর্থাৎ পাওনা টাকা যদি হয় ১ লক্ষ টাকা তবে উক্ত টাকার উপর কোট ফি হবে ২৫০০/- টাকা। আরো আনুসাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে মোট খরচ হতে পারে প্রতি লক্ষে ৩০০০/- টাকার মতো। তবে সরকার চাইলে এই হার বাড়াতে বা কমাতে পারে।

সমস্ত সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে এই আদালত যদি সন্তোষ্ট হয় তবে আদালত জনির বিরুদ্ধে ডিক্রি জারী করতে পারে। আদালত কি পরিমাণ টাকা জরিমানা করতে পারে? এখানে মূল বকেয়া টাকা প্রদানের জন্য ডিক্রি দিতে পারে অর্থাৎ যে পাঁচ লক্ষ টাকা সেই পাঁচ লক্ষ টাকা প্রদানের জন্য রায় দিতে পারে।

পাওনা টাকার উপর সুদ প্রদানের ডিক্রি প্রদান করতে পারে। অর্থাৎ এই যে পাঁচ লক্ষ টাকা দীর্ঘ দিন যাবৎ জনির কাছে বকেয়া পরে আছে সেই সময়ের উপর নিদিষ্ট হারে সুদ প্রদানের জন্য আদালত ডিক্রি দিতে পারে। এছাড়া মামলা পরিচালনার ব্যায় পরিশোধের জন্য দেনাদারের বিরুদ্ধে ডিক্রি দিতে পারে। অর্থাৎ এই মামলাটি পরিচালনার জন্য সানির যে পরিমাণ খরচ হয়েছে সেই খরচও সানিকে দেওয়ার জন্য আদেশ দিতে পারে আদালত।

একই সাথে আরো কিছু ক্ষতিপূরণ দিতে আদেশ দিতে পারে আদালত। একই সাথে এই সমস্ত টাকা যদি জনি পরিশোধ করতে না পারে সেক্ষেত্রে জনির বিরুদ্ধে দন্ড বা জেল হাজতের ব্যবস্থা করতে পারে আদালত। এভাবে সানি তার পাওনা টাকা জনির কাছ থেকে আদায় করতে পারে।

আরএম-২০/১৫/১২ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)